Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

উৎপাত থেকে রেহাই পেতে হ্যামলিনের বাঁশিওয়ালাকে খুঁজছে প্যারিস

প্যারিসের অন্যতম ঐতিহাসিক ও অভিজাত এলাকা ‘ল্য মারে’। এ-দিক ও-দিক তাকালেই দেখা মিলবে নানা ঐতিহাসিক স্থাপত্য আর পুরনো ঘরবাড়ির। হেমন্তের দিনে কান পাতলে শোনা যায় পাতার মর্মর। আর এ সবের মধ্যেই ‘মধ্যরাতে ফুটপাথ বদল’ করে তারা। ছায়ার মধ্যে থেকে জেগে উঠে আশপাশের ঘর বাড়ির দেওয়াল জুড়ে ছোঁয়াছুঁয়ি খেলা শুরু হয়।

সংবাদ সংস্থা
প্যারিস শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:০২
Share: Save:

প্যারিসের অন্যতম ঐতিহাসিক ও অভিজাত এলাকা ‘ল্য মারে’। এ-দিক ও-দিক তাকালেই দেখা মিলবে নানা ঐতিহাসিক স্থাপত্য আর পুরনো ঘরবাড়ির। হেমন্তের দিনে কান পাতলে শোনা যায় পাতার মর্মর। আর এ সবের মধ্যেই ‘মধ্যরাতে ফুটপাথ বদল’ করে তারা। ছায়ার মধ্যে থেকে জেগে উঠে আশপাশের ঘর বাড়ির দেওয়াল জুড়ে ছোঁয়াছুঁয়ি খেলা শুরু হয়। রাস্তার সমস্ত আবর্জনার স্তূপ জুড়ে শুরু হয় তাদের রাতভর অভিযান।

ভুত বা অশরীরী নয়। আপাতত শহরের রাস্তাঘাট শাসন করে বেড়াচ্ছে লক্ষাধিক মূষিক। আর এই সব চারপেয়ের উৎপাত থেকে রেহাই পেতে আপাতত হ্যামলিনের বাঁশিওয়ালাকেই খুঁজে বেড়াচ্ছে গোটা শহর। প্রশাসনের কাছে প্রতিদিন জমা পড়ছে কয়েকশো অভিযোগ— যেমন ভাবেই হোক না কেন, বন্ধ করা হোক এদের উৎপাত। ইঁদুর নিধনযজ্ঞে নেমে বেশ কয়েক বার নানাবিধ কর্মসূচিও নেওয়া হয়েছে। তবে দীর্ঘমেয়াদি ফল মেলেনি।

প্যারিসে ইঁদুর-দর্শন নতুন কিছু নয়। তবে আগে তাদের দেখা মিলত ঝোপঝাড়ে কিংবা অন্ধকার নর্দমার আশপাশে। এখন বংশবৃদ্ধি করতে করতে তাদের সংখ্যাটা যে জায়গায় পৌঁছেছে, তাতে অবস্থাটা রীতিমতো ভয়ের। আপাতত যেখানেই তাকানো যায়, দেখা মিলছে ইঁদুরবাহিনীর। ফুটপাথ থেকে শুরু করে গাড়ির পার্কিং এলাকা, সর্বত্র। এমনকী মেট্রোর প্ল্যাটফর্মেও। যাত্রীদের ফেলে যাওয়া খাবারের প্যাকেট কিংবা ফুটপাথের বাসিন্দাদের নষ্ট হওয়া খাবার, তাতেই জমছে মূষিকবাহিনীর মহাভোজ।

এক বাসিন্দা জানালেন, দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে প্যারিসে রয়েছেন তিনি। তবে এত ইঁদুর এই এলাকায় জীবনেও দেখেননি। আরও এক বাসিন্দা অ্যান লর বললেন, ‘‘দিনের আলোতেও রাস্তাঘাটে ঘুরে বেড়াচ্ছে ইঁদুরের দল। ওরা আসে, ওরা যায়। ঘরে ঢুকে ক্ষতি করছে। খাবার-দাবার থেকে জামাকাপড়, দরকারি কাগজপত্র থেকে অন্যান্য জিনিস, কিছুই বাঁচানো যাচ্ছে না ওদের হাত থেকে। সব চেয়ে ক্ষতি হচ্ছে ফসলের।’’

প্যারিসের একটি পরিবেশ সংস্থার প্রধান জর্জ সালিনস জানাচ্ছেন, ইঁদুর মারার জন্য বেশ কিছু কর্মসূচি ইতিমধ্যেই নেওয়া হয়েছে। তবে ইঁদুর মারার বিষ ব্যবহারে ইউরোপীয় বিধিনিষেধের জেরে কিছুটা হলেও মুশকিলে পড়েছেন তাঁরা। বিষাক্ত খাবার দিয়ে ইঁদুর মারা নিষিদ্ধ। তাই আপাতত খাবারের জোগান বন্ধ করে দিয়েই ইঁদুরদের ভাতে মারতে চাইছে প্রশাসন। ইঁদুর নিধন প্রকল্পের জেরে গত নভেম্বরে প্যারিসের ন’টি পার্ক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ওই সংস্থার এক মুখপাত্রের দাবি, আইফেল টাওয়ার এলাকা ও শহরের সব থেকে বিখ্যাত রাস্তা শঁসেলিজেতে বেড়াতে এসে অনেক পর্যটকই শখ করে ইঁদুরদের খাবারদাবার দেন। আর তাতেই এত বাড় বেড়েছে মূষিক বাহিনীর!

ইঁদুর নিয়ে বহু দিন ধরে গবেষণা করেছেন পিয়ের ফালগায়রাক। জানালেন, ইঁদুরদের বংশবৃদ্ধি করতে তিনটে জিনিস প্রয়োজন। জল, খাদ্য ও বাসস্থান। যে কোনও একটার কমতি হলেই তাদের বংশবৃদ্ধি করা মুশকিল হয়ে দাঁড়ায়। তবে তাঁর কথায়, সবার আগে মানুষের মন থেকে ইঁদুরের ভয়টাকে কাটাতে হবে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তারা ভদ্র, ভীতু ও শান্তিপূর্ণ হয় বলে দাবি পিয়েরের।

কিন্তু পিয়েরের মতো গবেষকদের কথায় কান দিতে নারাজ সাধারণ প্যারিসবাসী। ‘মিকি মাউস’, ‘টম অ্যান্ড জেরি’ বা ‘রাতাতুই’, এই সব ছবিতে ইঁদুরদের যতই মিষ্টি আর ভাল‘মানুষ’ দেখানো হোক না কেন, ইঁদুর নিয়ে কোনও ভাল কথাই শুনতে নারাজ প্যারিসবাসী। জার্মান রূপকথায়, বাঁশির সুরে ভুলিয়ে টেনে নিয়ে গিয়ে শহরকে ইঁদুরমুক্ত করেছিলেন হ্যামলিনের বাঁশিওয়ালা। সে রকমই কোনও এক বাঁশিওয়ালার পথ চেয়ে এখন বসে রয়েছেন ল্য মারের বাসিন্দারা ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

flutist of Hamline
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE