চিনে বেড়াতে গিয়ে সিভ।
‘ফেক ইট, বিফোর ইউ মেক ইট’...
অর্থাত্, কোনও স্বপ্নপূরণ হওয়ার আগেই বিশ্বাস করো যে, তুমি তা করে ফেলেছো। বিল গেটসের এই অসাধারণ উক্তি বিশ্বাস করে সাফল্যের মুখ দেখেছেন এমন মানুষের সংখ্যা কিন্তু নেহাত্ কম নয়।
তবে, কেনিয়ার এক নিম্নবিত্ত কৃষকের মেয়ে সিভ গাট সে কথা শুনেছিলেন কিনা জানা নেই। ঘুরতে ভালাবাসা সিভের স্বপ্ন ছিল চিনে ঘুরতে যাবেন। কিন্তু, সামর্থ ছিল না। তবুও কী ভাবে স্বপ্ন পূরণ হয়েছিল তাঁর?
২০১৬ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি কানাডিয়ান এয়ারওয়েজের বিমানের সামনে দাঁড়ানো নিজের ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন সিভ। ক্যাপশন ছিল, দেশ ছেড়ে আমি চিনের উদ্দেশে রওনা দিয়েছি। তাঁর চিন ভ্রমণ বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে এর পরের তিন দিন রোজ একটি করে ছবি আপলোড করতে থাকেন সিভ।
১ মার্চের ছবিটি ছিল চিনের মাউন্ট হুয়া-র চ্যাং কং ক্লিফ রোডে দাঁড়িয়ে রয়েছেন সিভ। পরের ছবিটি ছিল, চিনের ঐতিহাসিক প্রাচীরের সামনে। ক্যাপশন, ‘সব কিছু উপভোগ করছি।’ আর শেষ ছবিতে লেখা ছিল, ‘সফরের শেষ দিন’। যেখানে সিভ দাঁড়িয়ে রয়েছেন টেম্পল অব হেভেনের সামনে।
চিনের প্রাচীরের সামনে সিভের ফোটোশপ করা সেই ছবি।
সিভ ছবি পোস্ট করার সঙ্গে সঙ্গেই ১ হাজারের উপর শেয়ার হয়ে যায় ফেসবুকে। কী এমন ছিল সেই ছবিতে? লোকে তো আকছারই বেড়াতে যাওয়ার ছবি পোস্ট করেই থাকেন। দুর্বল ভাবে ফোটোশপ ছবি থেকে স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে যে আদপেও চিনে ঘুরতে যাননি সিভ। স্বপ্নের দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নিজের ফোটোশপ করা ছবি শুধু মনের সুপ্ত ইচ্ছাই প্রকাশ করছিলেন তিনি।
আরও পড়ুন: বিতর্কে হাঁপিয়ে উঠেছিলেন দিদি, অকপট ডায়ানার ভাই
সিভের ছবি দিয়ে নিমেষে ছড়িয়ে পড়তে থাকে হাস্যকর মিম। কখনও টাইমস স্কোয়্যার, কখনও প্যারিস, কখনও মিশরের পিরামিডের সামনে সিভের ছবি ফোটোশপ করে চলতে তাকে ট্রোলিং।
সিভ যখন অপমানজনক মন্তব্যের মুখে পড়ে জেরবার সেই সময় তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন ম্যারিকে ওয়াইটাহ নামের এক ফেসবুক ইউজার। তাঁর বক্তব্য ছিল, সিভকে এ ভাবে অপমান করার অধিকার কারও নেই। ও কাউকে আঘাত করেনি, কারও দৃষ্টি আকর্ষণেরও চেষ্টা করেনি। ও শুধু স্বপ্নের প্রতিফলন তৈরি করেছে এই ছবিগুলোতে। যেই স্বপ্ন খুবই প্রাসঙ্গিক।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া একটি মেম।
এই কমেন্টের পর থেকেই একটু একটু করে বদলাতে শুরু করে সিভের গল্পটা। অবশেষে গত ৪ মার্চ কেনিয়ার এক ব্যবসায়ী স্যাম গিচুরুর কাছে থেকে স্বপ্নপূরণের আশ্বাসের সেই পোস্টটি আসে।
সকলকে অবাক করে গিচুরু লেখেন, ‘‘এই মহিলাকে আমি শ্রদ্ধা করি। আজ থেকে ১০ বছর আগে আমি নিজের ছবি দিয়ে একটি পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন তৈরি করেছিলাম। আমি নিজেকে কোন পোশাকে দেখতে চাই, কোন বাড়িতে দেখতে চাই, কোন গাড়ি কিনতে চাই সেই স্বপ্নের প্রতিফলন ছিল ফোটোশপ করা ছবিগুলোতে। সেই সময় যদি ফেসবুক থাকত, তা হলে হয়তো আমি ছবিগুলো আপলো়ড করতাম, আর সবাই এ ভাবেই হাসাহাসি করত। যারা ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখে তারা ঘুম থেকে উঠেই সেই স্বপ্ন ভুলে যায়। আর কেউ কেউ সেই স্বপ্নকে বাস্তব রূপ দিতে ফোটোশপ করেন।’’
আরও পড়ুন: বাক্সবন্দি এই মডেলকেই পর্ন সাইটে বেচে দেওয়া হচ্ছিল!
শুধু পোস্ট করেই থেমে থাকেননি গিচুরু। সবাই যখন সিভকে নিয়ে হাসিঠাট্টা করতে ব্যস্ত, গিচুরু অর্থ জোগা়ড় করতে শুরু করে দেন। কেনিয়া থেকে চিনে যেতে বিমান টিকিটের দাম পড়বে ৮৫০ মার্কিন ডলার। মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরই গিচুরু পোস্ট দেখে নিজের চোখতে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না সিভ। গিচুরু লেখেন, যারা স্বপ্ন দেখে তাদের আমার ভাল লাগে কারণ আমি নিজেও স্বপ্ন দেখি। আর আমার এখন স্বপ্ন সিভের হংকং-এর টিকিট। সিভকে ট্যাগ করে তিনি লেখেন, পাসপোর্ট তৈরি রাখো। তোমার স্বপ্ন সত্যি হতে চলেছে।
চিনের প্রাচীরের সামনে সিভ। আসল ছবি।
সিভের সঙ্গে দেখা করেন গিচুরু। তাঁকে আশ্বাস দেন অর্থ জোগা়ড় করছেন। গ্রীষ্মকালেই চিন যাওয়ার স্বপ্ন সত্যি হবে তাঁর। সিভের চিন যাওয়ার টিকিট, ফোর স্টার হোটেলে থাকার ব্যবস্থা সব কিছু ঠিক করে দেন। চিনে কেনিয়ার দূতাবাসের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগের ব্যবস্থাও করে দেন।
গেটসের উক্তিকে মিলিয়ে দিয়ে এর পর সিভের স্বপ্নপূরণ ছিল শুধুই সময়ের অপেক্ষা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy