চারদিকে তখন বিকেলের ব্যস্ততা। প্রাচীন কালের নিদর্শন বিখ্যাত সব প্যাগোডা ও মন্দির দেখতে বহু পর্যটক গিয়েছিলেন মায়ানমারের প্রাচীন শহর বাগান-এ। এমন সময় আচমকাই দুলে উঠল গোটা শহর। কিছু বুঝে ওঠার আগেই গুঁড়িয়ে যেতে থাকল ছবির মতো সুন্দর সাজানো গোছানো শহরটি। মুহূর্তের মধ্যে ধুলোয় ঢেকে গেল চারপাশ।
আজ বিকেল ৫টা ৩৪ মিনিটে ভয়াবহ ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল মায়ানমার। শুধু মায়ানমারেই নয়, ভারত, বাংলাদেশ এবং তাইল্যান্ডের মতো পড়শি দেশগুলিতেও জোরালো কম্পন অনুভূত হয়েছে। কয়েক মিনিট ধরে স্থায়ী হয়েছিল ওই কম্পন। ফলে নেপাল ভূকম্পের সেই ভয়াবহ স্মৃতিই ফিরিয়ে আনে আজকের এই
ভূমিকম্প। গত বছর এপ্রিলেই তছনছ হয়ে গিয়েছে নেপাল। ধ্বংস হয়েছে ঐতিহাসিক সব নিদর্শন।
মার্কিন ভূতাত্ত্বিক সর্বেক্ষণ সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, রিখটার স্কেলে কম্পনের মাত্রা ছিল ৬.৮। আর ভূকম্পের উৎসস্থল মধ্য মায়ানমারের মেইকতিলা শহরের ১৪৫ কিলোমিটার পশ্চিমে।
মায়ানমার প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, মৃত্যু হয়েছে তিন জনের। বেশ কয়েক জন জখমও হয়েছেন। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মান্দালয়ের দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত চওক শহর। ক্ষতি হয়েছে মায়ানমারের বাগান শহরের অতিপ্রাচীন ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলিরও। এই বাগান শহর বিখ্যাত প্রাচীন প্যাগোডা ও মন্দিরের জন্য। ১০ থেকে ১৪ শতকে তৈরি ওই সব ঐতিহাসিক নিদর্শন দেখতে ভিড় জমান বহু পর্যটক। সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু ছবি পোস্ট করা হয়েছে। তাতে দেখা গিয়েছে, বাগান শহরের আকাশে ছেয়ে গিয়েছে ধুলোর মেঘ। সেই সঙ্গে বেশ কিছু প্যাগোডার চূড়াও ভেঙে পড়তে দেখা গিয়েছে ওই ভিডিওয়। এ ছাড়াও দেশের আনাচে কানাচে বেশ কিছু বহুতল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এমনকী নেপিদওয়ের পার্লামেন্ট ভবনেরও ক্ষতি হয়েছে এই ভূমিকম্পে।
যদিও মায়ানমারে হামেশাই ভূমিকম্প হয়। গত এপ্রিলেই কেঁপে উঠেছিল মায়ানমার। তবে তখন ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সে রকম ছিল না। কিন্তু এ বারের ভূমিকম্পে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলো। এক পুলিশ অফিসার জানিয়েছেন, ভূকম্পে সব চেয়ে ক্ষতি হয়েছে শহরের বিখ্যাত প্যাগোডাগুলোর। বেশ কিছু প্রাচীন মন্দিরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উপড়ে গিয়েছে গাছপালা ও বিদ্যুতের খুঁটিও। ওই অফিসার জানিয়েছেন, সূর্যাস্ত দেখতে গিয়ে ভূমিকম্পের জেরে একটি মন্দির থেকে পড়ে গিয়ে চোট পেয়েছেন স্পেনের এক পর্যটক।
চওক শহরের স্থানীয় এমপি সো উইন জানিয়েছেন, বেশ কিছু ক্ষণ স্থায়ী হয়েছিল ওই কম্পন। কম্পনের জেরে ইয়েনানচৌংয়ের একটি প্যাগোডা পুরো ভেঙে পড়েছে। ভেঙে পড়েছে চওক শহরের একটি বহুতলও।
ইয়েনানচৌংয়ের এক বাসিন্দা সংবাদমাধ্যমের কাছে জানিয়েছেন, ওই প্যাগোডাটিতে আগেই ফাটল ছিল। আজ ভূমিকম্পের জেরে সেটি পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে।
বাংলাদেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম অংশও তীব্র ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে। দেশের এক সংবাদমাধ্যমের তরফে জানানো হয়েছে, ভূমিকম্পের সময় একটি শিল্প এলাকার বহুতল থেকে আতঙ্কে পালাচ্ছিলেন বেশ কয়েক জন শ্রমিক। তাতে আহত হয়েছেন ২০ জন। পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারতেও জোরালো কম্পন অনুভূত হয়েছে। অসম, বিহার পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা ও ত্রিপুরার বিভিন্ন অংশে কম্পন অনুভূত হয়।
আরও পড়ুন
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy