Advertisement
E-Paper

টি-টোয়েন্টি যুগে স্পিনের দেশেই লুপ্ত আজ স্পিন খেলার টেকনিক

ভারতের ঘূর্ণি পিচে খেলে খেলে আমি বড় হয়েছি। পুণেতে যতই বল ঘুরুক, স্পিনের দেশ স্পিনেই ঘায়েল হল দেখে আমি একই সঙ্গে বিস্মিত ও দুঃখিত। আবার পরক্ষণেই মনে হচ্ছে, এই পরিণতিটা কি খুব অপ্রত্যাশিত ছিল?

অশোক মলহোত্র

শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:৩৩

ভারতের ঘূর্ণি পিচে খেলে খেলে আমি বড় হয়েছি। পুণেতে যতই বল ঘুরুক, স্পিনের দেশ স্পিনেই ঘায়েল হল দেখে আমি একই সঙ্গে বিস্মিত ও দুঃখিত। আবার পরক্ষণেই মনে হচ্ছে, এই পরিণতিটা কি খুব অপ্রত্যাশিত ছিল? এখন আর স্পিনিং উইকেটে আমাদের ব্যাটসম্যানেরা খেলে কোথায়? টি-টোয়েন্টি আর আইপিএল জমানায় ঘরোয়া ক্রিকেটে সব ম্যাচই তো হয় পাটা উইকেটে। হালফিলে দেখা যাচ্ছে, কোথাও কোথাও গতিসম্পন্ন পিচ করা হচ্ছে। কিন্তু আদর্শ ভারতীয় স্পিনিং পিচ এখন আর সে ভাবে দেখাই যায় না।

সেই সঙ্গে স্পিন খেলার ভারতীয় ব্যাটিং শিল্পীরাও কি বিলুপ্তপ্রায় হয়ে গেলেন? আমাদের সময়ে ঘরোয়া ক্রিকেটে প্রত্যেক দলে ভাল স্পিনার ছিল। ভারত ছিলই তো স্পিনের জাদুকরদের দেশ। বিষাণ সিংহ বেদী, এরাপল্লি প্রসন্ন, বেঙ্কটরাঘবন, চন্দ্রশেখর। এঁরা চার জন ভারতের হয়ে খেলতেন। পদ্মাকর শিভালকর বা রাজিন্দর গোয়েলের মতো দুরন্ত স্পিনাররা ছিলেন ঘরোয়া ক্রিকেটে। তাঁদের সফল ভাবে খেলে জাতীয় দলে ঢুকতে হতো এক জন ব্যাটসম্যানকে। সেই পর্যায়ের স্পিনার এখন কোথায়? ভাল স্পিনারকে না খেলায় স্পিন খেলার টেকনিকও হারিয়ে যাচ্ছে। আমাদের সময়ে প্রাথমিক পাঠ ছিল, ঘূর্ণি পিচে সোজা লাইনে খেলার চেষ্টা করো। টার্নের জন্য খেলা যায় না ঘূর্ণি পিচে।

ঘূর্ণি পিচে কী ভাবে স্পিন খেলতে হয়, তার সেরা মডেল হয়ে রয়েছে বেঙ্গালুরুতে সুনীল গাওস্করের সেই অমর ৯৬ রানের ইনিংস। সেই ইনিংসে গাওস্কর কিন্তু সোজাই খেলছিল। পরাস্ত হয়েছে অনেক বার। কিন্তু ব্যাটের কানায় লাগেনি। শেষ মুহূর্তে সরিয়ে নিতে পেরেছে ওর অসাধারণ রিফ্লেক্স এবং টেকনিকের জোরে। আর একটা জিনিস সানি করত স্পিন খেলার সময়। অপেক্ষা করে খেলা। যতটা সম্ভব শেষ মুহূর্তে খেলতে হবে, এটাই ব্যাটসম্যানদের জন্য ঘূর্ণি পিচে সফল হওয়ার মন্ত্র।

সানি এটা দারুণ ভাবে করত। আমি মোহিন্দর অমরনাথকেও একই জিনিস করতে দেখেছি। তবে মোহিন্দর প্যাডের ব্যবহার করত খুব বেশি। সেটা এখনকার দিনে করা চলত না। এলবিডব্লিউ হওয়ার ঝুঁকি থাকত। গাওস্কর আর মোহিন্দরের স্পিন খেলার টেকনিকে তফাত থাকতে পারে। একটা ব্যাপারে কোনও অমিল নেই। সেটা হল, স্পিন খেলতে গেলে ধৈর্য দরকার।

এই জিনিসটাই এখনকার ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের মধ্যে দেখছি না। সীমিত ওভারের ক্রিকেটের প্রভাবে এখনকার ছেলেদের একটা মনন তৈরি হয়ে গিয়েছে যে, স্পিনে সফল হতে গেলে আক্রমণ করতে হবে। আসলে কিন্তু তা নয়। স্পিনের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে গেলে রক্ষণও ভীষণ মজবুত থাকতে হবে। কপিল দেবের মতো ফুটওয়ার্ক আর স্ট্রোক হাতে থাকলে এটা করা যেত। কপিল যেমন ইংল্যান্ডে এডি হেমিংসকে পর-পর চারটে ছক্কা মেরে ফলো-অন বাঁচিয়েছিল। ভারতীয় ক্রিকেটে বিখ্যাত হয়ে আছে সেই চার ছক্কা। কিন্তু স্পিনের বিরুদ্ধে কপিলের ফুটওয়ার্ক ছিল অসাধারণ। আর দুর্ধর্ষ সব স্ট্রোক খেলতে পারত। কপিলের সঙ্গে দীর্ঘদিন খেলার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, ও বিশ্বাস করত মানসিকতাটাই আসল। স্পিনারকে চার ছক্কা মারতে গেলে আগে বিশ্বাস আনতে হবে যে, আমি এটা পারব।

রোগ

• অস্ট্রেলিয়ার দুই স্পিনারকে খেলতে গিয়ে থরহরিকম্প। টেকনিক নেই, প্রয়োগ ক্ষমতাও ছিল না।
• প্রথম ইনিংসে মাত্র ১০৫ রানে শেষ। অস্ট্রেলিয়া এগিয়ে যায় ১৫৫ রানে। সেই ঘাটতি মেটানো যায়নি।
• একাধিক ক্যাচ ফেলা। স্টিভ স্মিথ দ্বিতীয় ইনিংসে সেঞ্চুরি করেন চারটি জীবন পেয়ে। ফিল্ডার চয়নে প্রশ্ন।
• দিশাহীন ডিআরএস নীতি। শুরুতে সুযোগ নষ্ট হয়ে যায় সব ক’টি। ফিল্ডিংয়েও নষ্ট হয়েছে ডিআরএস।

দাওয়াই

• ঘূর্ণি উইকেট বানানো বন্ধ করতে হবে। পরের টেস্ট বেঙ্গালুরুতে। ব্যাটিং উইকেট করার কথা ভাবা উচিত।
• রাহানেদের দেখে মনে হচ্ছে, আত্মবিশ্বাসের অভাবে ভুগছেন। স্পিন খেলার বিশেষ অনুশীলন চাই।
• অতিরিক্ত ব্যাটসম্যান খেলাতে হবে। ট্রিপল সেঞ্চুরি করা করুণ নায়ারকে নেওয়ার কথা উঠছে।
• দ্বিতীয় ইনিংসে অশ্বিন ওভার প্রতি ৪.২৫ রান দিয়েছেন। অশ্বিনকে আক্রমণের নীতি আটকাতে হবে।

জানি না পুণের ‘ইলেকট্রিক শক’ লাগার পরে ভারতীয় দল কী ভাবে এর উত্তর দেবে। এই দলটার ওপর আস্থা রাখছি যে হেতু ওরা ধারাবাহিক ভাবে ভাল খেলে চলেছে। এই একটা হার দেখে ওদের নিয়ে আশা ত্যাগ করার কারণ ঘটেনি। তবে কোহালিদের অনেক উন্নতি করতে হবে। সবার আগে ঘূর্ণিতে খেলার রণনীতি পাল্টাতে হবে। এখন অস্ট্রেলিয়ার আত্মবিশ্বাস বেশি, ভারতের কম। বিশেষ করে ব্যাটসম্যানদের। ১০৫ আর ১০৭ রানে নিজেদের দেশে দু’বার অলআউট হয়ে যাওয়াটা মনোবলে বিরাট ধাক্কা দেবে। এখন ব্যাটিং পিচে খেলে আগে তাই আত্মবিশ্বাস ফেরানো দরকার। তার পর আবার আক্রমণে যাও। সাবধানী থেকে বাকি সিরিজের যুদ্ধ জিততে হবে ভারতকে।

কোহালিদের জন্য তাই আমার পরামর্শ, রাতের ঘুম চলে যাওয়ার মতো কিছু ঘটেনি। একই সঙ্গে প্রতিপক্ষকে সম্মান করাটাও দরকার।

Indian Batting Shaky Spinning Wicket India vs Australia Test
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy