Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

মধ্যস্থতায় নেমে পাক সেনাই ফের মধ্যমণি দেশের

পাকিস্তানে রাজনৈতিক টানাপড়েনের মধ্যে আরও এক বার গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল সে দেশের সেনাবাহিনীর ভূমিকা। আপাত ভাবে সরকার ও বিরোধীদের মধ্যে সংঘাত মেটাতে মধ্যস্থতা শুরু করেছে পাক সেনা। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের সঙ্গে কথা বলেছেন সেনাপ্রধান রহিল শরিফ। তিনি আজ বৈঠকে বসেন ইমরান খান ও তাহির-উল-কাদরির সঙ্গে।

পাক সেনাপ্রধান রহিল শরিফ।

পাক সেনাপ্রধান রহিল শরিফ।

জয়ন্ত ঘোষাল
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০১৪ ০২:৫৯
Share: Save:

পাকিস্তানে রাজনৈতিক টানাপড়েনের মধ্যে আরও এক বার গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল সে দেশের সেনাবাহিনীর ভূমিকা। আপাত ভাবে সরকার ও বিরোধীদের মধ্যে সংঘাত মেটাতে মধ্যস্থতা শুরু করেছে পাক সেনা। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের সঙ্গে কথা বলেছেন সেনাপ্রধান রহিল শরিফ। তিনি আজ বৈঠকে বসেন ইমরান খান ও তাহির-উল-কাদরির সঙ্গে। এ দিনের এই বৈঠকে চলতি সঙ্কট কাটানোর কোনও রফা সূত্র বেরিয়ে আসার কিছুটা সম্ভাবনা তৈরি হলেও জামাত-সহ অন্যান্য বিরোধী দল এতে অখুশি। রাজনৈতিক অচলাবস্থা কাটাতে শেষ পর্যন্ত সেই সেনাবাহিনীরই দ্বারস্থ হওয়ার নিন্দা করেছে তারা।

পাকিস্তানে গণতন্ত্র বারবার ব্যাহত হয়েছে সামরিক অভ্যুত্থান ও সেনা শাসনের কারণে। এ বারও তেমন কিছু ঘটতে চলেছে কি না, সে দিকে সতর্ক নজর রাখছে দিল্লি। নওয়াজের সঙ্গে সুসম্পর্কের বার্তা দিয়েই যাত্রা শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সীমান্তে সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘনের প্রশ্নে বৈঠক বাতিল করে কড়া বার্তা দিলেও ভারতও চায় না, আচমকা কোনও পালাবদলের জেরে পরিস্থিতি বিগড়ে যাক কিংবা সীমান্তে কোনও যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হোক। পাকিস্তানে এই মুহূর্তে নতুন করে অশান্তি তৈরি হোক, চাইছে না আমেরিকাও।

এই পরিস্থিতিতে পাক সেনাও অবশ্য দাবি করেছে, সেনা অভ্যুত্থান তাদের লক্ষ্য নয়। রাজনৈতিক সঙ্কট কাটাতে মধ্যস্থতায় নেমেছে তারা। বিশেষ সূত্রে খবর, এই মুহূর্তে অভ্যুত্থানের সম্ভাবনা নেই একেবারেই। প্রধানমন্ত্রী নওয়াজকে সেনাপ্রধান স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, আপাতত সামরিক অভ্যুত্থান চাইছেন না তাঁরাই।

তবে কারা সেনাপ্রধানকে মধ্যস্থ হতে বলেছে, তা নিয়ে আজ দিনভর চলে অন্য এক নাটক। নওয়াজ আজ পার্লামেন্টে বলেন, “বিবাদ মেটাতে সেনাকে আমরা মোটেই ডাকিনি।” একই দাবি ইমরান-কাদরিদেরও। বিকেলের দিকে সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল অসীম বাজওয়া টুইট করেন, “মধ্যস্থতা করতে সেনাকে ডেকেছে সরকারই।” ডাকটা যে তরফ থেকেই আসুক, ঘটনা হল, পাকিস্তানে এই অস্থিরতার সময়ে মধ্যমণি কিন্তু সেই সেনাই। সেনাবাহিনী সে দেশে চিরকালই ক্ষমতাশালী। তিন-তিন বার সেনা অভ্যুত্থান হয়েছে। শেষ বার, ১৯৯৯ সালে নওয়াজকে সরিয়েই ক্ষমতা হাতে নেন সেনাপ্রধান পারভেজ মুশারফ। ফের তার পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা তৈরি হলেও, এ বার সেনা-সূত্রই বলছে, অভ্যুত্থান তারা চাইছে না। তবে মধ্যস্থের ভূমিকায় নেমে এক ঢিলে দু’টো কাজ সারল পাক সেনা। এক, রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগে নিজেদের ফের প্রাসঙ্গিক করে তোলা। দুই, কৌশলে নওয়াজের সরকারে নিজেদের ছায়াটা আরও বড় করে নেওয়া। সন্দেহ করা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর নওয়াজ স্বাধীন ভাবে দেশ চালানোর চেষ্টা করছিলেন। সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর বিশেষ ভূমিকা ছিল না। কিন্তু নিজেদের দাবি-দাওয়া মেটাতে অভ্যুত্থানের ডাক দিলে অনেককেই পাশে পেত না সেনা। তারা তাই সরকারকে বিপাকে ফেলার সুযোগ খুঁজছিল। ইমরান-কাদরিদের বিক্ষোভে ইন্ধন জুগিয়েছে সেনাই।

যে নির্বাচনের বিপুল জয়ে ভর করে নওয়াজ সেনাবাহিনীর সঙ্গে কিছুটা দূরত্ব রেখে চালতে চাইছিলেন, ইমরান ও অন্য বিরোধীরা কিন্তু সেটা নিয়েই প্রশ্ন তুলছেন। পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ চেয়ারম্যান ইমরানের অভিযোগ, ভোটে ব্যাপক রিগিং করেই ক্ষমতা দখল করেছেন শরিফ। দাবি, ইস্তফা দিতে হবে তাঁকে। দু’সপ্তাহ আগে লাহৌর থেকে বিশাল মিছিল করে ইসলামাবাদে যান ইমরান। তাঁদের পাশে ছিলেন পাকিস্তান আওয়ামি তেহরিক (পিএটি) নেতা তাহির-উল-কাদরিও। অস্থিরতা কাটাতে প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ সর্বদলীয় কমিটি গড়েছিলেন। খান ও কাদরির সঙ্গে পাঁচ বার বৈঠক করেও সেই কমিটি সমস্যা মেটাতে পারেনি। টানাপড়েনের মধ্যে এক বারই কেবল কিছুটা নতি স্বীকার করতে হয় সরকারকে। গত ৭ জুন লাহৌরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে মৃত্যু হয়েছিল ১৪ জন পিএটি সদস্যের। এর জন্য প্রধানমন্ত্রীকেই দায়ী করে তাঁর ইস্তফা দাবি করেন কাদরিও। তাঁর আরও দাবি ছিল, শরিফের বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু করতে হবে। লাহৌর হাইকোর্টের নির্দেশে কাল শরিফ ও তাঁর ভাই-সহ ২১ জনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয়েছে। বিক্ষুব্ধদের অন্যতম দাবি সরকার মেনে নেওয়ায় ও ইমরানরা সেনাপ্রধানের মধ্যস্থতায় রাজি হওয়ায় রফাসূত্র বেরোনোর সম্ভাবনা বাড়ল।

তবে পড়শি দেশের এই অস্থিরতার পাশাপাশি সীমান্ত সংঘর্ষ বেড়ে যাওয়া নিয়েও ভাবতে হচ্ছে দিল্লিকে। সম্প্রতি পাক হাই কমিশনার দিল্লিতে কাশ্মীরি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে কথা বলায় ভারত-পাক বিদেশসচিব বৈঠক বাতিল করে দিয়েছে সরকার। জম্মু-কাশ্মীরে ভোট সামনে। এ অবস্থায় প্রতিরক্ষামন্ত্রী অরুণ জেটলি থেকে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন প্রত্যেকেই। আজ বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলেন প্রধানমন্ত্রীও। হিংসা ও সন্ত্রাস বন্ধ না হলে আলোচনা এগোতে পারে না বলে জানিয়ে দেন তিনি। তবে পাকিস্তানকে কড়া বার্তা দিলেও মোদী আজ জাপানযাত্রার আগে দু’দেশের মধ্যে সুস্থ সম্পর্কের বার্তাই দিয়েছেন। সেপ্টেম্বরে আমেরিকায় নওয়াজের সঙ্গে দেখা হবে মোদীর। সে সময় তাঁরা আলাদা করে বৈঠকেও বসতে পারেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE