Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

‘চোখের সামনেই স্ত্রীকে ধর্ষণ, মেয়েকে মারল’

২০১২ সালে আফগানিস্তানে তালিবানের শাখা সংগঠন হক্কানি নেটওয়ার্ক অপহরণ করেছিল মার্কিন-কানাডীয় দম্পতি জোশুয়া এবং কেইটল্যান কোলম্যানকে। সেখানেই এমন নরক-যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়েছে তাঁদের। বন্দি অবস্থাতেই কোল আলো করে এসেছে ফুটফুটে চার সন্তান।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

সংবাদ সংস্থা
টরন্টো শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০১৭ ০২:৪৯
Share: Save:

চোখের সামনেই জঙ্গিরা শেষ করে দিয়েছিল তাঁর শিশুকন্যাকে। ধর্ষিতা হতে দেখেছেন স্ত্রীকে। নিরুপায় স্বামী রক্ষা করতে পারেননি সন্তানের প্রাণ, স্ত্রীর সম্ভ্রম! হাত-পা ছিল বাঁধা।

গত কাল টরন্টো বিমানবন্দরে নেমে পাঁচ বছর ধরে জঙ্গি ডেরায় চলা অত্যাচারের কাহিনি শোনাচ্ছিলেন হতভাগ্য জোশুয়া বয়েল!

২০১২ সালে আফগানিস্তানে তালিবানের শাখা সংগঠন হক্কানি নেটওয়ার্ক অপহরণ করেছিল মার্কিন-কানাডীয় দম্পতি জোশুয়া এবং কেইটল্যান কোলম্যানকে। সেখানেই এমন নরক-যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়েছে তাঁদের। বন্দি অবস্থাতেই কোল আলো করে এসেছে ফুটফুটে চার সন্তান। তাদের মধ্যেও একটিকে মেরে ফেলেছে জঙ্গিরা।

গত বুধবার আফগানিস্তান সীমান্তের কাছ থেকে ওই দম্পতি এবং তাঁদের তিন সন্তানকে উদ্ধার করেছে পাক সেনা। গত রাতে সপরিবার কানাডায় ফিরেছেন জোশুয়া। বিমানবন্দরে নামার পরে তাঁদের স্বাগত জানিয়েছে কানাডা সরকার। সরকারি তরফে মিলেছে সব রকম সাহায্যেরও আশ্বাসও।

তার আগে দেশে ফেরার বিমানে চেপেও ভয় যেন কাটতে চাইছিল না ওঁদের। বিমানে জড়োসড়ো হয়ে বসেছিলেন কেইটল্যান। পরনে বাদামি হিজাব। পাশের সিটে দুই সন্তান। একদম শেষে বসেছিলেন কালো সোয়েটার পরিহিত স্বামী জোশুয়া। তাঁর কোলে সবচেয়ে ছোট সন্তান। মুখে কোনও কথা নেই। চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট।

বিমানবন্দরে নামার কিছু ক্ষণ পরেই সব কাহিনি সাংবাদিকদের শোনালেন জোশুয়া নিজেই। এক মুখ দাড়ি, চোখেমুখে ক্লান্তি নিয়ে জানালেন, ২০১২ সালে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে নিয়ে ঘুরতে গিয়েছিলেন আফগানিস্তানে। সেখানকার তালিবান অধ্যুষিত এক প্রত্যন্ত গ্রামে পৌঁছেছিলেন তাঁরা। যে গ্রামে পৌঁছতে পারে না কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। এমনকী সরকারি সাহায্যও সেখানে পৌঁছয় না। সেই গ্রামের মানুষকে সাহায্য করতেই গিয়েছিলেন ওই দম্পতি। সেখান থেকেই তাঁদের অপহরণ করে বন্দি করেছিল জঙ্গিরা।

আরও পড়ুন:ট্রাম্পের ইরান-নীতি নিয়ে অসন্তুষ্ট জার্মানি

পণবন্দি অবস্থাতেই আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে জীবন। জোশুয়া বলে চলেন, ‘‘বন্দি অবস্থাতেই জন্ম হয়েছিল আমাদের সন্তানদের। এর পর ২০১৪ সালে ওই জঙ্গিরা আমাদের সামনেই মেরে ফেলে এক কন্যাসন্তানকে। ওই বছরেই আমার স্ত্রীকে ধর্ষণ করা হয়।’’

মুক্তি পাওয়ার কয়েক মুহূর্ত আগেও ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়েছে জোশুয়াদের। পরিবারের দাবি, অপহরণকারীরা গাড়িতে করে তাঁদের নিয়ে যাওয়ার সময়েই পথ আটকেছিল পাক সেনা। তাদের গুলিতে মৃত্যু হয় বেশ কিছু জঙ্গির। তাতে জখম হয়েছিলেন জোশুয়াও। তবে মার্কিন অফিসাররা নিশ্চিত ভাবে এ বিষয়ে কিছু জানাননি।

মার্কিন সেনাবাহিনীর তরফে জানানো হয়েছে, বয়েল পরিবারকে দেশে ফেরানোর জন্য বুধবারই পাকিস্তান উড়ে গিয়েছিল একটি মার্কিন দল। সেখানে তাঁদের শারীরিক পরীক্ষা করিয়ে উড়ানে তোলার তোড়জোড় চলছিল। সেই সময়ে জোশুয়া ওই উড়ানে ফিরতে অস্বীকার করেন। তাঁর বাবার বক্তব্য, ‘‘ওই উড়ানটির ফেরার কথা ছিল আফগানিস্তানের বাগরাম বায়ুসেনা ঘাঁটি হয়ে। কিন্তু ওরা এতটাই আতঙ্কে ছিল যে, সরাসরি কোনও উড়ানে ফিরতে চেয়েছিল।’’ জোশুয়ার ভাই ড্যান বয়েল জানান, উদ্ধার হওয়ার পরেই দাদার সঙ্গে বেশ কয়েক বার কথা হয়েছিল তাঁর। গলা শুনে পাঁচ বছর আগের মতোই লেগেছিল। তার পর জোড়া লেগেছে পরিবার। তাঁদের সকলের সঙ্গেই এখন স্বাভাবিক জীবন কাটাতে চান বয়েল দম্পতি। এখন সাধ একটাই— সন্তানদের একটা নিরাপদ জীবন উপহার দেওয়া। যাতে হারিয়ে যাওয়া শৈশব কিছুটা হলেও ফিরে পায় তারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE