Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
International News

অপছন্দের ছেলেকে বিয়ে করায় মেয়েকে পুড়িয়ে খুন, মায়ের ফাঁসি

বাড়ির অমতে স্কুলের বন্ধুকে বিয়ে করেছিল জিনাত রফিক। মাত্র এক সপ্তাহ কাটতে না কাটতেই তাঁর নতুন সংসারে এসে হাজির জিনাতের মা। মেয়েকে ঘরে ফিরিয়ে নিয়ে ধুমধাম করে তাঁদের বিয়ের অনুষ্ঠান সারতে চান বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি।

জিনাত রফিক।

জিনাত রফিক।

সংবাদ সংস্থা
শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০১৭ ১২:৩৫
Share: Save:

বাড়ির অমতে স্কুলের বন্ধুকে বিয়ে করেছিল জিনাত রফিক। মাত্র এক সপ্তাহ কাটতে না কাটতেই তাঁর নতুন সংসারে এসে হাজির জিনাতের মা। মেয়েকে ঘরে ফিরিয়ে নিয়ে ধুমধাম করে তাঁদের বিয়ের অনুষ্ঠান সারতে চান বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি। সেই মতো মায়ের সঙ্গে বাপের বাড়িতে রওনা দেন ১৮ বছরের জিনাত। কিন্তু, বাড়ি ফিরেই বুঝতে পারেন তাঁর মায়ের আসল উদ্দেশ্য। দিন দুয়েক শারীরিক নিগ্রহের পর জিনাতকে বেঁধে জীবন্ত পুড়িয়ে মারেন তাঁর মা। এর পর নিজেই স্বীকার করেন, পরিবারের ‘সম্মান বাঁচাতেই’ নিজের মেয়েকে পুড়িয়ে মেরেছেন তিনি। গত সোমবার জিনাতের মা পরভীন বিবিকে ফাঁসির আদেশ শুনিয়েছে লাহৌরের এক আদালত। মায়ের এই কুকীর্তিতে সঙ্গ দেওয়ার জন্য জিনাতের ভাইকে আদালত যাবজ্জীবন কারাবাসের সাজা দিয়েছে।

আরও পড়ুন

১৩ বছরের ছাত্রের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক শিক্ষিকার!

জিনাতের এই পরিণতির কথা এখনও ভুলতে পারেন না তাঁর স্বামী হাসান খান। তিনি জানিয়েছেন, স্কুলে একই ক্লাসে পড়তেন তাঁরা। হাসান বলেন, “প্রথম দিকে আমাদের মধ্যে শুধুই বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিল। ধীরে ধীরে আমরা দু’জনেই বুঝতে পারি, একে অপরকে ভালবাসি।” স্থির করেন, দু’জনে বিয়ে করবেন। সেই মতো জিনাতের পরিবারকে সে কথা জানাতে অনুরোধ করেন তিনি। কিন্তু, হাসানের সঙ্গে বিয়ের কথা পাড়তেই তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠেন জিনাতের মা-বাবা। হাসানের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক মেনে নিতে একেবারেই রাজি ছিল না জিনাতের পরিবার। মা-বাবার বোঝানোর সঙ্গে সঙ্গে বেদম মারও জোটে জিনাতের। এর পর তাঁরা ঠিক করেন, পালিয়ে গিয়ে হলেও বিয়ে করবেন তাঁরা। সুযোগ বুঝে পালিয়েও যান হাসান-জিনাত। বিয়ে করে সংসারও পাতেন। এর সপ্তাহ খানেক পরে পরভীন বিবি পা রাখেন তাঁদের দরজায়। সে দিনটা এখনও মনে আছে হাসানের। পরভীন জানিয়েছিলেন, হাসানের সঙ্গে জিনাতের বিয়ে মেনে নিয়েছেন তাঁরা। পরিবারের যাতে মুখরক্ষা হয় তাই বড়সড় অনুষ্ঠানও করতে চান। হাসানের দাবি, বাপের বাড়ি যেতে নিমরাজি ছিলেন জিনাত। যাওয়ার আগে তাঁকে জিনাত বলেন, “আমি যদি আর ফিরে না আসি তবে ক্ষমা করে দিও।” সেই শেষ দেখা তাঁদের।

আদালতের পথে জিনাতের মা পরভীন বিবি। গত জুনের ছবি।

লাহৌরে জিনাতের পড়শিরা জানিয়েছেন, বাপের বাড়ি ফিরতেই আসল মূর্তি ধরে জিনাতের পরিবার। মা-বাবা-দাদা— সকলে মিলেই জিনাতের উপর দিনরাত অত্যাচার চালাতেন। সেই চিৎকার-চেঁচামেচিও তাঁদের কানে আসত। এর দিন দুই পরেই এক দিন জিনাতের বাড়ি থেকে কালো ধোঁয়া বেরতে দেখেন তাঁরা। ছুটে গেলে তাঁদের বাধা দেন জিনাতের বাড়ি লোকেরা। কিছু ক্ষণ পর বাড়ি থেকে বেরিয়ে চিৎকার করে পরভীন বলতে থাকেন, “আমাদের পরিবারে কালি মাখিয়েছে জিনাত। তাই আমি তাঁকে মেরেছি।” পুলিশের কাছেও মেয়েকে খুনের কথা স্বীকার করেন পরভীন। এর কয়েক ঘণ্টা পরেই জিনাতের দগ্ধ দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, বিছানার সঙ্গে বেঁধে জিনাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে তাঁকে পুড়িয়ে মারে তাঁর মা ও দাদা আনিস রফিক। ঘটনার খবর পেয়ে ছুটে আসেন জিনাতের স্বামী হাসান। হাসান বলেন, “আমি তখনও বিশ্বাস করতে পারছিলাম না, জিনাতকে ওঁরা পুড়িয়ে মেরেছে। জিনাতের দেহটা এমন ভাবে বিকৃত হয়ে গিয়েছিল যে ওঁকে চেনাই যাচ্ছিল না।”

আরও পড়ুন

মাঞ্জার ভেক ধরে আকাশে ফাঁদ পেতে চিনা ‘ছুরি’

জিনাতের লেখা কবিতা দেখাচ্ছেন স্বামী হাসান খান।

গত বছর জুনের এই ঘটনায় পাকিস্তানের এক নিদারুণ সামাজিক ছবি ফুটে উঠেছে। পরিবারের ‘সম্মান রক্ষা’য় সে দেশে বলি হচ্ছে অসংখ্য মেয়ে। পাকিস্তানের মানবাধিকার কমিশনের ২০১৫ সালের এক রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত পরিবারের ‘সম্মান রক্ষা’য় ১১০০ জন মহিলাকে খুন করা হয়েছে। নিজের পরিবারেই যৌন হিংসার শিকার ৯০০ মহিলা। এর মধ্যে ৮০০ মহিলাই আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন বা মারা গিয়েছেন। তবে সুখের কথা, ধীরে হলেও এই ছবিটা বদলাচ্ছে। গত অক্টোবরে পাকিস্তান পার্লামেন্টে এক ঐতিহাসিক আইন করেছে। পরিবারের ‘সম্মান রক্ষা’য় খুনের সাজা হিসেবে অপরাধীকে ২৫ বছরের কারাদণ্ডের আইন পাশ করেছে পাক পার্লামেন্ট। পাশাপাশি, এ ধরনের অপরাধে দোষীদের ক্ষমা করে দেওয়ার অধিকারও হারিয়েছে নির্যাতিতার পরিবার।

ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE