Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
International News

করাচি বন্দরে চিনের পরমাণু সাবমেরিন, সতর্ক নজর রাখছে নৌসেনা

ভারতের খুব কাছে ঘোরাফেরা করছে চিনের পরমাণু সাবমেরিন। বিষয়টি জানা গিয়েছে একটি উপগ্রহ চিত্র সামনে আসার পর। ছবিটি ২০১৬-র মে মাসের। ওই সময়ের একটি উপগ্রহ চিত্রে পাকিস্তানের করাচি বন্দরের হারবারে নোঙর করে থাকতে দেখা গিয়েছে এই চিনা ডুবোজাহাজটিকে।

ছবি: সংগৃহীত।

ছবি: সংগৃহীত।

সংবাদ সংস্থা
শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০১৭ ১৭:৩৬
Share: Save:

ভারতের খুব কাছে ঘোরাফেরা করছে চিনের পরমাণু সাবমেরিন। বিষয়টি জানা গিয়েছে একটি উপগ্রহ চিত্র সামনে আসার পর। ছবিটি ২০১৬-র মে মাসের। ওই সময়ের একটি উপগ্রহ চিত্রে পাকিস্তানের করাচি বন্দরের হারবারে নোঙর করে থাকতে দেখা গিয়েছে এই চিনা ডুবোজাহাজটিকে। ভারতীয় সীমান্ত থেকে মাত্র কয়েকশো কিলোমিটার দূরের ওই পাক বন্দরে চিনা পরমাণু সাবমেরিনের উপস্থিতি মোটেই অবজ্ঞা করার মতো বিষয় নয়, মানছে ভারতীয় নৌসেনাও। ভারত মহাসাগরের বিভিন্ন অংশে ভারতীয় নৌসেনার গতিবিধির উপর খুব কাছ থেকে নজর রাখতেই চিনা সাবমেরিনগুলির আনাগোনা শুরু হয়েছে, মনে করছেন নৌসেনার কর্তারা।

এক উপগ্রহ চিত্র বিশেষজ্ঞ সম্প্রতি করাচি বন্দরে চিনা পরমাণু সাবমেরিনের উপস্থিতির এই ছবিটি টুইটারে প্রকাশ করেছেন। গুগল আর্থ থেকে এই ছবিটি পাওয়া গিয়েছে। যে সাবমেরিনটিকে করাচিতে দেখা গিয়েছে, সেটি চিনা নৌসেনার হাতে আসা টাইপ ০৯১ ‘হান’ ক্লাস নিউক্লিয়ার অ্যাটাক সাবমেরিন— দাবি উপগ্রহ চিত্র বিশেষজ্ঞের। তবে ছবিটি সামনে আসার পর ভারতীয় নৌসেনার কর্তারা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ওই সাবমেরিন ‘হান’ ক্লাসের নাও হতে পারে। চিনা নৌসেনার হাতে থাকা নিউক্লিয়ার সাবমেরিনগুলির মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী যে টাইপ ০৯৩ ‘শ্যাং’ ক্লাস সাবমেরিন, করাচিতে নোঙর করা সাবমেরিনটি সেই গোত্রেরও হতে পারে।

নিউক্লিয়ার সাবমেরিন নিজের বেস বা ঘাঁটি ছেড়ে কত দূর পর্যন্ত যেতে পারে, তার কোনও সীমা নেই। ডিজেল-ইলেকট্রিক সাবমেরিনগুলি কত দূর পর্যন্ত যেতে পারে, তা নির্ভর করে জ্বালানির উপর। কিন্তু নিউক্লিয়ার সাবমেরিনে যে নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টর থাকে, তাতে সচরাচর জ্বালানি ভরতে হয় না। সেখানে স্বয়ংক্রিয় ভাবেই পরমাণু শক্তি উৎপন্ন হয় এবং সেই কারণে এই ধরনের সাবমেরিনকে যত দূরে খুশি পাঠিয়ে দেওয়া যায়। শুধু নাবিকদের খাবার এবং অন্যান্য রসদের খেয়াল রাখতে হয়। তাই চিন সাগর থেকে মালাক্কা প্রণালী, আন্দামান সাগর, শ্রীলঙ্কা উপকুল এবং আরব সাগর হয়ে সোজা পাকিস্তানের করাচি পর্যন্ত নিউক্লিয়ার সাবমেরিন পাঠিয়ে দেওয়া কোনও সমস্যার বিষয় নয়। চিনের কোনও নৌঘাঁটি থেকে করাচি পর্যন্ত যাওয়ার এই যে পথ, সে পথে এক বার গেলেই ভারতের প্রায় গোটা উপকূল রেখার উপর এক বার নজর বুলিয়ে নেওয়া যায়। পাকিস্তানের বন্দরে পরমাণু সাবমেরিন পাঠানো হয়েছিল সেই লক্ষ্যেই, বলছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা।

গুগল আর্থে পাওয়া গিয়েছে এই উপগ্রহ চিত্র।

পরমাণু সাবমেরিন অত্যন্ত কম শব্দ করে জলের তলা দিয়ে যাতায়াত করে। ফলে এর উপস্থিতি সহজে টের পাওয়া যায় না। তাই এই সাবমেরিনকে কাজে লাগিয়েই ভারতীয় নৌসেনার সমস্ত গতিবিধির উপর চিন গোপনে নজর রাখতে চাইছে বলে ভারতীয় প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। ভারত মহাসাগরের বিশাল বিস্তারে বেজিং নিজের আধিপত্য কায়েম করতে চায়। কিন্তু নয়াদিল্লির জন্যই ভারত মহাসাগর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশের নিরাপত্তার স্বার্থেই ভারত মহাসাগরে দাপট বজায় রাখা ভারতীয় নৌসেনার পক্ষে খুব জরুরি। ফলে ভারত মহাসাগরকে ঘিরে ভারত এবং চিনের মধ্যে ঠান্ডা লড়াই ক্রমশ অনিবার্য হয়ে উঠছে। এর আগে আন্দামানের খুব কাছে চিনা সাবমেরিনের উপস্থিতি টের পাওয়া গিয়েছিল। এ বার দেখা গেল গোপনে চিনা সাবমেরিন করাচি বন্দরে হাজির হয়েছিল এবং সেখানে নোঙরও করেছিল। অর্থাৎ ভারতীয় জলসীমার আশপাশ দিয়ে প্রায় সর্বক্ষণই ঘুরে বেড়াচ্ছে চিনা নিউক্লিয়ার সাবমেরিনগুলি। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা অন্তত তেমনই মনে করছেন।

আরও পড়ুন: এ বার কিন্তু বাড়বে পাক ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লাও: ভারতকে হুঁশিয়ারি চিনের

এর জবাবে ভারত কী করছে? ভারতীয় নৌসেনার প্রধান অ্যাডমিরাল সুনীল লানবা গত মাসেই বলেছেন, ‘‘চিনা নৌসেনার যুদ্ধজাহাজ এবং সাবমেরিনগুলির গতিবিধির উপর ভারতীয় নৌসেনা খুব সতর্ক নজর রাখছে। সেগুলির উপর নজরদারি চালাতে আমরা জাহাজ বা বিমান ব্যবহার করি।’’ অ্যাডমিরাল লানবা আসলে বোঝাতে চেয়েছেন, চিনা সাবমেরিনের গোপন আনাগোনা নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কারণ নেই। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরাও সে বিষয়ে একমত। ভারতীয় নৌসেনা সম্প্রতি আমেরিকার কাছ থেকে পি৮-ওয়ান অ্যান্টি-সাবমেরিন ওয়ারফেয়ার জেট কিনেছে, সেউ যুদ্ধবিমান পুরো ছবিটাই বদলে দিয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। নিউক্লিয়ার সাবমেরিন সমুদ্রের গভীরে খুব কম শব্দ করে চলাফেরা করলেও, পি৮-ওয়ান জেট তাকে চিহ্নিত করে ফেলে। এক বার চিহ্নিত করার পরে সমুদ্রের গভীরে থাকা সাবমেরিনেও আঘাত হানতে পারে এই যুদ্ধবিমান। অথবা আশপাশের সমস্ত ভারতীয় নৌ-পরিকাঠামোকে এই যুদ্ধবিমান জানিয়ে দিতে পারে, প্রতিপক্ষের সাবমেরিন কখন, কোথায় অবস্থান করছে।

ভারতীয় নৌসেনা যথেষ্ট সতর্ক রয়েছে ঠিকই। কিন্তু ভারতের উপর চিনের নজরদারি এবং চিনা নৌসেনার উপর ভারতের পাল্টা নজরদারিতে ভারত মহাসাগর কিন্তু ক্রমশ উত্তপ্ত হচ্ছে। বিস্তীর্ণ জলভাগে আধিপত্যের লড়াইতে আর এক ঠান্ডা লড়াই শুরু হতে চলেছে বলেও প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

China India Pakistan Defence Navy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE