Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
International News

প্রায় মস্তিষ্কহীন জন্মানো এই শিশুটি গুনতেও শিখেছে, বিস্মিত চিকিত্সকরা

শুধু মাত্র বাবা-মা’র ভালবাসাই ছিল সম্বল। প্রত্যেকটা মুহূর্তে চারটে হাত আগলে রেখেছিল তাকে। হাজার প্রতিকূলতাতেও পৃথিবীর আলো দেখিয়েছিলেন তাঁরা। না হলে কে ভেবেছিল প্রায় মস্তিষ্কশূন্য অবস্থাতেই জন্ম হবে তার? ‘নো ব্রেন বয়’ হয়েও জীবন যুদ্ধে জিতবে সে?

সংবাদ সংস্থা
শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ১৬:৩০
Share: Save:

শুধু মাত্র বাবা-মা’র ভালবাসাই ছিল সম্বল। প্রত্যেকটা মুহূর্তে চারটে হাত আগলে রেখেছিল তাকে। হাজার প্রতিকূলতাতেও পৃথিবীর আলো দেখিয়েছিলেন তাঁরা। না হলে কে ভেবেছিল প্রায় মস্তিষ্কশূন্য অবস্থাতেই জন্ম হবে তার? ‘নো ব্রেন বয়’ হয়েও জীবন যুদ্ধে জিতবে সে?

একটা সময় আল্ট্রাসোনোগ্রাফি দেখে শিউরে উঠেছিলেন চিকিৎসকরা। এমন অস্বাভাবিক ভ্রূণ কখনও দেখেননি তাঁরা। পরামর্শ দিয়েছিলেন গর্ভপাতের। কিন্তু কঠিন সত্যিটা মেনে নিতে পারেননি নোহ ওয়ালের বাবা-মা। আর তাই মাত্র দুই শতাংশ মস্তিষ্ক নিয়েই পৃথিবীতে এসেছিল নোহ। দেখতে দেখতে কেটে গিয়েছে চার-চারটে বছর। এক দিন তার অস্বাভাবিকতা বিষ্মিত করেছিল চিকিৎসকদের। আর আজ নোহ’র ক্ষমতা দেখে রীতিমতো ভিরমি খাচ্ছেন তাঁরা।

ঘটনাটা ঠিক কী?

ইংল্যান্ডের কামব্রিয়ার ছোট্ট শহর অ্যাবেটাউন। এখানেই নোহকে নিয়ে থাকেন বাবা রব এবং মা শেলি। গর্ভাবস্থার তিন মাসে আল্ট্রাসোনোগ্রাফি হতেই দুঃসংবাদটা জানতে পারেন রব-শেলি। চিকিৎসকরা জানান, স্পাইনা বাইফিডা নামক জটিল রোগে আক্রান্ত গর্ভস্থ শিশু। ক্রোমোজমের এই বিরল রোগটির কারণে ভ্রূণের মস্তিষ্ক হাউড্রোসেফালাস রোগে আক্রান্ত হয়েছে। ফলে মস্তিষ্কের মধ্যে অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গিয়েছে ফ্লুইডের পরিমাণ।

আল্ট্রাসোনোগ্রাফির রিপোর্ট দেখে চমকে ওঠেন চিকিৎসকরাও। দেখা যায়, ভ্রূণের মস্তিষ্কের ৯৮ শতাংশই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। চিকিৎসকরা জানান, মাত্র দুই শতাংশ মস্তিষ্ক নিয়ে জন্ম হলেও জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই মারা যেতে পারে শিশুটি। বেঁচে থাকলেও তার শরীরে দেখা দেবে নানান রকম অস্বাভাবিকতা। তাই রব ও শেলিকে গর্ভপাতের পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।

কিন্তু ততদিনে চ্যালেঞ্জটা নিয়ে ফেলেছেন ওই দম্পতি। যে করেই হোক গর্ভস্থ সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখাবেন তাঁরা। যত কঠিনই হোক লড়াই করবেন। ফলে মস্তিষ্কের নামমাত্র অংশ নিয়েই ২০১২-র ৬ মার্চ জন্ম নেয় নোহ ওয়াল।

তার জন্মটা যেমন ছিল অবাক করা, বেড়ে ওঠাটাও তার থেকে কোনও অংশে কম নয়। মাত্র দুই শতাংশ ব্রেন নিয়েই তড়তড়িয়ে বেড়ে উঠেছে নোহ। এক থেকে দশ পর্যন্ত সংখ্যা গুণতে পারে বছর চারেকের এই খুদে। মায়ের হাত ধরে ধরে দিব্যি লিখতে পারে নিজের নামও। শুধু তাই নয়, বিস্মিত চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, ধীরে ধীরে নোহ’র করোটির মধ্যে বেড়ে উঠছে মস্তিষ্কের পরিমাণও। হয়তো ভবিষ্যতে আরও উন্নতি করবে নোহ।

ছেলের চেষ্টা দেখে মাঝে-মধ্যেই অবাক হয়ে যান শেলি। ‘‘নোহ নিজের নাম উচ্চারণ করতে পারে। সংখ্যা গুনতে পারে। লিখতে পারে। আমি কখনও ভাবিনি ও এত কিছু শিখতে পারবে’’— আনন্দে উজ্জ্বল গর্বিত মায়ের মুখ।

নিজের নাম লেখা শিখছে ‘বিষ্ময় বালক’বাবা রবের কথায়, ‘‘ও দুর্দান্ত। নোহকে দেখে রোজ আমরা অবাক হয়ে যাই।’’

এখনও হাঁটতে পারে না নোহ। হুইল চেয়ারই ভরসা। চিকিৎসকরা বলেছিলেন, হাঁটানোর চেষ্টায় অস্ত্রোপচার সফল না হলে মৃত্যুও হতে পারে। কিন্তু আরও এক বার চ্যালেঞ্জ নিলেন রব-শেলি। এ বারও প্রমাণ করলেন মনের জোরের কাছে অনেক বাধাই হার মানে। সম্প্রতি শরীরের নিম্নাঙ্গে জটিল অস্ত্রোপচার হয়েছে নোহ’র। সুস্থও আছে সে। তবে চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, নোহ আদৌ হাঁটা-চলা করতে পারবে কিনা তা বুঝতে আরও কিছুটা সময় লাগবে।

অস্ত্রোপচারের পর মায়ের সঙ্গে নোহ

কিন্তু ছেলের ভবিষ্যতে নিয়ে কী ভেবেছেন রব আর শেলি? তাঁদের ইচ্ছা, বড় হয়ে দমকল বাহিনীতে কাজ করবে নোহ। অথবা চিকিৎসক হয়ে অসুস্থ মানুষের সেবা করবে।

‘‘দেখিয়ে দিতে চাই কোনও কিছুই আসলে অসম্ভব নয়’’— জোরালো গলায় আবারও নতুন চ্যালেঞ্জ নিলেন রব-শেলি।

(ছবি: সংগৃহীত)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE