Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

৭২ ঘণ্টার বিয়ে, যৌনদাসী হয়েই প্রাণ বাঁচায় ওরা

নামমাত্র টাকায় বিকিয়ে যায় ওরা। কয়েক ঘণ্টার ফূর্তি— তারপরেই তালাক দিয়ে ওদের ছুঁড়ে ফেলা যায়। ইচ্ছে মতো ধর্ষণ করা যায়, কিংবা আবার অন্য কারও কাছে বিক্রি করে দেওয়া যায় যৌনদাসী হিসেবে।

সংবাদ সংস্থা
বেইরুট শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০২:৪৫
Share: Save:

নামমাত্র টাকায় বিকিয়ে যায় ওরা। কয়েক ঘণ্টার ফূর্তি— তারপরেই তালাক দিয়ে ওদের ছুঁড়ে ফেলা যায়। ইচ্ছে মতো ধর্ষণ করা যায়, কিংবা আবার অন্য কারও কাছে বিক্রি করে দেওয়া যায় যৌনদাসী হিসেবে।

ওরা সিরিয়া থেকে লেবাননে পালিয়ে আসা উদ্বাস্তু। কেউ সদ্য কৈশোরে পা রেখেছে, কেউ এখনও শিশু। বয়স ৬ থেকে ১৫-এর মধ্যে। ওই বয়সের আর পাঁচটা ছেলে যখন স্কুলে যায়, ওরা তখন খেত থেকে আলু তোলে, তামাক পাতা নিয়ে আসে, গ্যারাজে কাজ করে, ময়লা কুড়োয়! আর কারও নজরে পড়ে গেলে— প্রাণ বাঁচাতে যৌনদাসী হতে হয়।

ইসলামিক স্টেটের জঙ্গিদের হাত থেকে বাঁচতে দলে দলে সিরীয় উদ্বাস্তু পরিবার উত্তর সীমান্ত ঘেঁষা লেবাননের গ্রামে আর রাজধানী বেইরুটে আশ্রয় নিয়েছিল। কিন্তু পুঁজি ফুরোলেও দেশে ফিরে যাওয়ার কোনও উপায় নেই। আবার লেবাননে সংগঠিত কর্মক্ষেত্রে উদ্বাস্তুদের চাকরি করাও বেআইনি। অগত্যা, পেটের জ্বালায় শিশুদেরও কাজে পাঠাতে বাধ্য হয় বাবা-মায়েরা। একটি আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিশেষ সমীক্ষায় লেবাননের আশ্রয় শিবিরে সিরীয় মেয়েদের যে ভয়াবহ দুর্দশার ছবি তুলে ধরেছে, তাতেই শিউরে উঠছে তামাম দুনিয়া। টাকা আর নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে মেয়েকে বেচে দিচ্ছে বাবা-মায়েরাই!

তিন বছর আগে পরিবারের সঙ্গে সিরিয়া থেকে লেবাননে পালিয়ে এসেছিল ১২ বছরের হুরিয়া। কিন্তু রেহাই মিলল না সেখানেও। তাকে ক্রমাগতই উত্যক্ত করত স্থানীয় এক যুবক। মেয়েকে বাঁচানোর কোনও উপায় না পেয়ে, সেই ছেলের সঙ্গেই তার বিয়ে দিতে চায় হুরিয়ার বাবা। হুরিয়াকে উদ্ধার করে এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। তার বাবার দাবি, উদ্বাস্তুদের কোনও নিরাপত্তা নেই। তাই বাধ্য হয়েই বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন তিনি। অন্য একটি ঘটনায় জানা গেছে, পেটের জ্বালায় টাকার বিনিময়ে ১৪ বছরের মেয়ের বিয়ে দিয়েছিল বাবা-মা। বিয়ের ৭২ ঘণ্টা পরেই অবশ্য ‘শখ’ মিটে যায় তার স্বামীর।সিরীয় আর এক উদ্বাস্তু কিশোরীকে বন্দি করে রেখেছিল তার শ্বশুরবাড়ির লোকেরা। সাত জনের পরিবারের সব কাজ করতে হতো একা হাতে। না পারলেই বেধড়ক মার। আর অকথ্য গালিগালাজ। একটি ত্রাণ সংস্থার তথ্য বলছে, জর্ডনের উদ্বাস্তু শিবিরে এমন অনেকেরই খোঁজ পাওয়া গিয়েছে যাদের স্বামীরা টাকার জন্য বিক্রি করে দিয়েছেন স্ত্রীদের। খোঁজ মিলেছে এমন অনেক মায়েদের, যারা সন্তানের জন্য নিজেরাই দেহ-ব্যবসায় নামতে বাধ্য হয়েছেন।

সিরীয় উদ্বাস্তুদের মধ্যে শিশু শ্রমিকদের সমস্যাও দিনে দিনে বাড়ছে। নাবালিকা নিগ্রহ চরম আকার নিয়েছে। বাড়ছে পাচার, অল্পবয়স্ক মেয়েদের যৌনদাসী বানিয়ে রাখার ঘটনাও।

সিরীয় শরণার্থী কাছে নিরাপদ আশ্রয়টুকু এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। আর সেই প্রশ্নেই দ্বিধা বিভক্ত ইউরোপ। স্বাভাবিক ভাবে, উদ্বাস্তু শিশু-শ্রমিক ও নারী নির্যাতনের মতো সমস্যাগুলি চাপা পড়ে যাচ্ছে সেই কাজিয়ার আড়ালে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

MostReadStories
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE