ঘরের মাঠের সুবিধা বা হোম অ্যাডভান্টেজ নিতে অভ্যস্ত সব দেশই।
আমাদের দল যখন ইংল্যান্ড বা অস্ট্রেলিয়ায় যায়, তখন কি আর তাদের ঘূর্ণি উইকেট দেওয়া হয়? সেখানে পেস সহায়ক উইকেটেই খেলতে হয় আমাদের ব্যাটসম্যানদের।
ক’দিন ধরে এই যুক্তিগুলো শুনে আসছি। যেগুলো উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়। সত্যিই তো, আমরা আমাদের দলের শক্তি অনুযায়ী উইকেট বানাব না-ই বা কেন?
কিন্তু সেই উইকেটে যদি পাঁচ দিনের ম্যাচ তিন দিনেই শেষ হয়ে যায়, দু’দিনে তিরিশের বেশি উইকেট পড়ে, তা হলে তা দুশ্চিন্তার বিষয় বই কি? নাগপুরে তো একেবারে আন্ডার প্রিপেয়ার্ড উইকেট দেখছি। প্রথম দিন থেকেই বনবন করে বল ঘুরছে। বলে বলে স্কোয়ার টার্ন করাচ্ছে স্পিনাররা। বিদেশি ব্যাটসম্যানরা না হয় ঘূর্ণি পিচে স্পিন খেলতে স্বচ্ছন্দ নয়। কিন্তু আমাদের ব্যাটসম্যানরাও তো এই উইকেটে দাঁড়াতে পারছে না। বিশ্বের এক নম্বর টেস্ট খেলিয়ে দল ৭৯ রানে অল আউট! ভারতীয়রা দু’দিনে দু’বার আউট। তা হলে তো বলতেই হবে এটা ব্যাট করার উপযোগী উইকেটই না।
টেস্ট ক্রিকেট মানে হল ব্যাটসম্যান ও বোলারদের সমানে সমানে টক্কর। ব্যাটে-বলে তুমুল লড়াই। ম্যাচের বয়স যত বাড়ে, উইকেটের চরিত্র তত বদলাতে শুরু করে এবং সেই বদলে যাওয়া উইকেটের চরিত্রের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে ব্যাটসম্যান ও বোলারদের খেলে যেতে হয়। এই জন্যই তো এর নাম টেস্ট। ক্রিকেটারদের সবচেয়ে বড় পরীক্ষা।
কিন্তু এ কোন টেস্ট ক্রিকেট? যেখানে শুধু স্পিনাররাই রাজা আর তাদের দাপটেই টেস্টের ফয়সালা হয়ে যাচ্ছে দু-তিন দিনে? দ্বিতীয় দিনেই বুঝে ফেলা যাচ্ছে, কে ম্যাচ জিততে চলেছে। টেস্ট ক্রিকেটের এর চেয়ে খারাপ বিজ্ঞাপন আর কী হতে পারে?
এমনিতেই ইদানীং লোকে টেস্ট ক্রিকেট দেখতে মাঠে আসে না। টেস্ট ক্রিকেটকে বাঁচানোর জন্য, মাঠে লোক টানার জন্য যেখানে বিশ্বের এক প্রান্তে গোলাপি বলে দিন-রাতের টেস্ট করিয়ে সনাতন ক্রিকেটকে বাঁচানোর চেষ্টা চলছে, বিশ্বের আর এক প্রান্তে তখন শর্টকাটে সিরিজ জেতার জন্য টেস্ট ক্রিকেটের বারোটা বাজানো হচ্ছে। কী অদ্ভূত বৈপরিত্য!
ঘরের মাঠের সুবিধা নেওয়া উচিত। এই ব্যাপারে কোনও আপত্তি নেই। ভারতের মাটিতে স্পিন সহায়ক উইকেট এর আগেও হয়েছে। কিন্তু সেগুলো কোনওটাই এ রকম আন্ডার প্রিপেয়ার্ড উইকেট নয়। এমন উইকেট বানাও, যেখানে অন্তত ব্যাটসম্যানরা প্রথম দু’দিন ক্রিজে দাঁড়াতে পারে। তৃতীয় বা চতুর্থ দিন থেকে বল ঘুরবে, এমন উইকেটও তো স্পিন সহায়ক। তাতে ব্যাটসম্যান ও বোলারদের যুদ্ধটা উপভোগ করা যায়। এখানে তো ক্রিকেটের মজাটাই নেই। আছে শুধু একতরফা সাফল্যের উল্লাস। লড়ে জেতো। তা হলেই তো জেতার আসল মজা। বিরাট কোহলিরা এটা কেন বুঝতে পারছে না, জানি না। এক দিন পিচ নিয়ে কিউরেটরের সঙ্গে ঝগড়া করল রবি শাস্ত্রী তো তার পর থেকেই ভাঙাচোরা উইকেট দেওয়া শুরু হল। এমনকী খোদ বোর্ড প্রেসিডেন্টের ঘরের মাঠেও এত খারাপ উইকেট!
এমন তো নয় যে, আমাদের দলে ভাল ব্যাটসম্যান, বোলার নেই। যথেষ্ট আছে। তা হলে এই শর্টকাট কেন?
কেন তাদের এমন উইকেট দিয়ে জোর করে জিতিয়ে দেওয়া হচ্ছে?
এই উইকেটে জেতার তৃপ্তি আদৌ আছে কি?
প্রশ্নগুলো থেকেই যাচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy