Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

নেহরার টোটকায় ১-১ করলেন বুমরাহ

এ বার আর আশিস নেহরাকে সেই দিনটাতে ফিরে যেতে দিলেন না জসপ্রীত বুমরাহ। ১২ মার্চ, ২০১১। জামথার এই ভিসিএ স্টেডিয়ামেই ঘটেছিল সেই ঘটনা।

শেষ ওভারে বাটলারকে ফিরিয়ে বুমরাহ। রবিবার নাগপুরে। ছবি: রয়টার্স

শেষ ওভারে বাটলারকে ফিরিয়ে বুমরাহ। রবিবার নাগপুরে। ছবি: রয়টার্স

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:৫৩
Share: Save:

এ বার আর আশিস নেহরাকে সেই দিনটাতে ফিরে যেতে দিলেন না জসপ্রীত বুমরাহ।

১২ মার্চ, ২০১১।

জামথার এই ভিসিএ স্টেডিয়ামেই ঘটেছিল সেই ঘটনা। বিশ্বকাপের গ্রুপ ম্যাচ। শেষ ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকার রবিন পিটারসন নেহরাকে পিটিয়ে চার বলে ১৬ রান তুলেছিলেন। দুটো চার। একটা ছয়। দুটো খুচরো রান। সেই শেষ ওভারে ভারতের ২৯৬ টপকে তিনশো তুলে ফেলেছিল প্রোটিয়ারা।

রবিবার, প্রায় ছ’বছর পর আবার সেই জামথা। আগের তিন ওভারে ১২ রান দিয়ে তিন উইকেট নেওয়ার পরও নেহরা তাঁর শেষ ওভারে সেই ১৬ রানই দিলেন। তবে সে বারের মতো ম্যাচে শেষ ওভার নয়। তাই বেঁচে গেল ভারত।

শেষ ওভারটা করতে এলেন তরুণ গুজরাতি পেসার জসপ্রীত বুমরাহ। দুই ব্যাটসম্যানকে ফেরালেন, দিলেন মাত্র দু’টো রান।

ইংল্যান্ডকে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের দোরগোড়া থেকে টেনে আনলেন অদ্ভুত অ্যাকশনের এই ইয়র্কার স্পেশ্যালিস্ট। সিরিজ ১-১। ফয়সালা বেঙ্গালুরুতে। আগামী বুধবার।

সিরিজে যে এ দিন সমতা ফেরানোর লড়াই ছিল তাদের, ভারতের ব্যাটিং দেখে তা বোঝার উপায় ছিল না। ১৪৪-৮-এ শেষ কুড়ি ওভারের কোটা। প্রথম ম্যাচের চেয়ে তিন রান কম। এটা এমন কিছু বড় পুঁজি নয় ঠিকই। তবে নাগপুরের এই বিশাল মাঠে এই রানটা তোলাও সোজা নয়। আগের ম্যাচের অন্যতম নায়ক ইয়ন মর্গ্যানকে (২৩ বলে ১৭) ৬৫-র মধ্যে খুইয়েও জো রুটের (৩৮ বলে ৩৮) হাত ধরে অনেকটা এগিয়েও গিয়েছিল ইংল্যান্ড। কিন্তু শেষ রক্ষা আর করতে পারলেন না বেন স্টোকস (৩৮), জস বাটলাররা (১৫)। শেষ দু’ওভারে ইংল্যান্ডের জয়ের জন্য দরকার ছিল ২৪। রুট-বাটলাররা নেহরার ওভারেই তুলে ফেলেন ১৬। বাকি আট শেষ ওভারে। কী আর এমন?

বুমরাহর শেষ ওভারের প্রথম বলেই জো রুট এলবিডব্লিউ-র ফাঁদে পড়লেন। যদিও ভারতীয় আম্পায়ার শামসুদ্দিনের ‘সহায়তা’ পেলেন এই উইকেটটা পেতে। রিপ্লে-তে দেখা গেল ব্যাটের ভিতরের কানায় লেগে বল রুটের পায়ে গিয়ে লাগে। তবে বাটলারের স্টাম্প ছিটকে দেওয়ায় কোনও বিতর্ক নেই। ইংল্যান্ডের শেষ আশা এখানেই শেষ হয়ে যায়।

‘‘চার ওভারে যখন ওদের ৩২ দরকার ছিল, তখনই জসপ্রীতকে আমি বলছিলাম, দেখে নিস, আমরাই জিতব,’’ জয়ের পর টিভিতে বলছিলেন নেহরা। শেষ ওভার নিয়ে বুমরাহ বলেন, ‘‘ডেথে বল করা সবসময়ই কঠিন। অতীতের কথা মনে করছিলাম। যে ম্যাচগুলোতে শেষ ওভারে ভাল বল করেছিলাম। মনে হল, খাটো লেংথের বল বা স্লোয়ার সামলানো ওদের পক্ষে কঠিন হবে। সেটাই করতে চাইছিলাম।’’


ম্যাচের নায়ক। রবিবার নাগপুরে। ছবি: রয়টার্স

শেষ ওভারে বল হাতে নিয়ে নেহরার সঙ্গে কথা বলেন বুমরাহ। অভিজ্ঞ দিল্লির পেসার বলেন, ‘‘জসপ্রীত আগেও শেষ ওভারে ভাল বল করেছে। ওকে বললাম বেশি আক্রমণাত্মক হতে যাস না। বললাম, তোর ইয়র্কারটা ভাল, ওটাই দেওয়ার চেষ্টা কর। লোয়ার ফুল টস হলেও এই মাঠে ওরা ছয় মারতে পারবে না।’’ জসপ্রীত বুমরাহ যদি এই জয়ের এক নায়ক হন, তা হলে আর এক নায়ক অবশ্যই লোকেশ রাহুল। এই ম্যাচে যাঁর প্রথম এগারোয় জায়গা পাওয়া নিয়েই প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল। ভারতের হয়ে তাঁর শেষ চারটে ইনিংসে ৩২ রানের পর। সেই ‘ডেঞ্জার জোন’ থেকে নিজেকে এ দিন বার করে আনলেন তিনি। নাগপুরের বড় মাঠে ৪৭ বলে ৭১ করে। ছ’টা বাউন্ডারি ও দুটো ওভার বাউন্ডারি। কিন্তু তাঁর সঙ্গে শুধু মণীশ পাণ্ডের (২৬ বলে ৩০) পার্টনারশিপটাই জমল। অন্য কারও সঙ্গে নয়। আরও অন্তত দু-একটা এ রকম জুটি দাঁড়িয়ে গেলে ভারতকে এই ম্যাচে এত লড়াই করে জিততে হত না। জয় আসত অনায়াসে।

বিরাট কোহালি ২১, রায়না ৭, যুবরাজ ৪, ধোনি ৫-এর বেশি না করতে পারলে তো রাহুলের মতোই কাউকে দায়িত্ব নিতে হবে। ইনিংসের পর টিভিতে বলেন, ‘‘ক্রিজে থাকাটাই আজ আমার আসল কাজ ছিল। নতুন বল ভালই ব্যাটে আসছিল। এই উইকেটে লেংথটা বুঝতে বোলারদের একটু সময়ও লেগেছে। ইনিংসের শেষ পর্যন্ত থাকারই প্ল্যান ছিল আমার। খুব বেশি রান যে উঠবে না, তা জানতাম। তবে আর ১০-১৫ রান বোর্ডে থাকলে ভাল হত।’’

তবে বিরাট কোহালির এই নিয়ে কোনও অভিযোগ নেই। বললেন, ‘‘আত্মবিশ্বাসটাই আসল। এটাই আজ কাজে লাগল আমাদের। ইনিংসের মাঝখানে স্পিনাররা যা বল করল, তা অসাধারণ। এই শিশিরের মধ্যে নেহরা, বুমরাহদের বোলিংও দুর্দান্ত হয়েছে। বুমরাহকে আমি বলি, ‘তুই যা ভাল বুঝিস, সে রকমই বল কর।’ ও তাই করেছে।’’ উইকেট নিয়ে কোহালির বক্তব্য, ‘‘এই উইকেটে শট নেওয়া কঠিন ছিল। আমার আউটের পর রাহুল জানত, ওকে রান করে যেতে হবে। সব রকম শট আছে ওর হাতে। রিফ্লেক্স, হ্যান্ড-আই কোঅর্ডিনেশন, ওর সবই ভাল। এ বার বেঙ্গালুরুর পালা। আমাদের এ বার আরও কড়া হতে হবে।’’

ইংল্যান্ডকে বিরাট হুঁশিয়ারি দিয়ে রাখলেন ভারত অধিনায়ক?

সংক্ষিপ্ত স্কোর: ভারত ১৪৪-৮ (রাহুল ৭১, মণীশ ৩০, জর্ডন ৩-২২), ইংল্যান্ড ১৩৯-৬ (রুট ৩৮, স্টোকস ৩৮, নেহরা ৩-২৮, বুমরাহ ২-২০)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jaspreet Bumrah Ashish Nehra
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE