রাকিটিচের কোলে মেসি। হালফিলে বার্সায় এ ছবি দেখা যায় হামেশাই।
মেসির এক নম্বর জায়গাটা কিন্তু নেইমারের জন্যই তোলা আছে বয়স এই আঠাশ। ইনিয়েস্তার অনুপস্থিতিতে এমএসএন-কে বল সাপ্লাই করার বড় দায়িত্বটা এখন তাঁর ঘাড়েই। বছর দু’য়েক আগে বার্সেলোনায় যোগ দিয়েই ত্রিমুকুট জিতেছিলেন। স্প্যানিশ কাপ, লা লিগা, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ। দোভাষীর দরকার হয় না, কারণ ইংরেজিটা ঝরঝরে বলতে পারেন। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ম্যাঞ্চেস্টার সিটির বিরুদ্ধে খেলতে যাওয়ার আগে সেই ইভান রাকিটিচ বার্সেলোনা অন্দরমহল, মেসি-নেইমার এবং নিজের স্বপ্ন নিয়ে সাক্ষাৎকারে যা যা বললেন...
প্রশ্ন: আপনার কাজটা হল বিশ্বের সেরা অ্যাটাক ফোর্সকে বল সাপ্লাই করা। এত দিন ইনিয়েস্তাকে পাশে পেয়েছেন। উনি এখন চোটের জন্য বাইরে। কতটা চাপ আপনার উপর?
রাকিটিচ: ইনিয়েস্তার মতো প্লেয়ার বিশ্বে এক জনই হয়। ওর জায়গা কেউ নিতে পারে না। ইনিয়েস্তা না থাকায় আমাদের খেলার স্টাইল একটু বদলেছে। তবে পরিস্থিতি সামলে নেওয়ার মতো টিম আছে আমাদের। আর আমার কাছে ব্যাপারটা চাপে পড়ার চেয়েও বেশি করে দায়িত্ব নেওয়ার সুযোগ।
প্র: এফসি বাসেলে শুরু। তার পর শাল্কে, সেভিয়া হয়ে বার্সেলোনা। বার্সেলোনার খেলার স্টাইলের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সমস্যা হয়নি?
রাকিটিচ: বার্সেলোনার মিডফিল্ডে নিজের জায়গা করে নিতে পারাটা একটা স্পেশ্যাল ব্যাপার। তবে আমি সব সময় চেয়েছিলাম খেলাটাকে উপভোগ করতে। আর এই সব মেগাস্টারের কাছ থেকে যতটা পারা যায় শিখতে। আরও চেয়েছিলাম যে ক্লাব, কোচ, টিমমেটরা যেন আমার উপর ভরসা রাখতে পারে। যেন বলতে পারে, এই ছেলেটার ফুটবল বার্সেলোনার কাজে লাগবে।
প্র: বার্সেলোনায় খেলার চাপ কতটা?
রাকিটিচ: বিশ্বের সেরা ক্লাবে খেলার চাপ তো একটা থাকবেই। এখানে আসার প্রথম দু’সপ্তাহের মধ্যেই আমি বুঝে যাই, বার্সেলোনায় খেলা মানে আপনাকে শুধু জিতলেই হবে না। জিততে হবে স্পেশ্যাল ভাবে। স্কোরলাইন কী হল, সেটা বড় কথা নয়। কিন্তু কিছু একটা স্পেশ্যাল করতেই হবে প্রত্যেক ম্যাচে। যা লোকে মনে রেখে দেবে। আর এই চাপটা কিন্তু আপনাকে মেরে ফেলতে পারে। তাই একটাই রাস্তা। চাপটাকে পজিটিভ ভাবে নিতে হবে। খেলাটাকে উপভোগ করতে হবে। আর আপনি যদি বার্সেলোনায় এসে ফুটবলটা উপভোগ করতে না পারেন, তা হলে আর কোথায় করবেন?
প্র: সেভিয়ার হয়ে বার্সেলোনার বিপক্ষেও আপনি খেলেছেন। কী রকম অভিজ্ঞতা হয়েছিল?
রাকিটিচ: ঈশ্বরকে ধন্যবাদ ওদের বিরুদ্ধে আর খেলতে হয় না। বার্সেলোনা পৃথিবীর সেরা টিম। ইফ ইউ কান্ট বিট দেম বি আ পার্ট অব দেম। বার্সাকে হারাতে না পারলে ওদের টিমে জয়েন করে নাও। ব্যস।
প্র: মেসি, নেইমার, সুয়ারেজের মতো কিংবদন্তিদের সঙ্গে ড্রেসিংরুম শেয়ার করতে পারার অভিজ্ঞতাটা কী রকম?
রাকিটিচ: বিশ্বের সেরা প্লেয়ারদের নাম বললেন আপনি। ম্যাচের পর ম্যাচ ওরা নিজেদের সেরাটা দিতে পারে। অলৌকিক কাণ্ড ঘটাতে পারে। ওদের কাছ থেকে দেখা, ওদের পাশে খেলতে পারা— দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা। আমি সব সময় চেষ্টা করি ওরা কী করছে, সেগুলো দেখার। ওরা কী ভাবে ট্রেনিং করছে, কী খাচ্ছে, কী রুটিন ফলো করছে, এ সব। আর মাঠে নেমে ওদের যতটা পারি বল বাড়িয়ে সাহায্য করি।
প্র: আপনি তো অনেক ম্যাচে গোলও করেছেন। এমন সময়, যখন বিশ্বের সবচেয়ে মারাত্মক অ্যাটাকিং ফোর্স ব্যর্থ হয়েছে।
রাকিটিচ: লোকে ভুলে যায় যে, এই তিন জনও মানুষ। কখনও কখনও এমন সময় আসবে যখন ওরা গোল করতে পারবে না। সেই সব ম্যাচে আমি বা আমার টিমের অন্য কাউকে এগিয়ে এসে বলতে হবে, ‘আজ তোমরা পারছ না, ঠিক আছে। আজ আমরা তোমাদের কাজটা করে দেব।’ এ রকম দায়িত্ব আমি সেভিয়াতেও নিয়েছি। গোলের কাছাকাছি থাকতে আমি পছন্দ করি। আর সুযোগ পেলে গোলটাও করি। করে যাব। সামনেই চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ম্যাঞ্চেস্টারের বিরুদ্ধে খেলা। সুযোগ পেলে ওখানেও গোলটা করব।
প্র: বার্সেলোনার বাইরে যাচ্ছি না। তাই প্রশ্নটা এ রকম, মেসি না নেইমার— আপনার কাছে বিশ্বের সেরা প্লেয়ার কে?
রাকিটিচ: (হেসে ফেলে) দু’জন দু’রকমের প্লেয়ার। তবে এই মুহূর্তে যদি দেখেন, তবে বিশ্বের সেরা প্লেয়ার অবশ্যই মেসি। কিন্তু নেইমারও দুর্দান্ত খেলছে। আমি নিশ্চিত, এক দিন মেসির জায়গাটা নেইমারই নেবে। ওর বয়স অল্প, সামনে প্রচুর খেলা পড়ে আছে। এই ভাবে খেলে যেতে পারলে ওকে আটকাবে কে?
প্র: এখন বিশ্বের সব টিম চায় এশিয়ান মার্কেটটা ধরতে। ভারতের মতো দেশে বার্সেলোনা আর আপনার প্রচুর ভক্ত আছে। সোশ্যাল মিডিয়া দেখলেই সেটা বোঝা যায়। এটা নিয়ে কী বলবেন?
রাকিটিচ: হ্যাঁ, ব্যাপারটা আমরা জানি। এই তো গত সপ্তাহে এই নিয়ে আমাদের কথা হচ্ছিল। আমি আগে সে ভাবে সোশ্যাল মিডিয়া ফলো করতাম না। এখন বুঝতে পারছি, কত দূর দূর জায়গা থেকে লোকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছে। বছর দু’তিন আগেও আমার ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম এ সব কিছু ছিল না। বার্সেলোনায় আসার পর আস্তে আস্তে বুঝতে পারি, ফ্যানদেরও কিছু ফিরিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব আছে আমাদের।
প্র: দু’বছর বাদে রাশিয়ায় বিশ্বকাপ। আপনার দেশ ক্রোয়েশিয়া কী রকম করবে বলে আপনার মনে হয়?
রাকিটিচ: ক্লাবের হয়ে আমি সেরা ট্রফিগুলো জিতেছি। কিন্তু দেশের হয়ে এখনও পারিনি। ক্রোয়েশিয়ায় ম়ডরিচ, মান্দজুকিচের মতো প্রতিভাবান ফুটবলার আছে। ইউরোতেও আমরা খারাপ খেলিনি। তাই এটা অন্তত বলতে পারি আমাদের দলটা কিন্তু বেশ ভাল।
প্র: নিজেকে ফুটবলার হিসেবে কী ভাবে দেখেন?
রাকিটিচ: এমন একজন যে জীবনে ফুটবল ছাড়া কিছু বুঝল না। সকালে ঘুম থেকে ওঠা আর রাতে শুতে যাওয়ার মাঝে ফুটবল ছাড়া কিছু ভাবি না। জানি ফুটবলারের জীবনটা লম্বা নয়। তাই এই অল্প সময়ের মধ্যে যা করার করে নিতে চাই।
প্র: ভারতে কোনও দিন খেলতে আসার সম্ভাবনা আছে? মানে বার্সেলোনার হয়ে?
রাকিটিচ: ক্লাব অবশ্যই এ ব্যাপারে কিছু একটা করতে পারে। আমরা যদি কাতার, নিউ ইয়র্ক যেতে পারি, তা হলে পৃথিবীর অন্য দিকে কেন যেতে পারব না? ক্লাবও তো জানে ভারতে বার্সেলোনার কত ফ্যান আছে। আমরা যদি ভারতের মতো কোনও দেশে খেলার সুযোগ পাই, তা হলে অবশ্যই দারুণ লাগবে। খুব এনজয় করব ব্যাপারটা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy