Advertisement
০৩ মে ২০২৪

ফতোয়া বাংলাদেশে, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লাখো আলেম

ইসলামের নামে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসকে ‘হারাম’ বা ধর্মবিরোধী বলে ফতোয়া দিলেন বাংলাদেশের লক্ষাধিক মুফতি ও আলেম-ওলামা। ফতোয়ায় বলা হয়েছে, ইসলামের জেহাদ এবং জঙ্গিদের সন্ত্রাস কখনওই এক নয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঢাকা শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০১৬ ০৯:০৮
Share: Save:

ইসলামের নামে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসকে ‘হারাম’ বা ধর্মবিরোধী বলে ফতোয়া দিলেন বাংলাদেশের লক্ষাধিক মুফতি ও আলেম-ওলামা। ফতোয়ায় বলা হয়েছে, ইসলামের জেহাদ এবং জঙ্গিদের সন্ত্রাস কখনওই এক নয়। স্বর্গে যাওয়ার মানসে যারা সন্ত্রাস, হত্যাকাণ্ড বা আত্মঘাতী হামলায় সামিল হচ্ছেন, তাঁরা চূড়ান্ত ধর্মবিরোধী কাজ করছেন। এ সব হল জাহান্নম বা নরকের পথ। এই পথ ছেড়ে তাদের উচিত অবিলম্বে শান্তির পথে ফিরে আসা।

বাংলাদেশে কয়েক বছর ধরে একের পর এক চোরাগোপ্তা হামলা চালাচ্ছে জঙ্গিরা। প্রথমে লেখক, প্রকাশক, ব্লগারদের খুনের পরে এ বার ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা শুরু হয়েছে। বৌদ্ধ সন্ন্যাসী, হিন্দু পুরোহিত, খ্রিস্টান যাজকদের ওপর চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়ে কুপিয়ে খুন করা হচ্ছে। বুধবার ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশনের প্রধানকে খুনের হুমকি দিয়ে আইএস-এর নামে চিঠি পাঠানোর পর শুক্রবারও কুষ্ঠিয়ার অনুকূল আশ্রমের এক সেবাইতকে ফোন করে খুনের হুমকি দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশের গোয়েন্দারা বলছেন, আন্তর্জাতিক প্রচার পাওয়ার জন্য এই সব খুনের পরে আইএস-এর নামে দায় স্বীকার করা হলেও, আদতে জেএমবি, হিজবুত তাহরির ও আনসারুল বাংলা টিমের মতো নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনগুলি এই নাশকতা চালাচ্ছে। সরকারের দাবি জঙ্গিদের এই উপদ্রব আসলে সরকার-বিরোধী রাজনীতির অঙ্গ। পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-ও এই চক্রান্তের অংশ।

এই পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনা সরকার দ্বিমুখী পদক্ষেপ করেছেন। এক দিকে দেশজুড়ে ‘সাঁড়াশি অভিযান’ শুরু করেছে পুলিশ ও র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র‌্যাব)। গত কয়েক দিনে হাজার তিনেক দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করা হয়েছে, যার মধ্যে কয়েকশো জঙ্গি রয়েছে বলে পুলিশের দাবি।

এই প্রশাসনিক পদক্ষেপের পাশাপাশি সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে এগিয়ে আসার জন্য বাংলাদেশের আলেম-ওলামাদের কাছে আর্জি জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জঙ্গিদের খুন ও নাশকতার বিরুদ্ধে দেশের সব ওলামাদের কাছে প্রচার চালান ‘বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামা’র নেতারা। সেই প্রচারেই বিপুল সাড়া মিলেছে। কট্টরপন্থী হিসেবে পরিচিত হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব বাবুনগরী, ইসলামি শাসনতন্ত্র আন্দোলনের প্রধান মুফতি ফয়জুল করিম, খেলাফত আন্দোলন, হাটহাজারি, পটিয়া ও চরমোনাই মাদ্রাসার শার্ষ আলেমরাও এই ফতোয়ায় স্বাক্ষর করেছেন।

এই ফতোয়া কঠোরতম ভাষায় জঙ্গিবাদের নিন্দা করে বলেছে, অমুসলিমদের মন্দির, প্যাগোডা, গির্জা, উপাসনালয়ে হামলা ইসলামের দৃষ্টিতে অবৈধ। অমুসলিমদের হত্যা করাটাও ইসলামের দৃষ্টিতে কঠোর শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

শনিবার ঢাকায় এই ফতোয়া প্রকাশ করেন জমিয়তুল উলামার চেয়ারম্যান ও শোলাকিয়ার ঈদ জামাতের ইমাম মৌলানা ফরিদুদ্দিন মাসুদ বলেন, ‘‘ইসলাম শান্তির ধর্ম। ইসলাম সন্ত্রাস ও নিরীহ মানুষের হত্যাকে সমর্থন করে না। এ ধরনের কাজ যারা করে, তাদের শেষকৃত্য করাটাও হারাম বা অবৈধ কাজ।’’

মৌলানা মাসুদ জানিয়েছেন— দেশের ১ লক্ষ ১,৮৫০ জন মুসলিম ধর্মীয় নেতা, মাদ্রাসা শিক্ষক ও আলেমের স্বাক্ষর করা এই ফতোয়ার অনুলিপি দেশের সব মসজিদে রাখা হবে। সেই সঙ্গে ফতোয়াটি পাঠানো হচ্ছে মক্কার কাবা শরিফের ইমাম এবং রাষ্ট্রপুঞ্জ ও ওআইসি-র নেতাদের। তিনি বলেন, ‘‘চৈতন্যের বিভ্রম দূর করা দরকার সবার আগে, না হলে শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে জঙ্গিদের দমন করা সম্ভব নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bangladesh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE