Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

আইসিসির বিরুদ্ধে যুদ্ধে একঘরে ভারতীয় বোর্ড

এত দিন আইসিসি ও বিসিসিআই-এর লড়াইটা ছিল বিবৃতির। খুল্লমখুল্লা নয়, রেখেঢেকে। এ বার সেটা চলে এল প্রকাশ্যে। ক্রিকেট বিশ্বের সামনে।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:৩১
Share: Save:

এত দিন আইসিসি ও বিসিসিআই-এর লড়াইটা ছিল বিবৃতির। খুল্লমখুল্লা নয়, রেখেঢেকে। এ বার সেটা চলে এল প্রকাশ্যে। ক্রিকেট বিশ্বের সামনে।

বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ামক সংস্থার লভ্যাংশের মোটা ভাগ পাওয়ার আশা যে প্রায় শেষ, তা শনিবার দুবাইয়ের সভায় কার্যত বুঝেই নিল ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। স্বাভাবিক ভাবেই বিসিসিআই তা মানতে নারাজ। এবং এই ইস্যুতে আইসিসি-র বিরুদ্ধে কার্যত জেহাদ ঘোষণা করে বসল ভারত। শনিবারের আইসিসি-র বোর্ড মিটিংয়ে।

কিন্তু সমস্যা হল, এই লড়াইয়ে ক্রিকেট বিশ্বের সমর্থন পাচ্ছে না ভারত। এ দিনের সভাতেই সেটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। এপ্রিলে যখন পরবর্তী বোর্ড মিটিংয়ে বসবে ক্রিকেট দুনিয়া, তখন যে ছবিটা উল্টে যাবে, এমন সম্ভাবনাও কম। আইসিসি-তে ভারত এমন কোনঠাসা এর আগে কখনও হয়েছে বলে মনে করতে পারছেন না ক্রিকেট প্রশাসকরা। তা-ও কি না একজন ভারতীয়র নেতৃত্বাধীন আইসিসি-তে।

বছর তিনেক আগে এন শ্রীনিবাসনের আইসিসি যে ক্রিকেট বিশ্বের ‘বিগ থ্রি’ গড়ার প্রস্তাব দিয়েছিল, তা বাস্তবায়িত হলে ভারত, ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার বোর্ড আইসিসি-র লভ্যাংশের অধিকাংশই পেত। যুক্তিটা ছিল, এই তিন দেশেই ক্রিকেটের মার্কেটিং অনেক বেশি এবং এই তিন দেশ থেকেই আইসিসি-র আয়ের বেশি অংশটা আসে, তাই এই তিন দেশ কেন বেশি অর্থ পাবে না?

আইসিসি-র সর্বোচ্চ পদে আর এক ভারতীয় শশাঙ্ক মনোহর এসে ‘বিগ থ্রি’ ও তাদের অধিকাংশ আয়ের প্রস্তাবকে ঠান্ডা ঘরে পাঠিয়ে দেন। ক্রিকেট বিশ্বে মারাত্মক বিভেদ সৃষ্টির আশঙ্কায় তিনি সমান হারে লভ্যাংশ বণ্টনেরই পক্ষে ছিলেন। শ্রীনিবাসনের পরিকল্পনা ধ্বংস করার জন্য উঠে পড়ে লাগেন তিনি। এই পদক্ষেপে তাঁকে দেশে বোর্ড কর্তাদের তোপের মুখে পড়তে হলেও পরোয়া করেননি নাগপুরের এই দুঁদে আইনজীবী।

আইসিসি-তে যা হল

• আইসিসি-তে ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডকে বেশি ক্ষমতা দেওয়ার প্রস্তাব নাকচ।

• পূর্ণ সদস্য দেশগুলোর মধ্যে আয়ের সমান ভাগ বন্টনের প্রস্তাব।

বোর্ডের পাল্টা

• প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট ভারতের। চরম পদক্ষেপ নিয়ে ভাবনা-চিন্তা।

• আয়ের সমান ভাগ বন্টনের প্রস্তাবের কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।

শনিবার সেই সংশোধিত প্রস্তাবই আইসিসি-র বোর্ড মিটিংয়ে পেশ করা হলে ভারতীয় বোর্ডের প্রতিনিধি বিক্রম লিমায়ে তার বিরুদ্ধে ভোট দেন। আইসিসি-র উচ্চপদস্থ সূত্রের খবর, একমাত্র শ্রীলঙ্কা ছাড়া অন্য কোনও দেশের সমর্থনই পায়নি ভারত। এমনকী ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াও জানিয়ে দিয়েছে, তারাও লভ্যাংশের সমবণ্টনেরই পক্ষে। দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজও এই বিষয়ে ভারতের বিপক্ষে।

পোড়খাওয়া ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কার বিক্রম লিমায়ে এই প্রথম আইসিসি-র বৈঠকে অংশ নিলেন। বৈঠকে বলেন, ‘‘চার দিন আগেই দায়িত্ব পেয়েছি। তাই এ সব নিয়ে তেমন কোনও স্পষ্ট ধারণা নেই। আমাকে পুরো বিষয়টা নিয়ে চর্চা করার জন্য সময় দিতে হবে। এপ্রিলে পরের বৈঠকে এই নিয়ে মতামত দিতে পারব আমরা।’’ কিন্তু ভোটাভুটিতে অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক ছিল বলে বিসিসিআই প্রস্তাবের বিরুদ্ধেই ভোট দেয়।

লিমায়ের যুক্তি, ‘‘আজকের সভায় যে সংশোধিত আর্থিক বণ্টনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, আপাতদৃষ্টিতে তা বিশ্বাস ও নিরপেক্ষতার ভিত্তিতে তৈরি বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু এর কোনও বৈজ্ঞানিক বা যুক্তিনির্ভর ব্যাখ্যা পাওয়া যাচ্ছে না। তাই আমাদের পক্ষে এখনই এতে সায় দেওয়া অসম্ভব।’’

এখন বড় প্রশ্ন হল, এপ্রিল পর্যন্ত সময় চাইলেও মাত্র দু’মাসে বিসিসিআই কী ভাবে আইসিসি-র অন্য সদস্য দেশগুলোকে নিজেদের দিকে নিয়ে আসবে? যে প্রশ্নের উত্তর কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না।

এপ্রিলের বৈঠকেও বেশিরভাগের সমর্থন না পেলে বিসিসিআই-এর সামনে একটাই রাস্তা খোলা থাকছে। জুনে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি বয়কটের হুমকি। যে রাস্তাতে হেঁটেছেন অনুরাগ ঠাকুর, অজয় শিরকেরাও। সেই রাস্তাতেই শেষ পর্যন্ত হাঁটে কি না বোর্ড, সেটাই দেখার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ICC BCCI Open Conflict
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE