Advertisement
E-Paper

ভারত যতই ভাল খেলুক ফাইনালে ওদের দেখছি না

তিনি বহু বছর মিডিয়া থেকে দূরে। ইন্টারভিউ দেন না। রেডিও বা টিভিতে বিশেষজ্ঞর মতামত দেওয়াও বন্ধ করে দিয়েছেন। এই সত্তর বছর বয়সে পুরোটাই অবসৃত। যদিও সিডনিতে খেলা দেখতে যান। সিডনি ক্রিকেট মাঠে তো ক’দিন আগেও তাঁর নামে স্ট্যান্ড ছিল— ডগ ওয়াল্টার্স স্ট্যান্ড। টেস্ট ক্রিকেটে ৪৮ গড় আর তখনকার দিনে ১৫ সেঞ্চুরি নিয়ে তিনি বিদায় নেন। যা দ্বিতীয় ব্র্যাডম্যান হিসেবে তাঁর প্রাথমিক পরিচিতির সঙ্গে একেবারেই মানানসই নয়।

গৌতম ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০১৫ ০৩:১৫
১৯৭২। লন্ডনে ইয়ান চ্যাপেলের   (ডান দিকে) সঙ্গে ডগ ওয়াল্টার্স।

১৯৭২। লন্ডনে ইয়ান চ্যাপেলের (ডান দিকে) সঙ্গে ডগ ওয়াল্টার্স।

তিনি বহু বছর মিডিয়া থেকে দূরে। ইন্টারভিউ দেন না। রেডিও বা টিভিতে বিশেষজ্ঞর মতামত দেওয়াও বন্ধ করে দিয়েছেন। এই সত্তর বছর বয়সে পুরোটাই অবসৃত। যদিও সিডনিতে খেলা দেখতে যান। সিডনি ক্রিকেট মাঠে তো ক’দিন আগেও তাঁর নামে স্ট্যান্ড ছিল— ডগ ওয়াল্টার্স স্ট্যান্ড। টেস্ট ক্রিকেটে ৪৮ গড় আর তখনকার দিনে ১৫ সেঞ্চুরি নিয়ে তিনি বিদায় নেন। যা দ্বিতীয় ব্র্যাডম্যান হিসেবে তাঁর প্রাথমিক পরিচিতির সঙ্গে একেবারেই মানানসই নয়। তাঁর আকর্ষণীয় লাইফস্টাইল নিয়ে অবশ্য পরবর্তী কালে আলোচনা থেকেই গিয়েছে। বিয়ারের নেশা। দিনে পঞ্চাশটা করে সিগারেট খাওয়া। এই ফোন ইন্টারভিউয়ের জন্য যখন পাওয়া গেল, তখনও তিনি পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ায় একদল বন্ধুর সঙ্গে বেড়াচ্ছেন। টিভি দেখছেন মাঝেমধ্যে। রোববার অবশ্য গোটা দিন দেখেননি। টিভি নেটওয়ার্ক এরিয়ার বাইরে ছিলেন বলে। বরাবর অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটমহলে তিনি বাড়তি শ্রদ্ধা পান ঠোঁটকাটা অপ্রিয় সত্যবাদী বলে। কথা বলে মনে হল আজও একই রকম রয়েছেন...

প্রশ্ন: আপনি বললেন পারথের কাছাকাছি। সিডনি ফিরবেন না সেমিফাইনালের জন্য?

ওয়াল্টার্স: মনে হচ্ছে না। ঘুরতে এসেছি। তার আগে ফেরা উচিত নয়। তবে সিডনি টেস্ট দেখতে গেছিলাম।

প্র: বিশ্বকাপ দেখছেন?

ওয়াল্টার্স: বেশ কিছু ম্যাচ দেখেছি। সব সময় দেখা হচ্ছে না।

প্র: ভারতের পারফরম্যান্স নিয়ে দেখছেন তো অস্ট্রেলিয়ায় সাড়া পড়ে গিয়েছে। ছ’টায় ছ’টাই দারুণ খেলে জিতেছে।

ওয়াল্টার্স: হ্যাঁ, ভারত ফাইনালি অস্ট্রেলিয়ায় এত মাস কাটানোর পর পরিবেশের সঙ্গে পুরো মানিয়ে নিতে পেরেছে। সেটাই ধরা পড়ছে ওদের পারফরম্যান্সে।

প্র: ধোনির ইনিংস কেমন দেখলেন?

ওয়াল্টার্স: আমি ধোনির খুব ভক্ত নই। আমার পছন্দের প্লেয়ার হচ্ছে কোহলি। ওয়েট করে আছি কবে কোহলি ক্যাপ্টেন হবে আর ওর নেতৃত্বের ধরনটা দেখব।

প্র: সে কী?

ওয়াল্টার্স: হ্যাঁ, আমি শুধু জেতা-হারা দেখি না। খেলার ভঙ্গিটা, তার ব্যাকরণ, তার ডমিনেট করতে চাওয়া-না চাওয়া সব দেখি। কোহলির মধ্যে সেটা আছে আমি অ্যাডিলেড টেস্টে দেখে নিয়েছি।

প্র: সচিন সম্পর্কে এত অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটারের মন্তব্য পড়েছি। আপনি কোথাও কিছু বলেছেন বলে দেখিনি। কোহলির মতোই সচিন নিশ্চয়ই আপনার খুব প্রিয়?

ওয়াল্টার্স: না, আমার দেখা সেরা ইন্ডিয়ান ব্যাটসম্যান সুনীল গাওস্কর। রেস্ট অব দ্য ওয়ার্ল্ডের হয়ে গাওস্কর আমাদের সঙ্গে খেলতে এসেছিল। লিলি ওকে খেলতেই দেয়নি। তবু একটা ম্যাচে ব্যাট করেছিল আমার আজও মনে আছে। সচিন কোনও সন্দেহ নেই স্ট্যাটিস্টিক্সের সম্রাট। রান বাড়ানোর রাজা। কিন্তু আমার ওই টাইপটা পছন্দ নয়।

প্র: বলছেন কী, ব্র্যাডম্যান নিজে তো বলেছেন সচিনের খেলার ভঙ্গি ওঁর মতো ছিল?

ওয়াল্টার্স: কী করে বলেছিলেন কে জানে। ব্র্যাডম্যানের সময় তো টিভি ছিল না। উনি কী করে মনে করতে পারলেন কী ভঙ্গিতে খেলতেন?

প্র: পুরনো ফিল্ম আছে তো?

ওয়াল্টার্স: ধুর ওটাতে কি বোঝা যায়?

প্র: আপনাকেও তো দীর্ঘ দিন ধরে দ্বিতীয় ব্র্যাডম্যান বলা হয়েছে।

ওয়াল্টার্স: বোগাস! ব্র্যাডম্যান একজনই। তিনি অনন্য। কেউ ধারেকাছে নেই। সচিন তো নয়ই। এক জনের গড় ৯৯, এক জনের ৫৩। আপনারা কী করে তুলনা করেন?

প্র: আমরা করি কোথায়? ব্র্যাডম্যান নিজেই তো করে গিয়েছেন!

ওয়াল্টার্স: কী করে করেছিলেন আমি জানি না। আমার মনে হয় ওটা ওই হয় না ঠাকুর্দা নাতির প্রতি অপত্য স্নেহে আবেগ দিয়ে কথা বলেন, সেই রকম।

প্র: এটা পড়লে কিন্তু সচিন ভক্তরা প্রচণ্ড খেপে যাবেন!

ওয়াল্টার্স: দেখুন আমার কোনও ব্যক্তিগত রাগ-টাগ নেই। বেচারা ওকে বলেছেন তার প্রচারের আলো ও কেন পাবে না? কাল আমি একটা ক্রিকেট টিম করলে জেতার জন্য আমিও সচিনকে নেব। খুঁটে থেকে থেকে এতগুলো রান করবে। সেটা তো দরকার। ব্যাটসম্যানদের মধ্যে হয় না হিসেবি কাজের লোক, ও সেটা। কিন্তু আপনি যদি আমায় জিজ্ঞেস করেন আপনার বাছাই করা সেরা দশ ব্যাটসম্যানের মধ্যে সচিন পড়বে কি না, সিম্পল অ্যান্সার ‘নো’।

প্র: কী বলছেন, প্রথম দশে তেন্ডুলকর থাকবেন না? যাঁকে অস্ট্রেলিয়া এত সম্মান দিয়েছে বিভিন্ন সময়ে!

ওয়াল্টার্স: না, প্রথম দশের নামগুলো আমার কাছে অনেক দামি। ব্র্যাডম্যান, সোবার্স, পোলক, ভিভ, ব্যারি রিচার্ডস, গিলক্রিস্ট, গাওস্কর।

প্র: দশ হল না তো। সাতটা হয়েছে।

ওয়াল্টার্স: আর একটু ভাবলে মনে পড়ে যাবে। কিন্তু সচিন নেই।

প্র: আপনার সমকালীন কোনও কোনও ক্রিকেটার ডন সম্পর্কে এত বিরক্ত যে, বলে থাকেন প্যাকার সিরিজ তৈরিই হয়েছিল ক্রিকেট বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে ব্র্যাডম্যান প্লেয়ারদের পিছনে টাকা খরচ করতে না চাওয়ায়।

ওয়াল্টার্স: কিছুটা সত্যি। কিন্তু পুরোটা নয়। উনি তো বোর্ডে ছিলেন তিন বছর। আগে-পরে বাকিরা কী করছিল? তাঁর সঙ্গে যারা কমিটিতে ছিল তারা কিছু বলেনি কেন?

প্র: কিন্তু ইয়ান চ্যাপেল যে সেই রাগে এক হাতে বিয়ারের গ্লাস, এক হাতে সিগার নিয়ে ব্র্যাডম্যানের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন।

ওয়াল্টার্স: ইয়ান আর গ্রেগের সঙ্গে ডনের তিক্ততা পুরনো পারিবারিক। ওর দাদু ভিক্টর রিচার্ডসনের সঙ্গে ঝামেলার জের। আমরা বাকি টিম মোটেও ব্র্যাডম্যান সম্পর্কে চ্যাপেলদের সেই ভাবনার শরিক ছিলাম না।

প্র: আপনাকে যে দ্বিতীয় ব্র্যাডম্যান বলা হত, তাতে উনি প্রথম ব্র্যাডম্যান খেপে যাননি?

ওয়াল্টার্স: একেবারেই না। বরং উনি বলেছিলেন তোমার কোনও টেকনিক্যাল অসুবিধে হলে আমার কাছে এসো।

প্র: গেছিলেন?

ওয়াল্টার্স: ভয়ে ও-দিক মাড়াইনি। একটা অদ্ভুত ব্যক্তিত্ব ছিল ওঁর। কাছে ঘেঁষতে ভয় লাগত।

প্র: আপনার দেখা সেরা ক্যাপ্টেন কে?

ওয়াল্টার্স: অবশ্যই ইয়ান চ্যাপেল। হাজার মাইলের মধ্যে কেউ নেই।

প্র: কেন?

ওয়াল্টার্স: ক্রিকেট আর ক্রিকেটারদের এত ভাল বুঝতে আমি আর কাউকে দেখিনি।

প্র: এসসিজিতে যাঁর মূর্তি রয়েছে আপনারই শহরের সেই স্টিভ ওয়?

ওয়াল্টার্স: প্রশ্নই ওঠে না। মার্ক টেলরের নামটা তবু বিবেচনা হতে পারে। মার্কও দারুণ ক্যাপ্টেন ছিল।

প্র: কিন্তু স্টিভের ক্যাপ্টেন্সি রেকর্ড তো দারুণ!

ওয়াল্টার্স: ও একটা দারুণ টিম পেয়েছিল। সেটা আপন মেজাজে নিজের কাজ করে গিয়েছে। স্টিভের বড় কোনও ভূমিকা ছিল না। আমার দেখা গত কুড়ি বছরের সেরা দুই প্লেয়ার দু’জনেই ওর টিমে ছিল। শেন ওয়ার্ন আর অ্যাডাম গিলক্রিস্ট।

যুগলবন্দির সেই বিখ্যাত ফ্রেম। ১৯৯৮।

প্র: বিশ্বকাপ কেমন লাগছে?

ওয়াল্টার্স: অত্যধিক লম্বা লাগছে। দিনে একটা করে খেলা দেওয়ার কোনও মানেই হয় না। আমার কথা হল, দিনে তিনটে করে খেলা দাও। তিন সপ্তাহে ব্যাপারটা শেষ করো।

প্র: আর কোনও বদল?

ওয়াল্টার্স: ব্যাটসম্যানরা হাস্যকর সুবিধে ভোগ করছে। আমার সুপারিশ হল ব্যাটসম্যানদের মোট রান থেকে ১৮ পার্সেন্ট করে রান কাটো। করে নেট রানের হিসেব করো।

প্র: হঠাৎ ১৮ পার্সেন্ট কেন?

ওয়াল্টার্স: কারণ বাউন্ডারি চার মিটার করে এগিয়ে আনা হয়েছে। ওটা প্লেয়িং এরিনা থেকে শতকরা ১৮ ভাগ কমানো। তা হলে রানটাও সমপরিমাণে কমা উচিত। বাউন্ডারি ঠিকঠাক থাকলে অনেকে তো লাইনের ধারে কট হয়। রান ক্যালকুলেশনে সেটা মাথায় রেখে একটা অ্যাডজাস্টমেন্ট তো করতে হবে। এটা কী কথা যে ব্যাটসম্যান সব সুবিধে পেয়ে যাবে?

প্র: আজকের রাত্তিরের পর ওয়ার্ল্ড কাপ তো জমে গেল। অনেকে কল্পনা করছেন অ্যাডিলেডে যদি পাকিস্তান হারিয়ে দিতে পারে অস্ট্রেলিয়াকে!

ওয়াল্টার্স: মনে হয় না অস্ট্রেলিয়াকে হারানো এত সহজ হবে বলে।

প্র: মাইকেল ক্লার্কের বিশ্বকাপে খেলা নিয়ে এত বিতর্ক হচ্ছে। আপনার কী মত?

ওয়াল্টার্স: মতের আবার কী আছে? মাইকেল আমাদের সেরা ব্যাটসম্যান। সেরা ক্যাপ্টেন। ও খেলবে তার মধ্যে আবার বিতর্ক কীসের?

প্র: উপমহাদেশীয় সমর্থকদের আশা, ক্লার্ক নিয়ে টিমের অভ্যন্তরীণ সমস্যা ছাপ ফেলবে অস্ট্রেলিয়ার পারফরম্যান্সে। পাকিস্তান সেটা কাজে লাগিয়ে সেমিফাইনাল উঠে যাবে ভারতের সঙ্গে।

ওয়াল্টার্স: মনে হয় না। আমি ফাইনাল দেখছি অস্ট্রেলিয়া-সাউথ আফ্রিকা।

প্র: ইন্ডিয়া?

ওয়াল্টার্স: মনে হয় না সিডনিতে অস্ট্রেলিয়াকে ওরা হারাতে পারবে বলে।

প্র: ফাইনালে?

ওয়াল্টার্স: সাউথ আফ্রিকা লড়বে কিন্তু আমাদের বোলিং অনেক ভাল। আমার ধারণা, আমরা জিতব।

doug walters interview sachin tendulkar world cup 2015 gautam bhattacharyay
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy