Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

দুশ্চিন্তা বাড়াল কিমের ক্ষেপণাস্ত্র

বিশ্বের যে কোনও প্রান্তে পৌঁছতে সক্ষম আইসিবিএম অর্থাৎ আন্তর্মহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা তারা করে ফেলেছে বলে মঙ্গলবার দাবি করল উত্তর কোরিয়া।

পরীক্ষা চলছে আন্তর্মহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের। ছবি: এপি।

পরীক্ষা চলছে আন্তর্মহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের। ছবি: এপি।

সংবাদ সংস্থা
পিয়ংইয়ং শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০১৭ ০৩:৩০
Share: Save:

মাথাব্যথা তো ছিলই। সেটা আরও কয়েক গুণ বাড়িয়ে তুলল উত্তর কোরিয়া। এত দিন ধরে যা করব করব বলে হুমকি দিয়ে আসছিল শাসক কিম জং উনের দেশ, তা শেষ পর্যন্ত করেই ছাড়ল তারা। বিশ্বের যে কোনও প্রান্তে পৌঁছতে সক্ষম আইসিবিএম অর্থাৎ আন্তর্মহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা তারা করে ফেলেছে বলে মঙ্গলবার দাবি করল উত্তর কোরিয়া।

কিমের দেশে এই প্রথম এত বড় মাপের ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা হলো। সে দেশের সরকারি চ্যানেল কোরিয়া সেন্ট্রাল টেলিভিশনের দাবি, মঙ্গলবারের এই পরীক্ষা হয়েছে দেশের শাসক কিম জং উনের নির্দেশে। এই ক্ষেপণাস্ত্র পাড়ি দিয়েছে দু’হাজার আটশো দু’কিলোমিটার। কোনও উত্তর কোরীয় ক্ষেপণাস্ত্র এই প্রথম এত উচ্চতায় পৌঁছল। পিয়ংইয়ংয়ের দাবি যদি ঠিক হয়, তা হলে আমেরিকার মূল ভূখণ্ডে সরাসরি আঘাত করাও এখন উত্তর কোরিয়ার কাছে অলীক কোনও ভাবনা নয়। সেটা মোটেই সুখের খবর নয় ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য।

এই ক্ষেপণাস্ত্র কত দূর পাড়ি দিয়েছে তা উত্তর কোরিয়া ঘোষণা করার আগেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শাসক কিম জং উনের উদ্দেশে টুইটারে লেখেন, ‘‘উত্তর কোরিয়া আবার একটা ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করল। এই লোকটার কি জীবনে আর কিছু করার নেই!’’

আরও পড়ুন:‘দোস্ত’ মোদী, হিন্দি বুলি নেতানিয়াহুর

কূটনীতিকরা বলছেন, ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার জন্য উত্তর কোরিয়া যে সময়টা বেছেছে, তা তাৎপর্যপূর্ণ। ৪ জুলাই আমেরিকার স্বাধীনতা দিবস। ছুটির দিনে ট্রাম্পকে চমকে দেওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করেনি তারা। তা ছাড়া, এ সপ্তাহেই জার্মানিতে জি২০ শীর্ষ সম্মেলন। তার আগে উত্তর কোরিয়ার বাড়বাড়ন্ত নিয়ে রবিবার ট্রাম্পের সঙ্গে কথা হয়েছে চিনা প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং এবং জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের। এই পরিস্থিতিতে যতটা রাজনৈতিক ফায়দা তোলা যায়, তার চেষ্টাই করেছে উত্তর কোরিয়া। এ বার এই আইসিবিএমের সাহায্যে পরমাণু অস্ত্র ছোড়ার প্রযুক্তি রপ্ত করা স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। অনেকের দাবি, হয়তো এত দিনে তা করেও ফেলেছে উত্তর কোরিয়া। সেই সম্ভাবনা মাথায় রেখেই ট্রাম্প আর একটি টুইটে লেখেন, ‘‘মনে হয় না, দক্ষিণ কোরিয়া আর জাপান এটা বেশি দিন সহ্য করবে। সম্ভবত চিনও এ বার চাপ বাড়াবে উত্তর কোরিয়ার উপরে আর এই খ্যাপামো চির দিনের জন্য শেষ করে দেবে।’’

কিন্তু এই আন্তর্মহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে উত্তর কোরিয়ার দাবি কত দূর সত্য? ইউয়ান গ্রাহাম নামে সিডনির এক বিশেষজ্ঞ বলছেন, ‘‘যদি ওরা দাবি করে থাকে আইবিএম যে কোনও জায়গায় ছোড়া যাবে, তবে সেই দাবি প্রযুক্তির আতসকাচে ফেলে যাচাই করা উচিত। ওরা এখন যা করতে পারে, তার চেয়েও বেশি দাবি করছে।’’ মার্কিন প্রশান্ত মহাসাগরীয় কম্যান্ডের দাবি, ‘হোয়াসং-১৪’ নামে ক্ষেপণাস্ত্রটিকে তারা ৩৭ মিনিট নজরদারি করেছে। কোরীয় দ্বীপপুঞ্জের পূর্বে জলসীমার মধ্যে দিয়ে জাপানের ‘এক্সক্লুসিভ ইকনমিক জোন’–এ গিয়ে পড়েছে। উত্তর পিয়ংগান প্রদেশের প্যানঘিওন থেকে এটি ছোড়া হয়।

আমেরিকা উদ্বিগ্ন হয়ে প়ড়লেও রাশিয়া অবশ্য পিয়ংইয়ংয়ের দাবি নিয়ে সন্দিহান। আগামী শুক্রবার জি২০ সম্মেলনে ট্রাম্পের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হওয়ার কথা রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের। আজ পিয়ংইয়ংয়ের দাবি নিয়ে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রক এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ওই ক্ষেপণাস্ত্র মাঝারি পাল্লার। ৫৩৫ কিলোমিটারের বেশি পাড়ি দিতে পারেনি। চিনা প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং আবার এখন রাশিয়াতেই। দেখা করবেন পুতিনের সঙ্গে। দুই নেতা কোনও মন্তব্য না করলেও চিনের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র গেং শুয়াং বলছেন, ‘‘কোরীয় দ্বীপপুঞ্জে পরিস্থিতি জটিল এবং স্পর্শকাতর। আশা করব, সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ সংযত থেকে এমন পদক্ষেপ করবে, যাতে আর উত্তেজনা না ছ়ড়ায়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE