Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

ক্ষুব্ধ রাষ্ট্রপুঞ্জ, একঘরে ট্রাম্প

এমনকী আমেরিকা-ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ফ্রান্স, ব্রিটেনও কড়া সমালোচনা করল ট্রাম্পের। ব্রিটেন, ফ্রান্স, ইতালি, জার্মানি ও সুইডেন একটি যৌথ বিবৃতিতে জানিয়েছে— ‘‘আমেরিকার সিদ্ধান্তকে আমরা মানি না। এটি নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব-বিরোধী এবং বিশ্বের ওই অংশের শান্তি রক্ষার ক্ষেত্রে খুবই অস্বস্তিকর।’’

ছবি: রয়টার্স।

ছবি: রয়টার্স।

সংবাদ সংস্থা
ওয়াশিংটন শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:৫৪
Share: Save:

কোণঠাসা আমেরিকা।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জেরুসালেমকে ইজরায়েলের রাজধানী ঘোষণা এবং তেল আভিভ থেকে দূতাবাস সেখানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে আজ দুপুরে জরুরি বৈঠক ডেকেছিল রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদ। বৈঠক চলাকালীন ১৫ সদস্যের পরিষদে মার্কিন প্রতিনিধি নিকি হ্যালি একাই দেশের প্রেসিডেন্টের হয়ে সরব হলেন। বাকি কোনও দেশই সমর্থন জানাল না আমেরিকাকে। এমনকী আমেরিকা-ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ফ্রান্স, ব্রিটেনও কড়া সমালোচনা করল ট্রাম্পের। ব্রিটেন, ফ্রান্স, ইতালি, জার্মানি ও সুইডেন একটি যৌথ বিবৃতিতে জানিয়েছে— ‘‘আমেরিকার সিদ্ধান্তকে আমরা মানি না। এটি নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব-বিরোধী এবং বিশ্বের ওই অংশের শান্তি রক্ষার ক্ষেত্রে খুবই অস্বস্তিকর।’’

তাদের বক্তব্য, জেরুসালেমের পরিচয় ঠিক কী হবে, সেটা ইজরায়েল ও প্যালেস্তাইনের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে, চুক্তিপত্র স্বাক্ষর করে স্থির করা উচিত। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সব দেশের অবস্থান বরাবরই এক— জেরুসালেমকে ইজরায়েল ও প্যালেস্তাইন, দুই দেশেরই রাজধানী ঘোষণা করা হোক। সেটা না করলে আখেরে জেরুসালেমের সার্বভৌমত্ব বজায় রাখা সম্ভব নয়। দিন দুয়েক আগে ইইউ-এর বিদেশনীতি বিষয়ক দফতরের প্রধান ফেডেরিকা মোঘেরিনিও এ কথা জানিয়েছিলেন।

এ প্রসঙ্গে মার্কিন প্রতিনিধি নিকি হ্যালির বক্তব্য, ওই দু’দেশের সীমান্ত নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি ট্রাম্প। আর জেরুসালেমের সার্বভৌমত্ব যে ইজরায়েল ও প্যালেস্তাইনকে আলোচনার মাধ্যমে বজায় রাখতে হবে, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। হ্যালির কথায়, ‘‘আমরা জানতাম, প্রশ্ন উঠবেই। কিন্তু আমাদের এই সিদ্ধান্ত শান্তি প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। ভয়ে পিছিয়ে গিয়ে তো কোনও লাভ নেই। বাস্তবে যে পরিস্থিতি, আমাদের সিদ্ধান্তে সেটাই প্রতিফলিত হয়েছে।’’

বক্তা: নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে নিকি হ্যালি।

কিন্তু হ্যালির কোনও কথাতেই কোনও কাজ হয়নি। বরং গোটা বৈঠকে একবগ্গা থেকেছে বাকি দেশগুলো। এই প্রথম কোনও আন্তর্জাতিক সংগঠনের বৈঠকে এ ভাবে একঘরে হয়ে যেতে দেখা গেল আমেরিকাকে।

বাস্তবের ছবিটাও তাই। শান্তি তো দূরস্থান, গত কাল দিনভর বিক্ষোভ দেখিয়েছেন প্যালেস্তাইনিরা। ইজরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে প্রাণ গিয়েছে দুই বিক্ষোভকারীর। গত কাল গাজা ভূখণ্ডে রকেট হেনেছিল প্যালেস্তাইন। তার জবাব দিতে আজ গাজায় পাল্টা রকেট হানা চালিয়েছে ইজরায়েল। নিহত হয়েছেন দুই প্যালেস্তাইনি, জানিয়েছে সে দেশের সরকার। ইজরায়েলের সেনাবাহিনীর অবশ্য দাবি, প্যালেস্তাইনের রাজনৈতিক জঙ্গি সংগঠন হামাস-এর ঘাঁটি ভাঙতে ওই হামলা চালানো হয়েছে। গত দু’দিনের বিক্ষোভে তিনশোরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। অনেকের আঘাত গুরুতর। ভয়াবহ অবস্থা পশ্চিম ভূখণ্ড, গাজা ও জেরুসালেমের। কূটনীতিকেরা বলছেন, যুদ্ধ বেঁধে গিয়েছে।

এই সব কিছুর জন্য ট্রাম্পকে দুষছে প্যালেস্তাইন। আজও নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে প্যালেস্তাইনের স্থায়ী পর্যবেক্ষক রিয়াদ মনসুর বলেন, ‘‘ট্রাম্পের ৬ ডিসেম্বরের ঘোষণা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমেরিকার জন্যেই এ ভাবে উত্তেজনা ছড়িয়েছে, পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। জল আরও বহু দূর গড়াবে।’’ ইজরায়েল অবশ্য বলেই চলেছে— ‘‘আমেরিকার এমন সাহসী সিদ্ধান্তের জন্য আমরা কৃতজ্ঞ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE