Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Tapas

‘দু’দেশে পাঁচিল তুলতে চাওয়া লোকটা আমেরিকার প্রেসিডেন্ট!’

সালোনী মেঘানী, T2 Online-এর এগজিকিউটিভ এডিটর। ২০০৮-এ ছিলেন নিউ ইয়র্কে।তখন তিনি নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া। ওবামার জয়ের মুহূর্তের সাক্ষী ছিলেন তিনি। আজ ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ের পর আরও একবার ফিরে দেখলেন সে সময়কে। কী বৈপরীত্য! এক অদ্ভুত দিন ছিল সেটা। আমি তখন নিউ ইয়র্কের হারলেমে। নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া। সেই সূত্রেই নিউ ইয়র্কের ওই অঞ্চলে বাস।

শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৬ ১৯:৪২
Share: Save:

কী বৈপরীত্য!

এক অদ্ভুত দিন ছিল সেটা। আমি তখন নিউ ইয়র্কের হারলেমে। নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া। সেই সূত্রেই নিউ ইয়র্কের ওই অঞ্চলে বাস। ২০০৮–এর সেই মধ্যরাতে খবর পেলাম, ওবামা জিতেছেন। আমেরিকা প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট পাচ্ছেন। ‘ইয়েস উই ক্যান’-এর সে ডাকে সাড়া দিতে নিউ ইয়র্কের রাস্তায় তখন তিলধারণের জায়গা নেই। একটু ফ্রেশ হয়েই নেমে এলাম পথে। চার দিকে যেন বিদ্যুৎ খেলে গিয়েছে। একে অপরকে আলিঙ্গন করছেন। কত অজানা মানুষকে সে দিন আনন্দে জড়িয়ে ধরেছিলাম। অনেকেই আনন্দে কাঁদছিলেন।

কাছেই একটি পানশালা। কয়েক জন পরিচিত এবং অপরিচিতের সঙ্গে দাঁড়িয়েছিলাম। টিভিতে দেখলাম ওবামা জয়ের পরে বক্তৃতা দিচ্ছেন। পুরোটা মনে নেই। কিন্তু একটা বাক্য এখনও কানে ভাসে, ‘‘আমেরিকায় সব সম্ভব, এই নিয়ে কারও যদি সন্দেহ থাকে তবে আজকে জবাব পেয়ে গেলেন।’’ বহুত্বময়, আন্তর্জাতিকতাবাদী এক সময়ে বাস করছি বলে মনে হয়েছিল। যদিও ওভাল অফিসে বসে আমেরিকার নীতির আমূল পরিবর্তন সম্ভব বলে মনে করতাম না। এখনও করি না। কিন্তু ওবামা শুধু জিতেই পরিবর্তন নিয়ে এসেছিলেন। আনন্দে চোখে জল এসে গিয়েছিল।

আর আজ। কলকাতায় নিজের কর্মস্থলে ডেস্কটপের সামনে বসে আছি। কলকাতায়, কারণ, ‘ওয়ার্ক পারমিট’ পাইনি বলে ফিরে এসেছি নিজের ঘরে। আর টিভিতে দেখছি জয়ের পরে ভাষণ দিচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। মনে হচ্ছে ফিরে এসে ভালই হয়েছে। মনে ভাসছে ওবামার সেই বাক্যটির একটি অংশ, ‘‘...আমেরিকায় সবই সম্ভব।’’ চোখে জলে ভরে গেল, কিন্তু অনুভূতি ভিন্ন।

এক জন কর ফাঁকি দিয়েছেন। মেয়েদের অসম্মান করেন, অপমান করেন। দু’টি দেশের মধ্যে পাঁচিল তোলার কথা বলেন। সেই লোকটা পৃথিবীর সবচেয়ে ‘শক্তিশালী’ দেশের সর্বময় কর্তা। আমার ফ্লোরিডার বন্ধুরা কী করে এই লোকটাকে ভোট দিল! কী করে বিতর্কের ধাক্কা খেতে খেতে লোকটা তলে তলে এই সমর্থন জোগাড় করে ফেলল!

আরও পড়ুন, পাকিস্তানকে বাগে আনতে এ বার মাঠে নামবেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প?

ট্রাম্প ফ্লোরিডা জেতার আগে পর্যন্ত বিশেষ আমল দিচ্ছিলাম না। বন্ধুদের সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রাম্পকে নিয়ে কত ঠাট্টা, ইয়ার্কি করেছি। কিন্তু ফ্লোরিডায় ট্রাম্পের জয়ের পরে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছি। হাসি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বুঝতে পারছি বিভেদের একটি বড়, বিচ্ছিন্ন বুদবুদ তৈরি হয়েছে। এক পাশের সঙ্গে আর এক পাশের দূরত্ব ক্রমেই বেড়ে চলেছে। এই শতাব্দীর শুরুর দশকটা ছিল বিশ্বায়নের সময়ে। আর এই দশকে আমরা ফিরে এসেছি জাতীয়তাবাদে। এখন আমরা-ওরার বিভাজন তৈরির সময়। ক্রমেই তাই আমরা-ওরা’র সংজ্ঞা আর পরিষ্কার ও তীক্ষ্ণ হয়ে উঠছে।

সদ্যসমাপ্ত এই মার্কিন নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত বিশ্বে আমেরিকার ভূমিকা কী হবে তাই প্রধান হয়ে উঠল। সব কিছুতেই যেন আমেরিকাকেই আগে থাকতে হবে। এই মত অবশ্য ট্রাম্পের একার নয়। মার্কিন গণতন্ত্রের বেশ কয়েক জন প্রতিষ্ঠাতার ভাবনার ধরন প্রায় একই। জন অ্যাডমস বাইরের দেশের দানবদের বিরুদ্ধে সতর্ক করেছিলেন। থমাস জেফারসন অন্য দেশের সঙ্গে সমঝোতায় যাওয়ার বিরুদ্ধে ছিলেন। জর্জ ওয়াশিংটন দেশ ছাড়ারই বিপক্ষে ছিলেন। ট্রাম্পের প্রাচীর আসলে বিভেদের কথা বলে যা ক্রমেই পরস্পরের থেকে দূরে সরে যাওয়া বিশ্বের অনেক নেতারই মনের কথা। আসলে ইচ্ছেটা হল আমেরিকাকেই সব ক্ষেত্রে আগে থাকতে হবে। বিশ্বায়ন এবং বহুত্ববাদকে এ বার ৫০০ বা ১০০০ টাকার নোটের মতো বাতিল হয়ে যেতে হবে।

(লেখক T2 Online-এর এগজিকিউটিভ এডিটর)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE