বিদ্রোহী সেনাদের থামানোর চেষ্টায় তুরস্কের সাধারণ মানুষ। ছবি: এপি।
মধ্যরাতের অন্ধকারে গোলাগুলির শব্দে কেঁপে উঠল তুরস্ক। ছুটি কাটাতে যাওয়া প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতাচ্যূত করতে, সেনাপ্রধানকে বন্দি করে একের পর এক শহর দখল করতে শুরু করে দেয় সেনাবাহিনীর একাংশ। শেষ পর্যন্ত অবশ্য অভ্যুত্থানের চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ১৯৪ জনের। সেনা সূত্রে খবর, নিহতদের মধ্যে ১০৪ জনই অভ্যুত্থানকারী সেনা। বিদ্রোহী সেনাদের গুলিতে মারা গিয়েছেন ৪৭ জন সাধারণ মানুষও। মারা গিয়েছেন ৪১ জন পুলিশ অফিসার এবং দুই প্রেসিডেন্টপন্থী সেনা। তুরস্কের সেনাপ্রধানকে এখনও প্রকাশ্যে দেখা না গেলেও, তাঁকে আকিঞ্চি বেস থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
শুক্রবার গভীর রাতে তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারা, ইস্তানবুল-সহ বেশ কিছু শহরের দখল নিতে শুরু করে বিদ্রোহী সেনারা। তুরস্কের সংসদের বাইরেও সেনার ট্যাঙ্ক চলে আসে। শুরু হয় গোলাগুলি। প্রেসিডেন্ট এরদোগানের সমর্থনে জনতার এক অংশ পথে নেমে আসে। সেনার একাংশ প্রতিবাদী জনতাকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। বিদ্রোহীরা তুরস্কের জাতীয় টেলিভিশন, ইস্তানবুল এবং আঙ্কারার বিমানবন্দর দখল করে। সেনার পক্ষ থেকে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষা করে জন্য সামরিক অভ্যুত্থান করা হয়েছে বলে জানিয়েও দেওয়া হয়। কিন্তু এর পরে জানা যায়, সামরিক বাহিনীর একটি অংশই এই অভ্যুত্থানের সঙ্গে যুক্ত। সূত্রের খবর, সেনার নিচু তলার এক দল অফিসার এই অভ্যুত্থানের ডাক দিয়েছিলেন। তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী বিনারি ইলদিরিম এটাকে অভ্যুত্থান বলে মানতে নারাজ। তাঁর মতে এটা সেনা বিদ্রোহের বেশি কিছু নয়। ২,৮৩৯ জন বিদ্রোহী সেনাকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেনইলদিরিম। পরে ইস্তানবুলে প্রেসিডেন্ট এরদোগান জানান, বিদ্রোহী সেনাদের বিরুদ্ধে কঠোরতম পদক্ষেপ করা হবে।
তুরস্কে সেনা অভ্যুত্থান নতুন নয়। এর আগেও হয়েছে। কিন্তু শুক্রবারের বিদ্রোহের কারণ এখনও পরিষ্কার নয়। সেনার কর্তৃপক্ষের কোন অংশ এর সঙ্গে জড়িত তাও এখনও স্পষ্ট নয়। তবে এরদোগানের নীতি তুরস্কের মধ্যে অস্থিরতা তৈরি করছিল। এরদোগানের ‘জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি’ই তুরস্কে সর্বেসর্বা। ইসলামের ভিত্তিতে এই দলটি প্রতিষ্ঠা। কিন্তু তাঁর ক্ষমতা যত তীব্র হয়েছে ততই তুরস্কে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। এরদোগানের হাত ধরে ধর্মনিরপেক্ষ তুরস্ক ইসলামী রাষ্ট্রের দিকে ঝুঁকছে বলেও অভিযোগ উঠেছিল। তা ছাড়া প্রথম থেকেই তিনি সেনাকে তুরস্কের রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর বিপুল জনপ্রিয়তার কারণেই সেনারা তাঁর বিরুদ্ধে মাথা তুলতে পারেনি।
সিরিয়ায় লড়াই শুরু হলে পরোক্ষে ইসলামিক স্টেট (আইএস)কে মদত দেয় তুরস্ক। আইএস-এ নাম লেখাতে জেহাদিদের ঢল নামে। তাঁদের বড় অংশ তুরস্ক হয়ে সিরিয়ায় পৌঁছয়। কিন্তু অচিরেই আইএস-এর সমর্থন থেকে সরে আসতে হয় তুরস্ককে। এখন আইএস বিরোধী জোটের অংশ তুরস্ক। আইএসের উপরে আক্রমণ শানাতে সিরিয়ার বিমানঘাঁটি ব্যবহার করছে আমেরিকা। কিন্তু এর মধ্যেই কুর্দদের সঙ্গে পুরনো লড়াই শুরু করেছেন এরদোগান। কুর্দদের ঘাঁটিতে বিমান হানা চালানো হয়। প্রতিক্রিয়ায় ইস্তানবুল শহরে বেশ কিছু জায়গায় বোমার হামলা চালায় কুর্দরা।
অন্য দিকে, রাশিয়ার সঙ্গেও সম্পর্কের অবনতি হয়েছে তুরস্কের। সিরিয়ায় লড়াইয়ের শুরুতে বাসার আল-আসাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন এরদোগান। কিন্তু ইস্তানবুল বিমানবন্দরে হানার পরে আল-আসাদের সঙ্গে সমঝোতার পথ খোলার কথা জানিয়েছিল তুরস্ক। সব মিলিয়ে চূড়ান্ত অস্থিরতার যে পরিবেশ তৈরি হয়েছে তাতেই সেনার একাংশকে বিদ্রোহী করে তুলেছে।
তুরস্কের গুরুত্বপূর্ণ বসফোরাস সেতু আটকে দিয়েছে সেনারা।ছবি: রয়টার্স।
তুরস্কের এই অবস্থায় আমেরিকা-সহ পশ্চিমী বিশ্বের কপালে ভাঁজ পড়েছে। তুরস্ক ন্যাটোর সদস্য। বিশাল সেনাবাহিনী। তুরস্কের সেনার সামরিক হার্ডওয়্যারের বড় অংশ আমেরিকা থেকে আসে। বিপুল সেই সামরিক খরচ। আইএস বিরোধী লড়াই-এও তুরস্ক অন্যতম সঙ্গী। তুরস্কের সঙ্গে সিরিয়ার দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। তুরস্কে গোপনে আইএসের অসংখ্য সেল সক্রিয় রয়েছে। এই অবস্থায় তুরস্কের অস্থিরতা আইএস-কে আরও উজ্জ্বীবিত করবে বলে মনে করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
তুরস্কে বসবাসকারী ভারতীয়রা সুরক্ষিত রয়েছেন বলে বিদেশমন্ত্রক জানিয়েছে। ভারতীয়দের রাস্তায় না বেরোতে অনুরোধ করা হয়েছে।
আরও খবর...
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy