Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
মাঠে উদাসীন, সাংবাদিক সম্মেলনে ব্যঙ্গাত্মক ধোনি

বাংলাদেশের কাছে ভারত হারলে অনেক চটকদার খবর হতো

আল আমিনের বিরুদ্ধে তাঁর কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার পর মহেন্দ্র সিংহ ধোনি যেন ভারতীয় মিডিয়াকে নিয়ে পড়লেন! কোথাও কোনও ঔদ্ধত্য নেই, কিন্তু হাবেভাবে ভঙ্গিতে প্রকাশ ভারতীয় মিডিয়ার সঙ্গে সারাক্ষণ তাঁর যে এই দড়ি টানাটানি চলে, তা নিয়ে তাঁর কোনও আপত্তি নেই। বরং চ্যালেঞ্জটা যেন তিনি উপভোগই করেন!

সরব হলেন সাংবািদকদের সামনে। ছবি  গৌতম ভট্টাচার্য

সরব হলেন সাংবািদকদের সামনে। ছবি গৌতম ভট্টাচার্য

গৌতম ভট্টাচার্য
ঢাকা শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০১৬ ০৪:২১
Share: Save:

আল আমিনের বিরুদ্ধে তাঁর কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার পর মহেন্দ্র সিংহ ধোনি যেন ভারতীয় মিডিয়াকে নিয়ে পড়লেন! কোথাও কোনও ঔদ্ধত্য নেই, কিন্তু হাবেভাবে ভঙ্গিতে প্রকাশ ভারতীয় মিডিয়ার সঙ্গে সারাক্ষণ তাঁর যে এই দড়ি টানাটানি চলে, তা নিয়ে তাঁর কোনও আপত্তি নেই। বরং চ্যালেঞ্জটা যেন তিনি উপভোগই করেন!

ধোনিকে জিজ্ঞেস করা হল, আট মাস আগে এই প্রেস কনফারেন্স রুমেই বাংলাদেশের কাছে হেরে যাওয়ার পর আপনাকে বলা হয়েছিল খারাপ অধিনায়ক। অনেক কথা হয়েছিল যে, আপনাকে সরানো উচিত। ভারতে কেউ কেউ ক্রিকেট-ঈশ্বর আর আপনি এত ট্রফি জিতেও কি না শুধুই ক্যাপ্টেন কুল! তার ওপরে উঠতে পারেননি। আজ কী বলবেন?

ধোনি বোধহয় এ রকম ডেলিভারির জন্যই অপেক্ষা করছিলেন। হাসতে হাসতে বললেন, ‘‘ভারতে প্রত্যেকেরই কোনও না কোনও মতামত আছে। ক্রিকেট নিয়ে তো আছেই। আর গণতন্ত্র আপনি আটকাবেনই বা কী করে? সমস্যা হল টিভিতে ক্রিকেট দেখলে মনে হয় খুব সহজ। সবাই বলতে থাকে, আরে এ ভাবে খেললি? অন্য ভাবে খেলা উচিত ছিল। এমনকী টেস্ট ম্যাচেও জ্ঞান দেয়। এখন সেটা চুপচাপ শোনা ছাড়া উপায় কী?’’ বলে ধোনি যোগ করলেন, ‘‘আর ভারতীয় মিডিয়া তো আছেই। আমাকে কখনও প্যারাশুটে করে আকাশে তুলে দেয়। আবার দুম করে নামিয়ে দেয়। ভারতে ক্রিকেটার হলে আপনি অনেক স্বীকৃতি পাবেন। নাম পাবেন। এন্ডোর্সমেন্ট পাবেন। কিন্তু এই ব্যাপারটার সঙ্গে দ্রুত মানাতে হবে যে, কখনও আপনি ওপরে থাকবেন, কখনও আপনি নীচে।’’ ধোনি বললেন, ‘‘আমার ক্ষেত্রে সমস্যাটা অনেক কম। কারণ আমার জন্য তো ভারতীয় মিডিয়া আছে! ওরা আমাকে তুলতে তুলতে ঠিক ফেলবেই। আবার দুম করে তুলে দেবে। আমার এতে বেশ মজাই লাগে। তবে এত কিছুর পরেও যদি আমাকে জিজ্ঞেস করা হয় কোন দেশের হয়ে ক্রিকেট খেলবে, আমি ভারতের কথাই বলব।’’

একজন জিজ্ঞেস করলেন ট্রফি জেতার ভাগ্য নিয়ে। ধোনি দ্রুত সেই ডেলিভারিটাকে আবার আল আমিনের করে দিলেন। ‘‘এই লাক, লাক শুনতে শুনতে কান পচে গেল। আরে ভাই, লাকের পিছনে কঠোর পরিশ্রম আছে, প্রচুর পরিকল্পনা আছে। সেটা ধারাবাহিক ভাবে করে যেতে হয়।’’

এত কিছুর মধ্যেও ধোনিকে বেশ আপ্লুত দেখাল। সচরাচর ট্রফি জয়োত্তর যে প্রকাশ্য প্রশান্তি তাঁর মধ্যে দেখা যায় না। এই ট্রফি জয়কে ‘বিশেষ ট্রফি জয়’ অ্যাখ্যা দিলেন। তখনই প্রশ্ন হল, আপনি তো স্পেশ্যাল উইন শব্দ-টব্দ কখনও ব্যবহার করেন না। আজকে করছেন কেন? ধোনি বললেন, ‘‘করছি পরিস্থিতির জন্য। পরিস্থিতিটা যেমন হয়েছিল, যে ভাবে পুরো ব্যাপারটা এগোচ্ছিল, তাতে এটা খুব তৃপ্তির জয়। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে এটা খুব সাহায্য করবে।’’

ধোনিকে প্রশ্ন করা হয়, আগের বার বাংলাদেশ জিতে প্রচুর উৎসব আর নাচানাচি করেছিল। আপনি যদিও ইতিহাসে বিশ্বাস করেন না তবু একটা কথা বলুন, ১২ বলের ১৯ রানের সময় একটা গনগনে উত্তাপ কি কাজ করেনি যে তোদের দেখে নেব? ধোনি বললেন, ‘‘আগের বার যা হয়েছে তাতে কষ্ট পেয়েছিলাম ঠিকই। কিন্তু ও ভাবে কিছু ভাবিনি। তবে লোভনীয় হেডিং এঁরা পেলেন না যে, ভারত ফাইনালে হেরে গেল। আমাদের বাংলাদেশের কাছে হেরে যাওয়াটা বেশ চটকদার খবর। আমাদের ওদের হারানোটা নয়। এটা একটা অদ্ভুত ব্যাপার যে, আমরা বাংলাদেশের কাছে হারলে সবাই বলবে সে কী রে বাংলাদেশের কাছে হেরে গেলি! আর জিতলে বলবে ও তো জিতবেই বাংলাদেশের সঙ্গে। কাজেই বাংলাদেশের সঙ্গে জিতেও কোনও পয়েন্ট পাওয়া যায় না। যদিও ওদের টিমটা এখন অনেক ভাল।’’

সাংবাদিক সম্মেলন শুরু হওয়ার আগে এক ফাঁকে ধোনিকে আনন্দবাজারের তরফে জিজ্ঞেস করা হয়, ফেসবুকে এখন বলা হচ্ছে ক্রিকেট হল সেই খেলা যেখানে দু’টো টিম খেলে আর মহেন্দ্র সিংহ ধোনি উইনিং শট মারেন। ধোনি শুনে হাসলেন তার পর বললেন, ‘‘ফেসবুক তো কত কথাই বলে।’’

তখনই মনে হল তিনি কি আল আমিনের মধ্যে তাসকিনকে দেখছিলেন?\

বিরাটের জয়োল্লাসের নীরব দর্শক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

MostReadStories
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE