Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
International News

ভিয়েতনামকে সঙ্গে নিয়ে দক্ষিণ চিন সাগরে বেজিংকে চ্যালেঞ্জ দিল্লির

দক্ষিণ চিন সাগরের প্রায় ৯০ শতাংশ এলাকাকেই চিন নিজেদের জলসীমা বলে দাবি করে। চিন ওই সাগরের যে ম্যাপ প্রকাশ করে তাতে ন’টি ড্যাশ দিয়ে চিহ্নিত একটি ‘ইউ’ আকারের অ়ঞ্চলকে দেখানো হয়। ওই ‘ইউ’-এর ভিতরে থাকা জলভীগ চিনের জলসীমা বলে বেজিং-এর দাবি।

দক্ষিণ চিন সাগরের যে এলাকাকে নিজেদের জলসীমা বলে দাবি করে ভিয়েতনাম, সেই এলাকায় নিজেদের পতাকা ওড়া নিশ্চিত করতে ভারতের মতো বড় শক্তির সঙ্গে গাঁটছড়া যে জরুরি, তা হ্যানয় ভাল ভাবেই জানে। ছবি: রয়টার্স।

দক্ষিণ চিন সাগরের যে এলাকাকে নিজেদের জলসীমা বলে দাবি করে ভিয়েতনাম, সেই এলাকায় নিজেদের পতাকা ওড়া নিশ্চিত করতে ভারতের মতো বড় শক্তির সঙ্গে গাঁটছড়া যে জরুরি, তা হ্যানয় ভাল ভাবেই জানে। ছবি: রয়টার্স।

সংবাদ সংস্থা
শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৭ ০০:০০
Share: Save:

সিকিম সীমান্তে টানাপড়েনের মাঝেই দক্ষিণ চিন সাগরে জোর ধাক্কা চিনকে। বিতর্কিত জলসীমায় ভারতকে খনিজ তেল অনুসন্ধানের অনুমতি দিয়ে দিল ভিয়েতনাম। খনিজ তেল অনুসন্ধানের জন্য ভারত-ভিয়েতনাম চুক্তির মেয়াদও বাড়িয়ে দেওয়া হল দু’বছরের জন্য। যে এলাকায় এ বার ভারতকে খনন চালানোর অনুমতি ভিয়েতনাম দিল, দক্ষিণ চিন সাগরের সেই এলাকাকে ভিয়েতনামের জলসীমা হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না চিন। ‘নাইন ড্যাশ লাইন’ নীতি অনুসারে ওই অঞ্চলকে নিজেদের এলাকা বলেই বেজিং দাবি করে। সেই বিতর্কিত জলভাগে ভারত এবং ভিয়েতনামের যৌথ তেল অনুসন্ধান যে চিনকে কঠোর কূটনৈতিক বার্তা দেবে, সে বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশারদদের সংশয় নেই।

ভারত-ভিয়েতনাম গাঁটছড়াকে কোনও কালেই ভাল চোখে দেখে না চিন। ভিয়েতনামের দক্ষিণ প্রান্তে ভারত বন্দর তৈরি করায় দুই দেশকেই বেজিং একাধিক বার হুঁশিয়ারি দিয়েছে। দক্ষিণ চিন সাগরে ভারতকে সঙ্গে নিয়ে যৌথ ভাবে খনিজ তেল অনুসন্ধানের পথে যে সময় থেকে এগিয়েছে ভিয়েতনাম, সেই সময় থেকেই ভারত-বিয়েতনামের এই পদক্ষেপের কড়া সমালোচনা করে আসছে চিন। ২০০৬ সালে ভারত এব্ং ভিয়েতনামের মধ্যে এই চুক্তি হয়েছিল। চিন দাবি করেছিল, ভারতকে সঙ্গে নিয়ে ভিয়েতনাম যে সব এলাকায় তেল খোঁজার চেষ্টা করছে, সেই সব এলাকা ভিয়েতনামের নয়। তেল অনুসন্ধান বন্ধ করার জন্য নয়াদিল্লি এবং হ্যানয়কে একাধিক বার হুঁশিয়ারি দিয়েছে বেজিং। কিন্তু কোনও দেশই তাতে পিছিয়ে আসেনি। এ বার ভারতের সঙ্গে তেল অনুসন্ধান চুক্তি আরও দু’বছরের জন্য বাড়িয়ে ভিয়েতনাম বুঝিয়ে দিল, দক্ষিণ চিন সাগরে নিজেদের স্বার্থ সুরক্ষিত রাখতে ভারতকে সঙ্গে নিয়েই চলবে তারা।

আরও পড়ুন:সভ্যতার সাড়ে সর্বনাশ ঘটিয়েছেন ট্রাম্প, রুখতে হবে এখনই: চমস্কি

ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত তেল অনুসন্ধান সংস্থা ওএনজিসি বিদেশ দক্ষিণ চিন সাগরে খনিজ তেল অনুসন্ধানের কাজ করছে। ওএনজিসি বিদেশ সূত্রের খবর, চলতি সপ্তাহের গোড়াতেই বিয়েতনাম থেকে চিঠি এসে পৌঁছেছে। দক্ষিণ চিন সাগরের ব্লক ১২৮ এলাকায় তেল অনুসন্ধানের যে বরাত ভারতকে দেওয়া হয়েছিল, তা আরও দু’বছরের জন্য বাড়ানো হল বলে ভিয়েতনাম জানিয়েছে। এই ব্লক ১২৮-এর একাংশ চিনের ‘নাইন ড্যাশ লাইন’-এর মধ্যে পড়ে।

চিন শুধু যে ভারত-ভিয়েতনাম গাঁটছড়া নিয়েই অস্বস্তিতে রয়েছে তা নয়। দক্ষিণ চিন সাগরের ৯০ শতাংশ এলাকায় চিনা সার্বভৌমত্বের দাবিকে নস্যাৎ করতে মার্কিন রণতরীও মাঝে-মধ্যেই হানা দিচ্ছে সেখানে। ছবি: রয়টার্স।

নাইন-ড্যাশ লাইন কী?

দক্ষিণ চিন সাগরের প্রায় ৯০ শতাংশ এলাকাকেই চিন নিজেদের জলসীমা বলে দাবি করে। চিন ওই সাগরের যে ম্যাপ প্রকাশ করে তাতে ন’টি ড্যাশ দিয়ে চিহ্নিত একটি ‘ইউ’ আকারের অ়ঞ্চলকে দেখানো হয়। ওই ‘ইউ’-এর ভিতরে থাকা জলভীগ চিনের জলসীমা বলে বেজিং-এর দাবি। যদিও দক্ষিণ চিন সাগরকে ঘিরে থাকা ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, ব্রুনেই, ফিলিপিন্স, তাইওয়ানের মতো দেশগুলি চিনের এই ‘নাইন ড্যাশ লাইন’-কে স্বীকৃতি দেয় না এবং ‘ইউ’-এর মধ্যে থাকা অনেকটা অঞ্চলকেই এই দেশগুলি নিজেদের জলসীমা বলে দাবি করে।

সিকিম সীমান্তে ভারত এবং চিনের মধ্যে টানাপড়েন এখন তুঙ্গে। দু’পক্ষই বিপুল সৈন্য সমাবেশ ঘটিয়েছে ডোকা লায়। ভারত সেনা না সরালে চিন যুদ্ধ করবে, হুঁশিয়ারি দিচ্ছে বেজিং। স্বাধীন সিকিমের দাবি উস্কে দেওয়া হবে, ভুটানে ভারত বিরোধী ভাবাবেগে প্ররোচনা দেওয়া হবে— এমন হুঁশিয়ারিও চিন দিচ্ছে। কিন্তু নয়াদিল্লি কোনও হুঁশিয়ারির সামনেই পিছু হঠেনি। সীমান্তে চিনা সেনার চোখে চোখ রেখে দাঁড়িয়ে রয়েছে ভারতীয় বাহিনী। তার মধ্যেই দক্ষিণ চিন সাগরে চিনের একাধিপত্যকে ফের চ্যালেঞ্জ জানাল ভারত। ভুটানকে সঙ্গে নিয়ে শুধু হিমালয়ের বুকে নয়, ভিয়েতনামকে সঙ্গে নিয়ে দক্ষিণ চিন সাগরেও যে চিনকে চাপে রাখা হবে, সে বার্তা নয়াদিল্লি খুব স্পষ্ট করে দিয়ে দিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE