Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
ভারতকে দুষে তোপ মায়ানমারকেও

রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে সরব রাষ্ট্রপুঞ্জের কর্তা

এই সঙ্কটের পর থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা মায়ানমার ছেড়ে কখনও বাংলাদেশ, কখনও ভারত, বিভিন্ন দেশে আশ্রয়ের খোঁজে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। সেই সূত্রেই জায়েদের বক্তব্য, ‘‘মায়ানমার সরকারকে সেনা অভিযান বন্ধ করতে বলছি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০২:২৯
Share: Save:

রোহিঙ্গা শরণার্থী সঙ্কটে সোমবার মুখ খুললেন রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার সংক্রান্ত হাইকমিশনার জায়েদ রাদ আল হুসেন। এ প্রসঙ্গে তিনি মায়ানমার এবং ভারত— দু’দেশের সরকারকেই বিঁধলেন কড়া ভাষায়। বললেন, মায়ানমারে রোহিঙ্গাদের উপরে যা চলছে তা ‘‘জাতি নিধনের আদর্শ উদাহরণ।’’ আর এই সঙ্কটকালে যে ভাবে রোহিঙ্গাদের মুখের উপরে ভারত দরজা বন্ধ করে দিয়েছে, জায়েদ সরব হয়েছেন তা নিয়েও। এ দিন রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে প্রথম সরব হতে দেখা গিয়েছে দলাই লামাকেও। তিনি মায়ানমার সরকারের পরামর্শদাতা এবং নেত্রী আউং সান সু চি-র উদ্দেশে তাঁর অনুরোধ, এর শান্তিপূর্ণ সমাধান খুঁজে বার করুন।

জেনিভায় মানবাধিকার কাউন্সিলের ৩৬তম অধিবেশনে মায়ানমার দিয়েই বক্তব্য শুরু করেন রাষ্ট্রপুঞ্জের হাইকমিশনার জায়েদ। তাঁর মতে, মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশে সে দেশের সেনাবাহিনী জঙ্গি দমনের নামে যা করছে, তা গত মাসের জঙ্গি হামলার তুলনায় ‘অনেক বেশি ভয়ঙ্কর।’ গত মাসের শেষের দিকে রোহিঙ্গাদের নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন ‘আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি’-র (আরসা) জঙ্গিরা রাখাইন প্রদেশে ৩০টি পুলিশ চৌকি ও একটি সেনা ছাউনিতে হামলা চালিয়ে ১৫০ জনকে হত্যা করে। তার পরই জঙ্গি দমনে অভিযানে নামে সেনা। গত কাল আরসা সংঘর্ষবিরতির বার্তা দিলেও তাতে কোনও গুরুত্ব দেয়নি মায়ানমার সেনা। বরং অভিযান চলবে বলেই দাবি তাদের।

এই সঙ্কটের পর থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা মায়ানমার ছেড়ে কখনও বাংলাদেশ, কখনও ভারত, বিভিন্ন দেশে আশ্রয়ের খোঁজে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। সেই সূত্রেই জায়েদের বক্তব্য, ‘‘মায়ানমার সরকারকে সেনা অভিযান বন্ধ করতে বলছি। রোহিঙ্গা জনতা যে অসম্ভব হিংসা ও বৈষম্যের শিকার, সে চিত্র বদলের আশু প্রয়োজন।’’ রবিবার বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রীও মায়ানমার সরকারের তীব্র সমালোচনা করেন। কূটনীতিকদের কাছে তাঁর দাবি, অসমর্থিত পাওয়া সূত্রে পাওয়া খবর, রাখাইনে অন্তত তিন হাজার রোহিঙ্গা নিধন ঘটেছে। এ দিন ঢাকার তরফে জানানো হয়েছে, আরও কয়েক হাজার রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিতে নতুন একটি শিবির তৈরির জায়গা করা হয়েছে।

মায়ানমার প্রশাসনের পাশাপাশি সোমবার আঙুল ওঠে ভারতের দিকেও। জায়েদ বলেছেন, নিজের দেশে যারা অত্যাচারের শিকার, তাদের আশ্রয় না দিয়ে ফিরিয়ে দেওয়া নিন্দাজনক। অন্তত ৪০ হাজার শরণার্থী ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। তার মধ্যে শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন ১৬ হাজার। জায়েদের কথায়, ‘‘ভারতের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী (কিরেন রিজিজু) বলেছেন রাষ্ট্রপুঞ্জের শরণার্থী কনভেনশনে ভারতের সই নেই। তা বলে এক দল মানুষকে ফের বিপদের মুখে ঠেলে দেওয়া যায় না। এ ক্ষেত্রে আইন সরিয়ে বিষয়টি মানবিক চোখে দেখা যেতে পারত।’’

সোমবার দলাই লামাও রোহিঙ্গা সঙ্কটে সু চি-কে বার্তা দিয়ে বলেছেন, ‘‘আপনি এবং আপনার মতো নেতৃস্থানীয় লোকজনের কাছে অনুরোধ, সমাজের সর্ব স্তরে পৌঁছে আপনারা শান্তি এবং সৌহার্দ্যের মাধ্যমে জনমানসে সম্প্রীতি ফিরিয়ে আনুন।’’ এর পরেই মায়ানমারের বৌদ্ধ সম্প্রদায়কে মাথায় রেখে দলাই লামা মনে করান গৌতম বুদ্ধের কথা। তাঁর মতে, ‘‘বুদ্ধ নিশ্চয়ই রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়াতেন। গোটা বিষয়টি নিয়ে আমি অত্যন্ত ব্যথিত।’’

মায়ানমারে অবশ্য অশান্তি এখনও অব্যাহত। রবিবার রাতে সে দেশের মাগওয়ে এলাকায় এক মুসলিম ব্যক্তির বাড়ি লক্ষ করে পাথর ছোড়ে শ’চারেক জনতা। পুলিশ রবার বুলেট ছুড়ে ক্ষিপ্ত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। অভিযোগ, এরা মুসলিম ব্যক্তির বাড়িতে হামলার আগে জাতীয় সঙ্গীত গায়। তার পরে সংলগ্ন মসজিদের দিকে মিছিল করে এগোতে থাকে। তাদের ঠেকাতে গুলি ছোড়ে পুলিশ। রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপরে নির্যাতনের খবর ছুঁয়েছে মাগওয়েকেও। তাই এখানেও রোহিঙ্গা বিতাড়নের দাবিতে জনতা পথে নামে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

UN Rohingya India Myanmar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE