Advertisement
E-Paper

কোহালি নিয়ে ইংরেজ বিদ্রুপের মধ্যে ‘নাম্বার নাইনের’ রূপকথা

নাক উঁচু বলে ইংরেজদের বিশ্বজোড়া বদনাম আছে। আর তা যে কতটা অসম্মানসূচক, বুঝিয়ে গেল রবিবারের ওয়াংখেড়ে।

চেতন নারুলা

শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:৪১
ফের স্টোকসের উইকেটে বাড়তি উচ্ছ্বসিত বিরাট। -পিটিআই

ফের স্টোকসের উইকেটে বাড়তি উচ্ছ্বসিত বিরাট। -পিটিআই

নাক উঁচু বলে ইংরেজদের বিশ্বজোড়া বদনাম আছে। আর তা যে কতটা অসম্মানসূচক, বুঝিয়ে গেল রবিবারের ওয়াংখেড়ে।

প্রতিপক্ষের কেউ যাবতীয় প্রতিকূলতা সামলে যদি ডাবল সেঞ্চুরি করে, টিমের ন’নম্বর ব্যাটসম্যানকে নিয়ে যদি করে প্রায় আড়াইশো রানের পার্টনারশিপ, স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া কী হবে? ব্যাটসম্যানের কৃতিত্বের প্রতি সম্মান প্রদর্শন, মেনে নেওয়া আজকের মতো তুমি সেরা। কিন্তু টিমটার নাম ইংল্যান্ড তো, সম্মানের বদলে বিরাট কোহালিকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিতে তাদের পাঁচ মিনিটও লাগল না!

জেমস অ্যান্ডারসন তো কোহালির টেকনিক নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিলেন! মাঠে দাঁড়িয়ে ভারত অধিনায়কের দুর্ধর্ষ ২৩৫ দেখার পরেও। ম্যাচ থেকে সম্পূর্ণ হঠে যাওয়ার পরেও।

ভারতের রান ছুঁতে এখনও ৪৯ লাগবে ইংল্যান্ডের। ও দিকে হাতে পড়ে চার উইকেট। সিরিজ হার ইংরেজদের কপালে তো ঝুলছেই। তা কত তাড়াতাড়ি আসবে, সেটাই প্রশ্ন। কিন্তু ইংরেজ পেসার ভাঙবেন তবু মচকাবেন না। বরং উদ্ধত ভাবে বলে দেবেন, কোহালির টেকনিক কত উন্নত হয়েছে তা নিয়ে এখনও তাঁর সন্দেহ আছে!

‘‘জানি না কোহালির ব্যাটিং পাল্টেছে কি না। এখানে উইকেট এমনই যে, টেকনিক্যাল ভুলত্রুটি বোঝা সম্ভব নয়। উইকেট সে সব ঢেকে দিচ্ছে। এ সব পিচে সেই গতিটা নেই, যাতে উইকেটের পিছনে খোঁচা দেবে ব্যাটসম্যান। ইংল্যান্ডে যে ভাবে কোহালিকে আমরা আউট করতাম আর কী,’’ রবিবার খেলা শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে বলে দিলেন জেমস অ্যান্ডারসন। উপস্থিতদের চমকে দিয়ে।

ভারত অধিনায়ককে একহাত নিলেন অ্যান্ডারসন।

এটা সত্যি যে, বছর দু’য়েক আগের ইংল্যান্ড সফরে দুঃসময় চলছিল কোহালির। বারবার এই অ্যান্ডারসনের বলেই খোঁচা দিয়ে আউট হচ্ছিলেন। কিন্তু সেই কোহালি আর এই কোহালি এক নন। দুনিয়াজোড়া ক্রিকেটাররা বলছেন, বিশেষজ্ঞরা বলছেন। কিন্তু অ্যান্ডারসনকে সে সব বোঝাবে কে? ইংরেজ পেসার ওটুকুতেই শেষ করেননি। আরও বলতে থাকেন, ‘‘যে সব পিচে ইংল্যান্ডের মতো সিম মুভমেন্ট নেই, পেস নেই, সেখানে কোহালির খেলাটা একদম মানানসই। ও স্পিনটা খুব ভাল খেলে। আর সুযোগ দিলে তো কথাই শেষ, কপালে শাস্তি লেখা থাকবে।’’ সঙ্গে আবার যোগ করলেন, ইংল্যান্ড এখনও একশো রানের লিড নিয়ে ভারতকে চাপে ফেলার চেষ্টা করবে।

কোহালির টেকনিক নিয়ে প্রশ্ন এবং লিড নিয়ে ভারতকে চাপে ফেলার স্বপ্ন— অ্যান্ডারসনের দু’টো ব্যাপারই বেশ হতবাক করে দেওয়ার মতো। হতবাক করে দেওয়ার মতো অবশ্য আরও একটা ব্যাপার এ দিন ঘটে থাকল। ঘটালেন, জয়ন্ত যাদব।

কোহালির মাস্টারক্লাসের দিনে প্রচারের নিরিখে জয়ন্তের ইনিংসে সমান দাম পাবে না, জানা কথা। কিন্তু প্রচার দিয়ে তো আর ক্রিকেট খেলা হয় না। কে বলতে পারে, কোহালি হয়তো এতটা ভয়ঙ্কর ইনিংস খেলতেই পারতেন না উল্টো দিকে একটা জয়ন্ত যাদব না থাকলে। ন’নম্বরে ব্যাট করতে নেমে সেঞ্চুরি, অধিনায়কের সঙ্গে ২৪১ রানের পার্টনারশিপ, ইংল্যান্ডকে কোণঠাসা করতে-করতে রীতিমতো নখদন্তহীন করে ফেলা— জয়ন্ত এর প্রত্যেকটা এ দিন করে গিয়েছেন।

আর এ সবই তিনি কিন্তু করছেন অভিষেক টেস্ট সিরিজে!

কোহালি-জয়ন্ত মিলে এ দিন অষ্টম উইকেটে রেকর্ড পার্টনারশিপ করে ফেললেন। কুড়ি বছর আগে ইডেনে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে অষ্টম উইকেটে ১৬১ রান জুড়েছিলেন তৎকালীন ভারত অধিনায়ক মহম্মদ আজহারউদ্দিন এবং বর্তমান ভারতীয় কোচ অনিল কুম্বলে। জয়ন্ত তো ন’নম্বরে প্রথম ভারতীয় হিসেবে সেঞ্চুরিও করে ফেললেন।

প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি। রবিবার জয়ন্ত যাদব। -পিটিআই

পরে নিজের ইনিংস নিয়ে জয়ন্ত বলছিলেন, ‘‘এ দিন আমি চেষ্টা করছিলাম হাফসেঞ্চুরি করার জন্য। শুধু নিজের খেলাটা খেলতে চাইছিলাম। বাকিটা হয়ে গেল।’’

কথাটা যত সহজে বললেন ভারতীয় অফস্পিনার (নাকি অশ্বিনের মতো এঁকেও অলরাউন্ডার বলা উচিত), তত সহজ তাঁর ক্রিকেট জীবন নয়। এক মাস আগেও তাঁর কেরিয়ারের গ্রাফটা মসৃণ ছিল না। টিমের তিন নম্বর স্পিনার ছিলেন। পাঁচ বোলারে ভারত গেলে তবেই খেলার সম্ভাবনা থাকত। তিন টেস্ট ধরে নিয়মিত রান করেছেন জয়ন্ত, কিন্তু থেকে যেতে হয়েছে রবিচন্দ্রন অশ্বিনের ছায়ায়।

আজ সামনে চলে এলেন তিনি। টেস্টে নিজের প্রথম সেঞ্চুরিতে। ব্যাটিং অর্ডারে উপরে উঠতে ইচ্ছে করে না? জয়ন্ত বললেন, করে না। কারণ, জীবনের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরির মতো জীবনের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরিটাও ন’নম্বরে।

ঠিকই। পয়া ব্যাটিং পজিশন কেউ ছাড়তে চায়?

ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংস: ৪০০

ভারত প্রথম ইনিংস (আগের দিন ৪৫১-৭): কোহালি ক অ্যান্ডারসন বো ওকস ২৩৫, জয়ন্ত স্টাঃ বেয়ারস্টো বো রশিদ ১০৪, ভুবনেশ্বর ক ওকস বো রশিদ ৯, উমেশ ন.আ. ৭, অতিরিক্ত ১৬, মোট ৬৩১ অল আউট। পতন: ৩৯, ১৪৬, ২৬২, ২৭৯, ৩০৫, ৩০৭, ৩৬৪, ৬০৫, ৬১৫। বোলিং: অ্যান্ডারসন ২০-৫-৬৩-০, ওকস ১৬-২-৭৯-১, মইন ৫৩-৫-১৭৪-২, রশিদ ৫৫.৩-৫-১৯২-৪, বল ১৮-৫-৪৭-১, স্টোকস ১০-২-৩২-০, রুট ১০-২-৩১-২।

ইংল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংস: কুক এলবিডব্লিউ জাডেজা ১৮, জেনিংস এলবিডব্লিউ ভুবনেশ্বর ০, রুট এলবিডব্লিউ জয়ন্ত ৭৭, মইন ক বিজয় বো জাডেজা ০, বেয়ারস্টো ন.আ. ৫০, স্টোকস ক বিজয় বো অশ্বিন ১৮, বল ক পার্থিব বো অশ্বিন ২, অতিরিক্ত ১৭, মোট ১৮২-৬। পতন: ১, ৪৩, ৪৯, ১৪১, ১৮০, ১৮২। বোলিং: ভুবনেশ্বর ৪-১-১১-১, উমেশ ৩-০-১০-০, জাডেজা ১৮-৩-৫৮-২, অশ্বিন ১৬.৩-১-৪৯-২, জয়ন্ত ৬-০-৩৯-১।

Virat Kohli Controversy Anderson Jayant Yadav
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy