কোনও বড় টুর্নামেন্টের নকআউট পর্ব নিয়ে একটা আলাদা উত্তেজনা থাকে। এ সমস্ত দিনে ফেভারিট বলে কেউ হয় না। খাতায়কলমে তুমি এগিয়ে থাকতে পারো কিন্তু মাঠে নব্বই মিনিট যে দল ভাল খেলবে সেই জিতবে। একটা ছোট ভুল যেমন কোনও দলকে ডুবিয়ে দিতে পারে। আবার একটা সুন্দর মুভও জয় ছিনিয়ে আনতে পারে। ইউরোর শেষ ষোলোর প্রথম দিনেই তো কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে পরীক্ষা ছিল রবার্ট লেভানডস্কি ও গ্যারেথ বেলের মতো দুই বিশ্বমানের প্রতিভার। যারা ক্লাব ফুটবলে হইচই ফেলে দিয়েছে। লেভানডস্কির সামনে ছিল সুইৎজারল্যান্ডের কড়া মার্কিং। বেলের প্রতিপক্ষ নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড। যারা অঘটন ঘটানোর ক্ষমতা রাখে। সারপ্রাইজ প্যাকেজ বলতে যা বোঝায়।
দুটো ম্যাচ দেখার পরে দু’রকম অনুভূতি হল। লেভানডস্কির ম্যাচে দেখলাম কী করে একজন বিশ্বসেরা স্ট্রাইকারকে সেই চিরাচরিত ইউরোপিয়ান মার্কিং শান্ত রাখতে পারে। আবার বেলের ম্যাচে প্রমাণ পেলাম, ফুটবলের মতো টিমগেমেও কী করে একজন ব্যক্তিগত প্রতিভা পার্থক্য গড়ে দিতে পারে।
এই মুহূর্তে বিশ্বের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার লেভানডস্কি। কমপ্লিট সেন্টার ফরোয়ার্ড বলতে যা বোঝায়। যেমন হেড তেমনই শট। কিন্তু ভুলে গিয়েছিলাম ইউরোপিয়ান ঘরানা মানেই তো বিপক্ষের সেরা ফুটবলারকে বোতলবন্দি করার অভ্যেস। ফুটবলপ্রেমীদের কাছে ছকটা ‘বোরিং’ মনে হলেও, ইউরোপিয়ান দেশগুলো অবশ্য বিশ্বাস করে দর্শকের মনোরঞ্জন করার আগে জরুরি জয় তুলে আনা।
সুইসদের খেলা দেখে মনেই হচ্ছিল ওরা আগেভাগে পড়াশুনো করে এসেছে পোল্যান্ডের স্ট্রাইকারকে নিয়ে। কোথায় কোথায় লেভানডস্কি ভয়ঙ্কর। কোন জায়গা থেকে হাফ চান্সে গোল করে, সব বুঝেই আগে থেকে জোনাল মার্কিং করে দেয় সুইৎজারল্যান্ড। তাই লেভানডস্কি খুব বেশি শট নেওয়ার সুযোগ পায়নি।
ফরোয়ার্ডে বেশিক্ষণ না থাকতে পেরে নীচে নেমে যাচ্ছিল লেভানডস্কি। এমন সমস্ত অ্যাঙ্গল থেকে শটের চেষ্টা করতে থাকে যে গোল হওয়া অসম্ভব। কিন্তু কী আর করা যাবে? কোনও স্ট্রাইকারকে ফ্রি-ভাবে খেলতে না দিলে তাকে এ রকম চেষ্টাই করতে হয়। লেভানডস্কিকে মার্ক করে রাখলেও ওর মতো স্ট্রাইকার সব সময় চেষ্টা করবেই গোল করার। নিঁখুত একটা টার্ন, ২৫ গজ থেকে লব, চেষ্টার ত্রুটি রাখেনি লেভানডস্কি। সুইৎজারল্যান্ড টাইব্রেকারে হারলেও বেশি ভাল ফুটবলটা খেলেছে। শাকিরির গোলটা অনবদ্য ছিল। দুর্ভাগ্য অত সুন্দর গোলও শেষমেশ কাজে আসল না সুইসদের।
লেভানডস্কি সাদামাঠা পারফরম্যান্স দিলেও, বেল প্রমাণ করল কেন ওর নামের পাশে ‘ওয়ান ম্যান আর্মি’ অনায়াসে বসিয়ে দেওয়া যায়। বেল খেলে উইংয়ে। এ দিন খেলছিল ফরোয়ার্ড আর উইংয়ের মাঝখানে। যাতে ফ্রি স্পেস পায়। প্রথমার্ধে খুব একটা কিছু করতে পারেনি। কিন্তু হাফটাইমের পরে সেই চেনা বেলকেই দেখলাম। যার প্রতিটা মুভমেন্টেই কোনও ফর্মে থাকা প্লেয়ারের ছাপ স্পষ্ট ছিল। কী সুন্দর ফ্রি-কিকটা নিল। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে গোলটা পেল না। দু’তিন জনকে পিছনে ফেলে ডিফেন্স চেরা সেই দৌড়। সবশেষে মাপা ক্রস। যা ক্লিয়ার করতে গিয়ে নিজেদের গোলেই ঢুকিয়ে দিল গ্যারেথ ম্যাকআউলি। গ্রুপ পর্বে যে রকম খেলেছে সে রকম হয়তো প্রভাব ফেলতে পারেনি বেল। গোলে শটও অত বেশি নিতে পারেনি। কিন্তু বড় ফুটবলাররা তো এ রকমই হয়। দিনের দিনে দুটো টাচ নিলেও সেটাই ম্যাচ পাল্টে দেবে। নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড ম্যাচে সেই বেল-ফ্যাক্টরই তাই পার্থক্য গড়ে দিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy