নদী-পাহাড় পেড়িয়ে যখন আদিত্যর সাইকেল ছুটে চলে তখন মনে হয় কোনও প্রতিবন্ধকতাই নেই। কিন্তু এক পা নিয়ে প্রথম সাইকেল চালাতে গিয়ে বার বার পড়ে যাচ্ছিলেন। পায়ের ক্ষত স্থান থেকে বে়রিয়ে আসছিল রক্ত। যন্ত্রনায় গুটিয়ে যাচ্ছিলেন, কিন্তু হাল ছাড়েননি।
দুর্ঘটনায় পা হারানোর পরও সাফল্যের স্বপ্ন দেখা যায়। দেখালেন আদিত্য। খুঁজে পাওয়া যায় সেই প্রতিবন্ধকতাকে জয় করেই এগিয়ে যাওয়ার পথ। গতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে সবাইকে ছাপিয়ে যাওয়ার অদম্য ইচ্ছে। দুর্ঘটনার পর আদিত্যও ডুবে গিয়েছিলেন হতাশায়। মনে হয়েছিল এই জীবনের কী মূল্য। একটা কথাই বদলে দিল জীবনটা। বলছিলেন সেই গল্প, ‘‘দুর্ঘটনার পর আমি খুব হতাশ হয়ে পরেছিলাম। আমার মনে হত সবাই আমাকে করুণার চোখে দেখছে। আর সেটা সব সময় আমার মাথায় ঘুরত। বাড়ি থেকে বেরনো ছেড়ে দিয়েছিলাম। একজন পোলিও আক্রান্ত মহিলাই বদলে দিলেন আমার মানসিকতা। উনি যখন আমার সঙ্গে কথা বললেন তখন তাঁর কথায় কোনও করুণা ছিল না।’’ তার পর থেকেই কাটতে শুরু করে আদিত্যর হতাশা। একটি পা হারানো যে কারও জীবনে আশীর্বাদের মতো নেমে আসতে পারে সেটা স্বপ্নেও কেউ ভাবেনি। কিন্তু এত বছর পর যখন সাফল্য তাঁর পায়ে লুটিয়ে পরছে তখন আদিত্য মেহতা এমনটাই মনে করছেন। প্যারা এশিয়ান সাইক্লিন চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে জোড়া রুপো আসার পরই বিশ্বাসটা আকাশ ছুঁয়েছিল।
আরও খবর পড়ুন: বক্সার হতে হতে হয়ে গেলেন ক্রিকেটার
কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী প্রদক্ষিণের স্বপ্ন নিয়ে বেরিয়ে পড়েছেন তিনি। ইতিমধ্যেই ১৪৫০ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে মুম্বই পৌঁছেছেন রবিবারই। লক্ষ্য অন্যান্য প্যারা অলিম্পিয়ানদের সাহায্যের জন্য ফান্ড তোলা। এখনও যখন সাফল্য আসে মনে পড়ে যায় ২০০৫ সালের সেই ঘটনার কথা। হাইওয়েতে বাইক নিয়ে যাওয়ার সময় উল্টোদিক থেকে একটি ট্রাক এসে ধাক্কা দেয় তাঁর বাইককে। বলছিলেন, ‘‘ট্রাকটি আমার পায়ের উপর দিয়ে চলে যায়। আমি পড়ে ছিলাম অনেকক্ষণ। সবাই পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছিল। কিন্তু ভাগ্যটাই শেষ কথা।’’ এখন তাঁর সাইকেল ছুটে চলে কখনও লন্ডন-প্যারিস কানেক্ট কখনও মানালি-খারদুঙ্গ লা পাস। লন্ডন-প্যারিস কানেক্টে তিনি সাইকেল চালিয়েছেন মোট ৫৩০০ কিলোমিটার। আর মানালি-খারদুঙ্গ লা বিশ্বের সর্বোচ্চ গাড়ি চলাচলের রাস্তা। কোনওটার উচ্চতা ৯০০০ ফিট কোনওটা ১৮৩৮০ ফিট। পাহাড়ের উচ্চতাকে ছাপিয়ে আদিত্যর স্বপ্ন আকাশ ছুঁয়েছে। সঙ্গে রয়েছে যে কোনও প্রতিবন্ধতাকে ছাপিয়ে যাওয়ার চ্যালেঞ্জ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy