Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
International

অভিবাসী যেখানে বেশি, অপরাধ সেখানে কম, ট্রাম্পকে ওড়ালো গবেষণা

একের পর এক হারই যেন হয়ে উঠছে ট্রাম্প-কার্ড! না, অভিবাসী (ইমিগ্র্যান্টস) মানেই আসামী বা অপরাধী নন। বলছে সমাজবিজ্ঞানের হালের গবেষণা।

সুজয় চক্রবর্তী
শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ১৩:১২
Share: Save:

একের পর এক হারই যেন হয়ে উঠছে ট্রাম্প-কার্ড!

পপুলার ভোটে হার। কোর্টে পরাজয়। এ বার বিজ্ঞান গবেষণার ফলাফলেও মেনে নিতে হল বড়সড় হার।

নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কথা বলছি। যাঁর ভাবনাচিন্তা, মতাদর্শকে একের পর এক ধাক্কা সইতে হচ্ছে।

পপুলার ভোটে ‘নো হোয়্যার’ হয়ে গিয়েও ইলেক্টোরাল কলেজের ‘ব্যাকডোর’ দিয়ে পাশ করা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যে চিন্তাভাবনা থেকে আমেরিকায় তাঁর অভিবাসন নীতির ফতোয়াটি জারি করেছেন, সমাজবিজ্ঞানের হালের একটি গবেষণা নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্টের সেই ধারণাটিকেই ভুল প্রমাণ করে দিল।

না, অভিবাসী (ইমিগ্র্যান্টস) মানেই আসামী বা অপরাধী নন।

না, অভিবাসীরা কোনওখানে বসবাস করলেই খুন, সন্ত্রাস, রক্তপাতে থমথমে হয়ে থাকে না সেই এলাকা।

অভিবাসী মানেই ‘ক্রাইম’-এর ধারক, বাহক, জন্মদাতা নন।

অভিবাসী মানেই নন ‘ক্রিমিনাল’ও।


বাফালো বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই সদ্য প্রকাশিত গবেষণাপত্র

বরং উল্টোটা।

অভিবাসীদের এলাকাগুলোতেই শান্তি, সুস্থিতি, সমাজের নিরাপত্তা তুলনামূলক ভাবে অনেক বেশি। খুন, জখম, সন্ত্রাস, রক্তপাতের ঘটনা কম ঘটে আমেরিকার অভিবাসী প্রধান এলাকাগুলোয়। গুলি, বিস্ফোরণের শব্দ তুলনায় অনেক অনে‌ক কম শোনা যায় আমেরিকার অভিবাসী প্রধান এলাকাগুলোয়।

এমনটাই বলছে সমাজবিজ্ঞানের হালের একটি গবেষণার ফলাফল। বাফালো বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর রবার্ট অ্যাডেলমানের নেতৃত্বে একটি গবেষকদলের ওই গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক জার্নাল ‘জার্নাল অফ এথনিসিটি ইন ক্রিমিনাল জাস্টিস’-এর সাম্প্রতিক সংখ্যায়। গবেষণাপত্রটির শিরোনাম- ‘আরবান ক্রাইম রেটস অ্যান্ড দ্য চেঞ্জিং ফেস অফ ইমিগ্রেশন: এভিডেন্স অ্যাক্রস ফোর ডিকেডস’।

গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হওয়ার পর মূল গবেষক বাফালো বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর রবার্ট অ্যাডেলমানের সঙ্গে আনন্দবাজারের তরফে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হয়েছিল। ই-মেলে পাঠানো হয়েছিল প্রশ্নমালাও।

ওই গবেষণার ফলাফল কী বলছে?

আনন্দবাজারের পাঠানো প্রশ্নের জবাবে নিউ ইয়র্ক থেকে ই-মেলে রবার্ট অ্যাডেলমান লিখেছেন, ‘‘আমাদের গবেষণা এই প্রথম জোরালো ভাবে পরিসংখ্যান দিয়ে প্রমাণ করতে পেরেছে, আমেরিকার অভিবাসী প্রধান মেট্রোপলিটান এলাকাগুলিতে অপরাধের সংখ্যা তুলনায় অনেক কম অন্য শহরগুলির চেয়ে। আমরা গবেষণার মাধ্যমে দেখাতে পেরেছি, অভিবাসীদের সঙ্গে অন্তত অপরাধের কোনও ওতপ্রোত সম্পর্ক নেই। দেখাতে পেরেছি, অভিবাসী মানেই অপরাধী, এই ধারণাটা এক্কেবারে ভুল। দেখাতে পেরেছি, আমেরিকার যে এলাকাগুলিতে মূলত অভিবাসীরা থাকেন, সেই সব এলাকায় মারধোর, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, লুঠপাট, খুন, জখম, সন্ত্রাস, অগ্নিসংযোগের ঘটনা দেশের অন্য এলাকা বা অন্য শহরগুলির তুলনায় অনেকটাই কম। আমেরিকায় অভিবাসী প্রধান বলে চিহ্নিত, এমন ২০০টি এলাকাকে (আমেরিকার সেন্সাস ব্যুরোর বাছাই করা) বেছে নেওয়া হয়েছিল গবেষণার জন্য। আর অপরাধের খতিয়ান (সেন্সাস ব্যুরো ও ফেডেরাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন বা, এফবিআই) নেওয়া হয়েছিল ১৯৭০ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত মোট ৪০ বছরের। আমেরিকার সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে (অভিবাসন নিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ফতোয়া) এই গবেষণার ফলাফলের অত্যন্ত তাৎপর্য রয়েছে। কারণ, এই গবেষণা তথ্য, পরিসংখ্যান দিয়ে নির্ভুল ভাবে প্রমাণ করে দিতে পেরেছে, অভিবাসনের সঙ্গে অপরাধমনস্কতার কোনও সম্পর্ক নেই।’’

খুচরো (ইন্ডিভিজ্যুয়াল) অভিবাসন আর দল বেঁধে অভিবাসনের মধ্যে কি কোনও ফারাক থাকে?

আনন্দবাজারের পাঠানো প্রশ্নের জবাবে সহযোগী গবেষক আলাবামা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক লেসলি উইলিয়ামস রিড ই-মেলে লিখেছেন, ‘‘এর আগে প্রায় একই রকমের একটি গবেষণা হয়েছিল। অপরাধ ও গ্রেফতারের খতিয়ান নিয়ে। তাতে মোটামুটি ভাবে দেখা গিয়েছিল, যাঁদের জন্ম আমেরিকার বাইরে কিন্তু পেশার প্রয়োজন বা অন্য কোনও কারণে আমেরিকায় এসে থেকে গিয়েছেন বছরের পর বছর (পরিভাষায়, অভিবাসী) তাঁরা যত অপরাধ করেন, তার চেয়ে খাতায়-কলমে অপরাধের ঘটনায় অনেক গুণ বেশি জড়িয়ে থাকেন জন্মসূত্রে আদ্যোপান্ত মার্কিন নাগরিকরা। কিন্তু এই গবেষণায় আমরা শুধুই ব্যক্তিগত স্তরে অভিবাসীদের দেখতে চাইনি। বরং দেখতে চেয়েছিলাম, অনেক বৃহৎ পরিসরে অভিবাসনের (লার্জ স্কেল ইমিগ্রেশন) সঙ্গে অপরাধের ঘটনা বা অপরাধমনস্কতার কোনও সম্পর্ক রয়েছে কি না। অর্থনৈতিক সুযোগসুবিধা কম থাকার দরুন অভিবাসীদের মধ্যে এই প্রবণতা বাড়ে কি না, সেটা খতিয়ে দেখাটাই ছিল আমাদের গবেষণার মূল ফোকাস। আমরা এমন দাবি করছি না যে, অপরাধের সঙ্গে অভিবাসীদের কোনও সম্পর্কই নেই, কিন্তু অভিবাসীরা বেশি সংখ্যায় থাকেন বলেই বিশেষ বিশেষ এলাকায় অপরাধমূলক ঘটনার সংখ্যা বেশি, এমন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। বরং আমরা উল্টো ঘটনা ঘটতে দেখেছি। দেখেছি, অভিবাসী প্রধান এলাকাগুলিতে ওই ঘটনার সংখ্যা অনেকটাই কম। এমনকী, এটাও দেখেছি, অভিবাসন আমেরিকার সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনে সদর্থক ছাপই ফেলেছে। অভিবাসন আমেরিকার সমাজ ও অর্থনীতির ভালই করেছে। তাকে পিছিয়ে দেয়নি।’’

তা হলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জন্য বার্তাটা কী রইল বিজ্ঞানের?

অধ্যাপক অ্যাডেলমান তাঁর ই-মেল জবাবে লিখেছেন, ‘‘তথ্য, পরিসংখ্যান, বিজ্ঞানের ওপর নির্ভর করেই সরকারি নীতি প্রণয়ন করা উচিত। সমাজবিজ্ঞান সেটাই বলে। কোনও রাষ্ট্রপ্রধান তাঁর মর্জিমাফিক কোনও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র চালাতে পারেন না, তা তিনি যেই হোন না কেন।’’

আরও পড়ুন- অ্যাসপিরিনেই কাবু হতে পারে ক্যানসার! পথ দেখালেন ২ ভারতীয়
রাশিয়াকে তথ্য পাচার? ইস্তফা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Immigration Law in US United States Donald Trump
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE