সুগভীর এই সামুদ্রিক রন্ধ্রের তলদেশে কি জীবজগতের কোনও রহস্য উন্মোচনের অপেক্ষায়?
বিশ্বের ‘গভীরতম’ সামুদ্রিক রন্ধ্র! এবং তাকে কেন্দ্র করে আবার শিরোনামে সেই দক্ষিণ চিন সাগর। চিন এই সুগভীর ব্লু হোলকে ‘ড্রাগন রন্ধ্র’ বলছে। ব্লু হোলটির অবস্থান বিতর্কিত প্যারাসেল আইল্যান্ডসের মাঝখানে।
চিনের সরকারি সংবাদমাধ্যম জিনহুয়া জানিয়েছে, প্যারাসেল আইল্যান্ডসের মাঝে যে ব্লু হোলটি সম্প্রতি খুঁজে পাওয়া গিয়েছে, তার গভীরতা ৯৮৭ ফুট। চিনের এই দাবি যদি সত্য হয়, তা হলে এই ব্লু হোল পৃথিবীর সবচেয়ে গভীর সামুদ্রিক রন্ধ্র। এত দিন পর্যন্ত বাহামাসের ডিন’স ব্লু হোলকে গভীরতম মনে করা হত। কিন্তু তার গভীরতা ৬৬৩ ফুট।
ব্লু হোল কী?
সমুদ্রের মাঝে বা কোনও দ্বীপের আশেপাশে দৈত্যাকার রন্ধ্রকে ব্লু হোল বলা হয়। সমুদ্রের স্বাভাবিক গভীরতার চেয়ে এই ব্লু হোল গুলির গভীরতা অনেক বেশি হয়। বড়সড় গর্তের মতো আকারের এই সব ব্লু হোলের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত সূর্যালোক পৌঁছয় না। ফলে এর গর্ভ অন্ধকার থাকে এবং তার জলকে দেখে মনে হয় অনেক বেশি গাঢ় নীল। আকাশ থেকে সমুদ্রে চোখ রাখলেও আলাদা করে ব্লু হোলের অস্তিত্ব বোঝা যায়, কারণ ওই সামুদ্রিক রন্ধ্রগুলির উপরের জলভাগকে, আশপাশের জলভাগের চেয়ে বেশি নীল দেখায়। সেই কারণেই এই সামুদ্রিক রন্ধ্রগুলির নাম ব্লু হোল।
ড্রাগন রন্ধ্র নাম কেন?
প্যারাসেল আইল্যান্ডের মাঝে অবস্থিত এই ব্লু হোল যে নতুন আবিষ্কৃত হয়েছে তা নয়। শতকের পর শতক ধরে ওই ব্লু হোলের অস্তিত জানা ছিল। কিন্তু তার গভীরতা যে এত বেশি, তা সদ্য জানা গিয়েছে। চিনের মৎস্যজীবীদের বিশ্বাস, চিনা উপকথায় বর্ণিত মাংকি কিং তাঁর স্বর্ণদণ্ডটি এই সামুদ্রিক রন্ধ্রের মধ্যেই খুঁজে পেয়েছিলেন। প্যারাসেল আইল্যান্ডসের মধ্যে অবস্থিত এই সামুদ্রিক রন্ধ্রের বিপুল গভীরতার কারণেই একে ‘ড্রাগন রন্ধ্র’ নামে ডাকছে চিন।
বিজ্ঞানীদের কাছে কেন গুরুত্বপূর্ণ ড্রাগন রন্ধ্র?
তবে শুধু চিনা উপকথায় নয়, বৈজ্ঞানিক গবেষণার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে চলেছে ড্রাগন রন্ধ্র। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব দক্ষিণ চিন সাগরের উপর কতটা পড়েছে, তা খতিয়ে দেখতে ড্রাগন রন্ধ্রের গভীরের জীবজগৎ অনেকটা সাহায্য করবে বলে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন। গত ১০ হাজার বছর ধরে বা তারও আগে থেকে এ পর্যন্ত পৃথিবীর জলবায়ু কী ভাবে বদলেছে, জলস্তর কী ভাবে বেড়েছে, তার প্রভাব সামুদ্রিক জীবের উপর কী ভাবে পড়েছে, কতটা বিবর্তন হয়েছে— এই সব কিছুর রেকর্ড ওই ব্লু হোলের মধ্যে সংরক্ষিত রয়েছে বলে চিনা সমুদ্রবিজ্ঞানীরা মনে করছেন। ইতিমধ্যেই ড্রাগন রন্ধ্রে ২০টি প্রজাতির মাছের সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু এই সব মাছ রন্ধ্রের উপরের দিকে থাকে। ৩৩০ ফুটের বেশি গভীরে অক্সিজেন পৌঁছয় না। তাই সেখানে মাছ থাকে না। তবে ড্রাগন রন্ধ্রের গভীরে জীবজগতের অন্য নানা রহস্য উন্মোচনের অপেক্ষায় থাকতে পারে বলে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন।
আরও পড়ুন: প্যারাশুট ছাড়া ২৫,০০০ ফুট ওপর থেকে ঝাঁপ! তারপর কী হল দেখুন...
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy