ডার্বিতে লাল-হলুদ কোচের ভরসা। বুধবার প্র্যাকটিসে ডং। ছবি: উৎপল সরকার
ডার্বি, সমর্থক ভর্তি গ্যালারি, সল্টলেক স্টেডিয়াম— কলকাতা আর তার গর্জন!
কলকাতা ডার্বির পরিবেশটাও এ বার দারুণ। মরসুম শুরু হয়েছে। মোহনবাগান আর ইস্টবেঙ্গল দুটো করে ম্যাচও খেলে ফেলেছে। এই অবস্থায় দু’জন নতুন ফুটবলার যোগ দিচ্ছে দু’টো টিমে। সেটা যেন আরও বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে ডার্বিতে। মোহনবাগানের সনি নর্ডি এসে গেছে। আর ইস্টবেঙ্গলও তো শুনলাম বার্নার্ড মেন্ডিকে মাঠে নামানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছে।
আমি নিজেও অনেক ডার্বির সাক্ষী থেকেছি। খেলেছি। জিতেছি। যে ম্যাচের মুহূর্তগুলো সব সময় আমার সঙ্গে থাকে। ডার্বি জেতার মজাটাই আলাদা।
ডার্বি মানেই কিন্তু চাপ। যেখানেই যাও না কেন, সমর্থক হোক বা ক্লাবকর্তা, এমনকী প্রতিবেশীও, সবার একটাই আবেদন— ‘‘ডার্বি জিততে হবে।’’ ফুটবলারদের চাপ নিতেই হয়। কিন্তু যেটা গুরুত্বপূর্ণ তা হল, কোনও সময় ভেঙে পড়তে নেই।
ফুটবলারের দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে, ম্যাচটা খেলতে সব সময় আগ্রহী হওয়া উচিত। এটা এমন একটা ম্যাচ যার জন্য যে কোনও প্লেয়ার সারা মরসুম অপেক্ষা করে থাকে। কিন্তু আবার বলছি চাপের মুখে ভেঙে পড়তে নেই। এমনও হতে পারে ম্যাচটা খেলার পরে কেউ সেই চাপ নিতে পারছে না। পারফরম্যান্সে ক্ষতি হচ্ছে। আত্মবিশ্বাস হারাতে বসেছে। কিন্তু নিজের বিশ্বাস হারালে চলবে না।
ডার্বি মানে শুধু নব্বই মিনিটের লড়াই নয়। বরং সেটা শুরু হয় ম্যাচের কিছু দিন আগে থেকেই। আমি কোনও সময় ফোকাস হারাইনি আর এই সময় স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করতাম।
চাপ আমাকে আরও বেশি অনুপ্ররণা দিত। প্রতিটা ডার্বি চ্যালেঞ্জ হিসাবে নিয়েছি। প্লেয়ার হিসাবে একটা লাইন টানতে হয়। তোমার ভিতরের সেই বিশ্বাসকে চাপ থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করতে হবে। আবার নিজের দায়িত্বও মনে রাখতে হবে। সঙ্গে ঠান্ডা মাথা আর ম্যাচের আবহ থেকে সরিয়ে রাখতে হবে নিজেকে।
এটা ভারতীয় ফুটবলের সবচেয়ে কঠিন ম্যাচ। আবার সবচেয়ে মজাও লাগে খেলতে।
প্রতিটা ডার্বির আগেই একটা তর্ক চলতেই থাকে, ‘‘ডার্বি জিততে কি কোনও স্ট্র্যাটেজি লাগে?,’’ নাকি ‘‘পুরোটাই হৃদয়ের উপরে নির্ভর করে?’’
সব সময় জরুরি একটা নির্দিষ্ট ছক কষে মাঠে নামা। অনেকের বিশ্বাস এ রকম ম্যাচে শুধু ট্যাকটিক্স দিয়ে চলে না কিন্তু আমার মতে হৃদয়ের মতো মাথা দিয়েও খেলতে হবে। দুটোর মধ্যে ভারসাম্য রাখতে পারলেই জেতা সম্ভব। এ ভাবেই কম্বিনেশনটা চলতে থাকে।
প্রস্তুতির একটা অংশ হিসেবে বিপক্ষের প্ররোচনা সব সময় উপভোগ করতাম। সেটাকে চ্যালেঞ্জ হিসাবে নিয়ে মাঠে নামতাম সমস্ত উত্তর দিতে। প্ররোচনা আমাকে আরও বেশি তাতিয়ে তুলত। যখন আমাকে কটাক্ষ করা হয়েছে তখন আপনাআপনি সেরাটা বেরিয়ে এসেছে।
এতটাই বেশি আবেগ জড়িয়ে আছে এই ম্যাচে, যদি কোনও ডার্বি হারতাম, ঘরেই বেশি থাকতাম। বাইরে শুধু ট্রেনিং করতে যেতাম আর ফিরে আসতাম।
ম্যাচটাকে আরও স্পেশ্যাল করে তুলেছেন সমর্থকরা। প্রচুর সংখ্যায় দেখতে এসে। কিন্তু এই একটা ম্যাচের দিকে দেখলে চলবে না। লিগের দিকেও তাকাতে হবে সমর্থকদের। অনেক সময় প্রিয় দল ডার্বি হেরে যাওয়ায় অনেক সমর্থক মাঠে আসা বন্ধ করে দিয়েছেন। কিন্তু লিগ অনেক দীর্ঘ, আর সে জন্য টিমের সমর্থন প্রয়োজন।
গ্যালারির সেই গর্জনটাই ফুটবলারদের আরও বেশি অনুপ্রেরণা জোগায়। এটার জন্যই অপেক্ষা থাকে ফুটবলারদের। যা বজায় রাখতে হবে।
আশা করছি ভাল দলটাই জিতুক!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy