জিওয়ানি কোনও নৌঘাঁটি গড়ে তোলার কথা বেজিং ভাবছে না। জানালেন চিনা মুখপাত্র। —প্রতীকী ছবি / এএফপি।
পাকিস্তানের জিওয়ানিতে কোনও সামরিক ঘাঁটি তৈরি করছে না চিন। মঙ্গলবার জানাল চিনা বিদেশ মন্ত্রক।
পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে বালুচিস্তান উপকূলে ইতিমধ্যেই একটি বন্দর তৈরি করেছে চিন। বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের আওতায় কাশগড় থেকে গ্বাদর পর্যন্ত যে চিন-পাক অর্থনৈতিক করিডর তৈরি করা হয়েছে, তারই অঙ্গ ওই বন্দর। এ বার আরও পশ্চিমে, ইরান সীমান্তের খুব কাছে জিওয়ানি বন্দরও চিনের হাতে তুলে দিতে প্রস্তুত পাকিস্তান— এমন খবর সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে বেশ কয়েকটি দেশের সংবাদমাধ্যমে।
ইরানের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে অবস্থিত চাবাহারে ভারত-ইরান-আফগানিস্তানের যৌথ উদ্যোগে যে বন্দর গড়ে উঠেছে, সেখান থেকে বালুচিস্তান উপকূলের জিওয়ানির দূরত্ব মাত্র ৮৫ কিলোমিটার। মধ্য এশিয়ায় ভারতীয় উদ্যোগে তৈরি হওয়া বন্দরের আরও কাছে চিন-পাকিস্তানের যৌথ উদ্যোগে সামরিক ঘাঁটি তৈরি হওয়ার খবর বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। এই খবরকে তাই বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখছিল ভারত। কিন্তু চিনা বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র লু ক্যাং জানালেন, এমন কোনও বন্দর বা সামরিক ঘাঁটি তৈরি হচ্ছে না। মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে লু সংবাদমাধ্যমকে বললেন, ‘‘আপনারা যে (সামরিক ঘাঁটির) কথা বলছেন, সে বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই।’’
আরও পড়ুন: সীমান্ত লঙ্ঘন না করার প্রতিশ্রুতি দিল চিন, সরঞ্জাম ফেরাল ভারত
সন্ত্রাস ইস্যুতে সম্প্রতি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সুড় আরও চড়িয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নতুন বছরের প্রথম দিনেই তিনি টুইট করে পাকিস্তানকে ‘সন্ত্রাসবাদীদের আশ্রয়দাতা’ তকমা দিয়েছেন। ট্রাম্পের এই টুইটের পরেই ওয়াশিংটন ডিসি কঠোর পদক্ষেপ করেছে। সামরিক সহায়তা এবং সন্ত্রাস দমন খাতে পাকিস্তানকে যে আর্থিক অনুদান দীর্ঘ দিন ধরে দিয়ে আসছে আমেরিকা, তাতে ওয়াশিংটন রাশ টেনে দিয়েছে। আটকে দেওয়া হয়েছে প্রায় ১১৫ কোটি ডলারের অনুদান।
গ্বাদর বন্দর— চিন-পাক যৌথ উদ্যোগে বালুচিস্তান উপকূলে ইতিমধ্যেই গড়ে উঠেছে এই বন্দর। এই মুহূর্তে পাকিস্তানে অন্য কোনও বন্দর তৈরির প্রয়োজন নেই চিনের। বলছেন চিনা বিশেষজ্ঞরা। ছবি: রয়টার্স।
আমেরিকার এই অবস্থানের বিরোধিতা পাকিস্তান তো করেছেই। সরব হয়েছে চিনও। সন্ত্রাস রোখার দায় শুধু পাকিস্তানের নয়, এমন মন্তব্য করা হয়েছে চিনা বিদেশ মন্ত্রকের তরফে। চিনের সরকারি দৈনিক গ্লোবাল টাইমসের প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, পাকিস্তানকে আর্থিক সহযোগিতা করতেও প্রস্তুত চিন।
চিনের এই অবস্থানের প্রতিদান দিতে এবং আমেরিকাকে অস্বস্তিতে ফেলতে পাকিস্তান এ বার জিওয়ানি বন্দরে চিনকে জায়গা দিতে চলেছে বলে শোনা যাচ্ছিল গত কয়েক দিন ধরে। আফ্রিকার জিবুটিতে ইতিমধ্যেই সামরিক ঘাঁটি তৈরি করেছে চিন (যদিও জিবুটিকে সামরিক ঘাঁটি হিসেবে স্বীকার করে না বেজিং)। এ বার পাকিস্তানের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে যৌথ উদ্যোগে জিওয়ানিতে চিন তাদের দ্বিতীয় বৈদেশিক সামরিক ঘাঁটিটি তৈরি করবে বলে জোর জল্পনা শুরু হয়েছিল। কিন্তু চিনা বিদেশ মন্ত্রক সে জল্পনা এ দিন নস্যাৎ করল।
আরও পড়ুন: সীমান্তে বৈঠকে বসল দুই কোরিয়া, সতর্ক নজর রাখছে গোটা পৃথিবী
চিনা বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, এই মুহূর্তে জিওয়ানিতে সামরিক ঘাঁটি তৈরির সম্ভাবনা নেই। ফুদান ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর সাউথ এশিয়ান স্টাডিজের অধ্যাপক লিন মিনওয়াং গ্লোবাল টাইমসকে বলেছেন, ‘‘পাকিস্তানে যৌথ নৌ এবং বিমানঘাঁটি তৈরির সক্ষমতা বেজিং এবং ইসলামাবাদ উভয়েরই রয়েছে, কিন্তু এখন তা অপ্রয়োজনীয়।’’ গ্বাদরে যে হেতু একটি বন্দর চিন ইতিমধ্যেই তৈরি করেছে, সে হেতু জিওয়ানিতে নতুন করে বন্দর বা সামরিক ঘাঁটি তৈরি করার জরুরি নয় বলে চিনা বিশেষজ্ঞদের মত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy