আদর। টিম হোটেলে পরিবারের সঙ্গে করুণ নায়ার। সোমবার। -টুইটার
জীবনের তিন নম্বর টেস্ট ইনিংসেই ট্রিপল সেঞ্চুরির সামনে থাকা ব্যাটসম্যানের কতটা টেনশন হতে পারে? যাঁর প্রথম দু’ইনিংসে রান ৪ আর ১৩?
উত্তরটা সহজ। প্রচণ্ড টেনশন।
কিন্তু সোমবার চিপকে করুণ নায়ারকে দেখে টেনশনের নামগন্ধও পাওয়া যায়নি। ইংল্যান্ড বোলারদের নাগাড়ে শাসন করে কেরিয়ারের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিকে ট্রিপল সেঞ্চুরিতে (অপরাজিত ৩০৩) নিয়ে যাওয়া কর্নাটক ব্যাটসম্যান এতটা শান্ত কী করে থাকলেন! সোমবার এই কৌতূহলটাই ঘুরেফিরে মাথাচাড়া দিচ্ছিল চিপকের অলিন্দে।
ম্যাচের পর করুণকে প্রশ্নটা করা হল। কর্নাটক ব্যাটসম্যান মুচকি হেসে মাস পাঁচেক আগের ঘটনার কথা মনে করিয়ে দিয়ে বললেন, ‘‘যে মৃত্যুকে হারিয়ে আসতে পেরেছে তার কাছে ট্রিপল সেঞ্চুরি আর কী চাপ!’’
জুলাইয়ে কেরলে মারাত্মক দুর্ঘটনার মুখে পড়েছিলেন করুণ। ঘরোয়া ক্রিকেটে কর্নাটকের প্রতিনিধিত্ব করলেও করুণ আসলে কেরলের ছেলে। যে রাজ্যের বিখ্যাত ‘মন্দির উৎসবে’ নেমে পড়েছিলেন তিনি এ বার। উৎসবের অঙ্গ হিসেবে পম্পা নদীতে প্রায় শ’খানেক মানুষের সঙ্গে নৌকায় চড়তে হয় করুণকে। সব ঠিকঠাকই চলছিল। হঠাৎ বিপত্তি ঘটে যায় করুণদের নৌকো উল্টে গেলে। কোনওক্রমে প্রাণে বাঁচেন তিনি। সাঁতার না জানা সত্ত্বেও!
সেই ভয়ঙ্কর স্মৃতির কথা মনে পড়তেই এখনও যেন আতঙ্কের ছাপ করুণের কথায়। ‘‘আমি সাঁতার জানতাম না। স্থানীয় মানুষ উদ্ধার না করলে যে কী হত!’’ সেই অভিজ্ঞতাই কিন্তু শাপে বর হয়ে উঠল। ব্যাটসম্যান করুণকে যা চাপমুক্ত করে দিয়েছিল সোমবার মোক্ষম সময়ে। করুণ বললেন, ‘‘এটাই আমার জীবনের সেরা ইনিংস। কেএল রাহুল, অশ্বিন আর জাডেজার সঙ্গে পার্টনারশিপে ক্রিজে অনেক রকম পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়েছে। ওদের ধন্যবাদ আমায় উৎসাহ দিয়ে যাওয়ার জন্য।’’
উচ্ছ্বসিত করুনের বাবা-মা কালাধরন ও প্রেমা নায়ারও। বেঙ্গালুরু থেকে ছেলের সেঞ্চুরি দেখার আশায় চিপকে এসে একেবারে ট্রিপল সেঞ্চুরি দেখবেন, আশাই করেননি তাঁরা। করুণের বাবা বলছিলেন, ‘‘এখানে আসার আগে প্রার্থনা করছিলাম যেন ও একটা সেঞ্চুরি করতে পারে। তার চেয়ে বেশি কিছু আশা করিনি। ও যে ট্রিপল সেঞ্চুরি করে ফেলবে ভাবিনি। আমাদের গোটা পরিবারের জন্যই আজ খুব আনন্দের দিন। গর্বের দিন। করুণ সব সময়ই চাইত ক্রিকেটে বড় কিছু করতে। আজ সেটা দেখিয়ে দিল।’’
করুণের মা অবশ্য চিপকে আসতে চাননি। ছেলে ব্যাট হাতে নামলেই টিভির সামনে থাকেন না পেশায় স্কুলটিচার প্রেমা নায়ার। তিনি আইপিএল দেখেন। কিন্তু করুণের টিম দিল্লি ডেয়ারডেভিলসের ব্যাটিং দেখেন না। কুসংস্কারে। তাঁর জায়গা তখন ঠাকুরঘরে। করুণের বাবা তাই ছেলের ইনিংস রেকর্ড করে রাখেন। মা যাতে পরে দেখতে পারেন। চিপকে আসতেও তাই কালাধরনকে অনেক বোঝাতে হয়েছে প্রেমাকে। বোঝাতে হয়েছে, তিনি কী করে একা যাবেন চেন্নাই আর প্রেমাকেই বা বেঙ্গালুরু একা কী করে ছেড়ে যাবেন। শেষ পর্যন্ত প্রেমা রাজি হয়ে যান। ভাগ্যিস! না হলে মাঠে বসে চাক্ষুস করুণের এত বড় একটা কৃতিত্বটা তো দেখাই হত না।
আগের দিন কেএল রাহুলের ১৯৯ আর সোমবার করুণের এই ব্যাটিং দাপটেই ৪-০ হওয়ার আশা দেখছে ভারত। তৃতীয় দিন ৩৯১-৪ স্কোরে খেলা শেষ হওয়ার পর এ দিন ভারত প্রথম ইনিংস ডিক্লেয়ার করে ৭৫৯-৭। টেস্টে যা ভারতের সর্বোচ্চ রান। সাত বছর আগে মুম্বইয়ে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ৭২৬-৯ (ডিঃ) স্কোরকে টপকে যাওয়া পারফরম্যান্সের জোরেই পঞ্চম দিনের খেলা শুরু আগে ভারত এখনও এগিয়ে ২৭০ রানে। ইংল্যান্ড এ দিনের খেলা শেষ হওয়া পর্যন্ত তুলেছে ১২-০। শেষ দিন অ্যালিস্টার কুকদের হারাতে ভারতের চাই আর ১০ উইকেট।
এ দিন মুরলী বিজয় ২৯ রানে লিয়াম ডসনের বলে ফিরে যাওয়ার পর রবিচন্দ্রন অশ্বিনের (৬৭) সঙ্গে পার্টনারশিপ এগিয়ে নিয়ে যেতে হয়েছে করুণকে। ষষ্ঠ উইকেটে দু’জন ১৮১ রান যোগ করেন। তার পর করুণের জুড়িদার ছিলেন রবীন্দ্র জাডেজা (৫১)। সেখানেও যোগ হয় ১৩৮ রান। তবে পরিস্থিতি যাই হোক ঘাবড়াননি ২৫ বছর বয়সি ব্যাটসম্যান, ‘‘প্রথম একশো রানে পৌঁছনোটা সব সময় গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে পৌঁছনোর পর আমার আর কোনও চাপ মনে হয়নি। শুধু নিজের শটগুলো মেরে গিয়েছি তার পর।’’
অবশ্য ট্রিপল সেঞ্চুরিতে পৌঁছবেন ভাবেননি করুণও, ‘‘মাথাতেই ছিল না এটা। ২৫০ ক্রস করার পরে মনে হত টিম ম্যানেজমেন্টের নিশ্চয়ই পরিকল্পনা রয়েছে দ্রুত রান তুলে ডিক্লেয়ার করার। তাই টার্গেট করেছিলাম পাঁচ ওভারের মধ্যেই ২৮০ থেকে ২৮৫ রানে পৌঁছতে হবে। তখনই ট্রিপল সেঞ্চুরির কথা প্রথম মাথায় আসে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy