পারমাণবিক অস্ত্রে পাকিস্তানের উত্তরোত্তর ক্ষমতাশালী হয়ে ওঠার বিষয়টিকে মোটেই সুনজরে দেখছে না আমেরিকা। এর ফলে, অদূর ভবিষ্যতে ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের পরমাণু যুদ্ধের সম্ভাবনা অনেকটা বেড়ে গিয়েছে বলে মনে করছে মার্কিন কংগ্রেস।
মার্কিন কংগ্রেসের সাম্প্রতিক রিপোর্টে এ ব্যাপারে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। মার্কিন ‘কংগ্রেসনাল রিসার্চ সার্ভিস’ (সিআরএস)-এর গত ১৪ জুনের ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘‘এই মুহূর্তে পাকিস্তানের হাতে কম করে ১২০ থেকে ১৩০টি পরমাণু অস্ত্রবাহী ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। এর চেয়ে অনেক বেশি অস্ত্রও থাকতে পারে ইসলামাবাদের হাতে। তবে সেই সব নথিপত্র পাওয়া যায়নি। ফলে, আরও যদি কোনও পারমাণবিক অস্ত্র ইসলামাবাদের হাতে থেকে থাকে, তা হলে সেগুলো কতটা ক্ষমতাশালী বা তাদের অভিমুখ কোন দিকে, তা জানা যায়নি। তবে এটুকু জানা গিয়েছে, পাকিস্তানের হাতে থাকা পারমাণবিক অস্ত্রের বেশির ভাগই তাক করা রয়েছে ভারতের দিকে। যাতে যে কোনও মুহূর্তে ভারতের ওপর আঘাত হানা যায়। বা, ভারতের যে কোনও সামরিক অভিযানকে মোকাবিলা করা যায়। অকেজো করে দেওয়া যায়। আবার পাকিস্তানের দিক থেকে বিপদ আসতে পারে ভেবে ভারতও তার পারমাণবিক অস্ত্র বাড়িয়ে চলেছে।’’
উন্নততর উপাদান ও পরমাণু প্রযুক্তি-প্রকৌশল পাওয়ার সুযোগ- সুবিধার জন্য ভারত বহু দিন ধরেই ‘নিউক্লিয়ার সাপ্লায়ার্স গ্রুপ’ (এনএসজি)-এর সদস্য হওয়ার চেষ্টা করছে। এনএসজি-র সদস্য সংখ্যা এখন ৪৮। কিন্তু, চিনের মতো কয়েকটি দেশের আপত্তিতে তা হয়ে ওঠেনি। এ বার ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ওয়াশিংটন সফরের সময় আশ্বাস দেওয়া হয়, ভারতকে এনএসজি-র সদস্য করার জন্য আমেরিকা সব রকম চেষ্টা করবে। তার ‘বন্ধু দেশ’গুলো যাতে এ ব্যাপারে আপত্তি না জানায়, আমেরিকা সেটাও দেখবে।
এর পরেই এনএসজি-তে ভারতকে রুখতে ‘দাবার বোড়ে’র মতো পাকিস্তানকে এগিয়ে দেয় চিন। বেজিং যুক্তি দেখায়, ভারতকে এনএসজি-র সদস্য করা হলে পাকিস্তানকেও করা উচিত। না হলে এই উপমহাদেশে শক্তির ভারসাম্য নষ্ট হবে। শান্তি বিঘ্নিত হবে। ওই দু’টি দেশ সম্পর্কে এনএসজি-র দৃষ্টিভঙ্গি নিরপেক্ষ হবে না।
কূটনীতিকদের মতে, চিন যে যুক্তিতে পাকিস্তানের হয়ে তদ্বির শুরু করেছিল, মার্কিন কংগ্রেসের সদ্য প্রকাশিত ওই রিপোর্ট তাকেই অসাড় করে দিল।
আরও পড়ুন- মুসলিমদের মঙ্গল গ্রহে পাঠানো উচিত, কুমন্তব্যে ফের বিতর্কে ট্রাম্প
কেন? কী ভাবে চিনের যুক্তি ‘অসাড়’ হয়ে গেল?
মার্কিন কংগ্রেসের দুই প্রভাবশালী সদস্য পল কের ও মেরি বেথ নিকিতিনের লেখা ৩০ পাতার ওই রিপোর্ট- ‘পাকিস্তানস্ নিউক্লিয়ার ওয়েপন্স্’-এ বলা হয়েছে, ‘‘যে ভাবে পাকিস্তান উত্তরোত্তর তার পারমাণবিক অস্ত্রের মজুত বাড়াচ্ছে, নতুন নতুন ধরনের পারমাণবিক অস্ত্র বানাচ্ছে বা ধাপে ধাপে তাদের আরও উন্নত করে তুলছে, তাতে আন্তর্জাতিক অস্ত্র পর্যবেক্ষকরা যথেষ্টই উদ্বিগ্ন। তাঁরা মনে করছেন, এর ফলে ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের পরমাণু যুদ্ধের সম্ভাবনা যথেষ্টই বেড়ে গিয়েছে। আবার পাকিস্তানের দিক থেকে বিপদ আসতে পারে ভেবে ভারতও তার পারমাণবিক অস্ত্র বাড়িয়ে চলেছে।’’
কূটনীতিকদের বক্তব্য, পাকিস্তানকে এনএসজি-তে নেওয়া হলে যে তা ‘বোঝার ওপর শাকের আঁটি’ হয়ে উঠবে, মার্কিন কংগ্রেসের ওই রিপোর্টে সেটাই বুঝিয়ে দেওয়া হল, প্রকারান্তরে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy