সালটা ১৯৫২। সে বার হেলসিঙ্কি অলিম্পিক্সে ভারতের পতাকা উড়িয়েছিলেন এক মরাঠি। সেই প্রথম অলিম্পিক্সে ভারতের ব্যক্তিগত পদক। এর আগে হকি ভারতকে সাফল্য এনে দিয়েছে অনেকবার। হেলসিঙ্কি অলিম্পিক্সেও সোনা এসেছিল ভারতীয় হকিতে। কিন্তু ব্যক্তিগত ইভেন্টেও সে বার পদকের তালিকায় নাম লিখিয়ে ফেলেছিলেন এই ভারতীয় কুস্তিগীর। মহারাষ্ট্রের কেশব দাদাসাহেব যাদব। কুস্তিতে ব্রোঞ্জ জিতে ভারতকে তুলে এনেছিলেন অলিম্পিকের ভিক্ট্রি স্ট্যান্ডে। ১৯০০র পর এই প্রথম। সে বার অ্যাথলেটিক্সে জোড়া রুপো জিতে নিয়েছিলেন নরম্যান পিচার্ড। তার ৫২ বছর পর ভারতকে আবার ব্যক্তিগত সাফল্য এনে দিলেন কেশব দাদাসাহেব যাদব। যাদব বিখ্যাত ছিলেন ‘ফ্লিট ফুটেড’ হওয়ার জন্য। এক পায়ের উপর ভর দিয়ে দ্রুত দৌড়তে পারতেন। যদিও তাঁর ইভেন্ট ছিল কুস্তি। আর সেখানেই সেই পা কাজে লাগাতেন তিনি। সেই সময়ের অন্যান্য কুস্তিগীরের থেকে আলাদাই ছিলেন তিনি।
মহারাষ্ট্রের সাতারা জেলায় জন্মেছিলেন ১৯২৬ সালে। ৮ বছর বয়সেই তিনি স্থানীয় কুস্তি চ্যাম্পিয়নকে হারিয়ে দিয়েছিলেন ২ মিনিটে। এর পরই সবার চোখ খুলে যায়। কেশবের বাবা দাদাসাহেব যাদব ছিলেন কুস্তি কোচ। তাই বাবার হাত ধরে পাঁচ বছর বয়সেই কুস্তিতে নেমে পড়েছিলেন তিনি। পরাধীন ভারতের মাটিতে দাঁড়িয়ে তখন দেশকে পদক জেতানোর স্বপ্ন দেখছে এক খুদে। বিশ্বের দরবারে তেরঙা ওড়ানোর জন্য তৈরি হচ্ছিল সেই ছেলে। ভারত স্বাধীন হওয়ার পরের বছরই প্রথম অলিম্পিক্সে পা রাখেন কেশব। ১৯৪৮ এর লন্ডন অলিম্পিক্স। ফ্লাইওয়েটে সে বার ষষ্ঠ হয়েছিলেন তিনি। তিনিই প্রথম ভারতীয় যিনি সে বার ব্যক্তিগত স্তরে প্রথম এত উপরে শেষ করেছিলেন। এর পরের চার বছর ছিল চূড়ান্ত অধ্যবসায়। ১৯৫২র হেলসিঙ্কিতে নেমেছিলেন বান্টামওয়েট (৫৭কেজি) বিভাগে। মেক্সিকো, জার্মানি এবং কানাডার প্রতিযোগীকে হারিয়ে ব্রোঞ্জ জিতেছিলেন তিনি। স্বাধীন ভারতের তিনিই প্রথম ভারতীয় ব্যক্তিগত পদকজয়ী অ্যাথলিট।
হেলসিঙ্কিতে অলিম্পিক্সের যোগ্যতা অর্জন নিয়ে সেই সময়ও জলঘোলা হয়েছিল। কর্তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিলেন কেশব। সেই সময় পাতিয়ালার মহারাজার হস্তক্ষেপে শেষ পর্যন্ত অলিম্পিক্সের যোগ্যতা অর্জন করেন তিনি। তার পরই শুরু হয় আসল সমস্যা। কী ভাবে যাবেন? টাকা কোথায়? ছাত্রকে অলিম্পিক্সে পাঠানোর জন্য তাঁর কলেজের প্রিন্সিপাল নিজের বাড়ি সাত হাজার টাকায় ব্যাঙ্কে বন্ধক রাখেন। সেই সময় মোরারজি দেশাইকে বার বার অনুরোধ করার পর মাত্র চার হাজার টাকা পাওয়া যায় রাজ্য সরকারের তরফে। আর তাতেই বাজিমাত স্বাধীন ভারতের প্রথম অলিম্পিক্স পদক জয়ীর। তাঁর জীবন নিয়ে সিনেমা করা কথা ভাবছেন অভিনেতা রীতেশ দেশমুখ। নাম ‘পকেট ডায়নামো’।
আরও খবর
এক মাস পরই মিউনিখ অলিম্পিক্সের ভয়াবহ সেই স্মৃতির ৪৪ বছর
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy