সোমবারের ইদওর। অশ্বিনের ৬ উইকেটের দিনেই গম্ভীরের চোট। ছবি: পিটিআই।
রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে এখন বল করতে দেখলে একজনের কথা খুব মনে হয়। রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে বল করতে দেখলে সচিন তেন্ডুলকরকে এখন খুব মনে পড়ে!
কেউ বলবেন, সচিনের সঙ্গে অশ্বিনের সম্পর্ক কী? সচিন সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্যাটসম্যান। অশ্বিন সেখানে একজন স্পিনার যে দেশকে এখন টানা বল হাতে জেতাচ্ছে। এমনি সম্পর্ক নেই হয়তো। কিন্তু টিমের প্রতি ভূমিকায়? সেখানেও নেই কি?
অশ্বিনকে দেখলে কি বোলারদের ‘তেন্ডুলকর’ মনে হয় না? মনে হয় না, বোলিংয়ে এ-ও তো সেই একই ভরসাটা এখন দেয়, যা এক সময় ব্যাটিংয়ে তেন্ডুলকর দিত!
অশ্বিনের সামনে নিউজিল্যান্ড ব্যাটসম্যানদের নাকানিচোবানি খেতে দেখে মনে হচ্ছিল, দেড় বছরে কোথা থেকে কোথায় চলে গেল ছেলেটা! দেখছিলাম যে, ৩৯ টেস্ট খেলে ওর এখনই ২১৩ উইকেট। ম্যাচে পাঁচ উইকেট কুড়ি বার! মানে, একটা বাদে পরের টেস্টে ও পাঁচ উইকেট করে নিচ্ছে! ব্যাটসম্যানের কীর্তির সঙ্গে বোলারের কীর্তি মেলানোর একটা থিওরি আছে ক্রিকেটারদের। আমরা বলি, কেউ পাঁচ উইকেট নিলে সেটা একটা সেঞ্চুরির সমান। সে দিক থেকে দেখলে অশ্বিন কিন্তু কুড়িটা সেঞ্চুরির সমান কীর্তি ইতিমধ্যে করে ফেলেছে!
ঘরের মাঠে তেরো টেস্টের লম্বা সফর শেষে অশ্বিনের নামের পাশে হয়তো আরও একটা রেকর্ড থাকবে। অশ্বিন হয়তো বিষেণ সিংহ বেদীকে টেস্ট উইকেট-সংখ্যায় এই তেরো টেস্টের পরেই পিছনে ফেলে দেবে। অশ্বিন এখন ২১৩। আরও দশটা টেস্টে অন্তত ষাটটা উইকেট ও পাবে। আর তাই, বেদীর ২৬৬ টেস্ট উইকেট সামনের বছর শুরুর দিকে ওর পক্ষে টপকে যাওয়া কঠিন হবে না।
অশ্বিনের সফরের কথায় ফিরি। মানে, গত দেড় বছরে ওর বদল। নিখুঁত ভাবে বললে, ’১৫ বিশ্বকাপ। বিশ্বকাপের আগে অশ্বিন এক রকম ছিল। বিশ্বকাপের পর দেখলাম, আস্তে আস্তে ও পাল্টে যাচ্ছে। আগে ভাল বোলার ছিল। বিশ্বকাপের পর দেখলাম, বিধ্বংসী হচ্ছে। বিশ্বকাপের পরে বোলিংয়ে দু’টো বদল এনেছে অশ্বিন। একটা নিয়ে প্রচুর লেখালেখি হয়েছে। মানে, ক্যারম বলের মতো ভেরিয়েশন ছেড়ে অফস্পিনের দিকে চলে যাওয়া। সেটা নিয়ে আর বলব না। আমি বরং বলব দ্বিতীয়টা নিয়ে। ওর এখনকার লাইন-লেংথ নিয়ে।
অশ্বিন আগে উইকেট টু উইকেট বল করত। এখন রাখে অফস্টাম্পের বাইরে। ফোর্থ স্টাম্প লাইনে। এতে সুবিধে হল, বল যদি হঠাৎ টার্ন করে ভেতরে ঢুকে আসে, ব্যাটসম্যান বোল্ড বা এলবিডব্লিউ হয়ে যাবে। সোজা গেলে ব্যাটের কানা লেগে ক্যাচ ওঠার একটা সম্ভাবনা আছে। সোমবারই ধরা যাক। কেন উইলিয়ামসন যে বলটায় বোল্ড হল, সেটা ওই ফোর্থ স্টাম্পে পড়ে হঠাৎ ভেতরে ঢুকে আসা। আবার যে ডেলিভারিতে রস টেলর বা লিউক রঙ্কি আউট হয়েছে— সেগুলো সোজা বেরিয়েছে। শুধু ক্যাচ তুলে। লাইন অব অ্যাটাক পাল্টে অশ্বিন উইকেট পাওয়ার সম্ভাবনাটা বাড়িয়ে ফেলেছে। এখন যে লাইনে বল করে, তুলনায় অনেক বেশি আক্রমণাত্মক।
আজকের ছ’উইকেট যার আরও একটা প্রমাণ।
মনে হয় না ইংল্যান্ড বা অস্ট্রেলিয়া এসেও অশ্বিনকে সামলাতে পারবে। অশ্বিন ওদের বিরুদ্ধেও একই রকম দাপট দেখিয়ে যাবে, নিশ্চিত। কেন জানি না মনে হয়, অশ্বিনের এত দ্রুত উন্নতির পিছনে কোথাও বিরাট কোহালিরও অবদান আছে। একজন বোলারের সবচেয়ে বেশি ভরসার জায়গাটা হয় ক্যাপ্টেন। অধিনায়ক কতটা ভরসা রাখছে, কেমন ফিল্ড দিচ্ছে, তার উপর স্পিনারের ভাল করা নির্ভর করে।
বলছি না, ধোনির সময় অশ্বিন সেটা পায়নি। গত আইপিএলে ধোনি ওকে একটা সময় কোটার চার ওভার দিত না। কিন্তু সে সব সাময়িক ছিল। ধোনির আমলেও অশ্বিন ভাল করেছে। কোহালির ব্যাপারটা আসলে অন্য। অধিনায়ক হিসেবে কোহালি আর স্পিনার হিসেবে অশ্বিনের উত্থানের সময়টা একই হওয়ায়, দু’জনের আন্ডারস্ট্যান্ডিং দুর্দান্ত। বিরাট জানে, কোন প্রান্ত থেকে অশ্বিনকে আনলে বেশি কাজ হবে। জানে, অশ্বিনকে কখন আনতে হবে। আজ অনেক দিন পর দেখলাম, অশ্বিনকে দিয়ে টানা ১৪-১৫ ওভার স্পেল করাল বিরাট।
এত দিন বিরাট পাঁচ-ছ’ওভারের স্পেলে আনত অশ্বিনকে। থিওরি হল, সেরাকে ক্লান্ত করব না। প্লাস ফিল্ড প্লেসমেন্ট। মনে হয় না, কোহালির ফিল্ড প্লেসমেন্ট নিয়ে অশ্বিনের অভিযোগের কোনও জায়গা আছে। সব সময় পছন্দের ফিল্ড চেয়ে কিন্তু পায় না বোলার। সেখানে একটা রস টেলর নামলে তার সুইপ মারা আটকাতে বিরাট একটা ফিল্ডার দাঁড় করিয়ে দেয়। অশ্বিনকে কিছু বলতে হয় না।
যা দেখছি, ভারতীয় ক্রিকেটের এই জুটি বিপক্ষকে ভাল ভোগাবে। অশ্বিন প্লাস কোহালি— নাহ্, থামানোর মতো কাউকে সত্যিই পাচ্ছি না।
ভারত
প্রথম ইনিংস: ৫৫৭-৫ ডিঃ।
নিউজিল্যান্ড
প্রথম ইনিংস (আগের দিন ২৮-০)
গাপ্টিল রান আউট ৭২
ল্যাথাম ক ও বো অশ্বিন ৫৩
উইলিয়ামসন বো অশ্বিন ৮
টেলর ক রাহানে বো অশ্বিন ০
রঙ্কি ক রাহানে বো অশ্বিন ০
নিশাম এলবিডব্লিউ অশ্বিন ৭১
ওয়াটলিং ক রাহানে বো জাডেজা ২৩
স্যান্টনার ক কোহালি বো জাডেজা ২২
পটেল রান আউট ১৮
হেনরি ন.আ. ১৫
বোল্ট ক পূজারা বো অশ্বিন ০
অতিরিক্ত ১৭
মোট ২৯৯।
পতন: ১১৮, ১৩৪, ১৪০, ১৪৮, ১৪৮, ২০১, ২৫৩, ২৭৬, ২৯৪।
বোলিং: শামি ১৩-১-৪০-০, উমেশ ১৫-১-৫৫-০,
অশ্বিন ২৭.২-৫-৮১-৬, জাডেজা ২৮-৫-৮০-২, মুরলী ৭-০-২৭-০।
ভারত
দ্বিতীয় ইনিংস
মুরলী ন.আ. ১১
গম্ভীর আহত অবসৃত ৬
পূজারা ন.আ. ১
অতিরিক্ত ১৮।
মোট ১৮-০।
পতন: ১১।
বোলিং: বোল্ট ৩-০-৯-০, পটেল ২-০-৮-০, স্যান্টনার ১-০-১-০।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy