Advertisement
E-Paper

অবসর প্রশ্নে ফের ধৈর্য হারালেন ক্যাপ্টেন কুল

ফেব্রুয়ারিতেই কেন এমন ফুটছে কলকাতা? শহরবাসীর মনে এই প্রশ্ন যত না বড় হয়ে উঠেছে, তার চেয়েও বড় প্রশ্ন হয়ে উঠতে পারে, রবিবাসরীয় বিকেলে শ্বশুরবাড়ির শহরে এসে ক্যাপ্টেন কুল কেন এ ভাবে মেজাজ হারালেন? চোদ্দো মাস আগে টেস্ট থেকে হঠাৎ অবসর ঘোষণার পর যে কত বার তাঁকে প্রশ্ন শুনতে হয়েছে, তার কোনও হিসাব নেই। পাকাপাকি ভাবে অবসর নিচ্ছেন কবে?

রাজীব ঘোষ

শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৩:৩৩
ধোনির সব ছবি তুলেছেন উৎপল সরকার

ধোনির সব ছবি তুলেছেন উৎপল সরকার

ফেব্রুয়ারিতেই কেন এমন ফুটছে কলকাতা? শহরবাসীর মনে এই প্রশ্ন যত না বড় হয়ে উঠেছে, তার চেয়েও বড় প্রশ্ন হয়ে উঠতে পারে, রবিবাসরীয় বিকেলে শ্বশুরবাড়ির শহরে এসে ক্যাপ্টেন কুল কেন এ ভাবে মেজাজ হারালেন?

চোদ্দো মাস আগে টেস্ট থেকে হঠাৎ অবসর ঘোষণার পর যে কত বার তাঁকে প্রশ্ন শুনতে হয়েছে, তার কোনও হিসাব নেই।

পাকাপাকি ভাবে অবসর নিচ্ছেন কবে?

প্রতি বারই হয় ঠাট্টা করে, না হয় স্টেপ আউট করে ছয় মারার ভঙ্গিতে জবাব দিয়েছেন ভারত অধিনায়ক।

কিন্তু সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের শহরে এ রকম আপাত নিরীহ একটা প্রশ্নে যে ভাবে ফেটে পড়তে দেখা গেল মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে, তাতে বুঝতে অসুবিধা হল না যে, ক্যাপ্টেন কুলেরও ধৈর্যের বাঁধ ভাঙতে পারে।

এশিয়া কাপের জন্য বাংলাদেশের বিমান ধরার আগে রবিবার বিকেলে মধ্য কলকাতার পাঁচতারা হোটেলে সাংবাদিক বৈঠকে প্রশ্নটা উঠতেই যেন সুপ্ত আগ্নেয়গিরি জেগে উঠল, ‘‘আপনারা বরং এই প্রশ্ন করে আমাকে একটা চিঠি লিখুন। তাতে অবশ্য কারণও দেখাতে হবে, কেন আমার অবসর নেওয়া উচিত।’’ এর পরই সামনের সাংবাদিকদের যেন কামানের সামনে ফেললেন ধোনি, ‘‘আপনাদের প্রশ্ন করার স্বাধীনতা আছে বলে সব রকম প্রশ্ন করতে পারেন না বোধহয়। কেন, কী প্রশ্ন করছেন, তা ভেবে তার পর প্রশ্ন করুন।’’

২০১৪ ডিসেম্বরে অস্ট্রেলিয়ায় টেস্ট সিরিজ চলাকালীন টেস্ট থেকে হঠাৎ অবসর ঘোষণার পরই তাঁকে নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল, অস্ট্রেলিয়ায় বিশ্বকাপের পরই কি তিনি ওয়ান ডে ক্রিকেটকে বিদায় জানাবেন?

গত বছর মার্চে বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হারার পর প্রশ্ন জোরালো হয়। এ বার কি তা হলে বিদায়? তখন ধোনি বলেছিলেন, ‘‘সবে তো ৩৩। যথেষ্ট ফিট। হয়তো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে বা পরে সিদ্ধান্ত নেব আগামী ওয়ান ডে বিশ্বকাপে খেলব কি না।’’

জানুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়ায় ওয়ান ডে সিরিজ হারার পর একই প্রশ্নে ধোনি মজা করে বলেন, ‘‘এটা নিয়ে একটা জনস্বার্থ মামলা করুন না। তার পর না হয় এই প্রশ্নের উত্তর দেব।’’

দু’দিন আগে নয়াদিল্লিতে এক অনুষ্ঠানে তাঁকে ঘুরিয়ে প্রশ্নটা করা হলেও হাসিমুখে ক্যাপ্টেন কুল বলেন, ‘‘গত দশ বছরে জেতা ম্যাচগুলো থেকে যত স্টাম্প তুলে নিয়ে বাড়িতে রেখেছি, সেগুলো গুনতে গুনতেই অবসর জীবন কেটে যাবে, কী বলেন?’’

শুধু কি অবসর? তাঁর নেতৃত্ব ছাড়া নিয়ে প্রশ্নও উঠেছে। যেমন গত বছর জুনে বাংলাদেশে ওয়ান ডে সিরিজ হারার পর তাঁকে শুনতে হয়, এ বার কি ওয়ান ডে ক্যাপ্টেনসি ছাড়বেন? তখন ধোনি উত্তর দিয়েছিলেন, ‘‘আমি নেতৃত্ব ছেড়ে দিলে যদি ভারতীয় ক্রিকেটের উন্নতি হয়, যদি টিম ভাল খেলতে শুরু করে, তা হলে দায়িত্ব ছাড়তে আপত্তি নেই।’’

গত চোদ্দো মাসে এত বার একই প্রশ্ন শুনতে হয়েছে যে, তিনি বেশ বিরক্ত। রবিবাসরীয় বিকেলে তাঁর কথার ঝাঁঝেই সেটা স্পষ্ট, ‘‘বারবার এক প্রশ্ন করলে কি উত্তর বদলে যায়? এক মাস বা পনেরো দিন আগেও এই প্রশ্নের যা উত্তর দিয়েছি, এখনও তো সেই একই উত্তর দেব। আগেও নাম জিজ্ঞেস করলে যেমন বলেছি মহেন্দ্র সিংহ ধোনি, এখনও সেই নাম বলব। সেটা নিশ্চয়ই বদলে যাবে না। তা হলে বারবার আমাকে যেখানে পান, সেখানে একই প্রশ্ন করেন কেন?’’

সদাহাস্য মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে শেষ কবে এমন আক্রমণাত্মক হয়ে উঠতে দেখা গিয়েছে, মনে করা কঠিন।

এ দিন সাংবাদিক বৈঠক শুরুর আগে যে রকম খোশমেজাজে ছিলেন, সেটাই তাঁর চেনা মেজাজ। এত দিন বহু অপ্রিয় প্রশ্নও সামলেছেন ওই চওড়া হাসি নিয়ে। সেই মেজাজেই প্রেস কনফারেন্সে ঢোকেন ক্যাপ্টেন কুল। কিন্তু বৈঠকের পরে ঠিক উল্টো মেজাজে পাওয়া যায় তাঁকে।

শেষে যখন জিজ্ঞাসা করা হয়, এশিয়া কাপে ব্যর্থ হলে তো ফের আপনাকে নিয়ে প্রশ্ন উঠবে, তখন তিনি একেবারে গনগনে। স্টেপ আউট করে বিশাল এক ছয় হাঁকালেন যেন, ‘‘আমাদের দেশে তো সবেতেই প্রশ্ন ওঠে। আমরা যদি অনায়াসে বিশ্বকাপ জিতি, তা হলে প্রশ্ন উঠবে আমরা অনেক আগেই পিক করে গিয়েছি। ফাইনালে হারলে প্রশ্ন তোলা হবে, আমরা ফাইনালে খেলার চাপ নিতে পারি কি না। আর ফাইনালে উঠতে না পারলেও প্রশ্ন উঠবে, ঘরের মাঠে খেলার চাপ সামলাতে পারি কি না। আমি তো কারও প্রশ্ন আটকাতে পারি না। বরং ভাল প্রশ্ন উঠলে নিশ্চয়ই তার একশো শতাংশ জবাব দেব।’’

খোঁচা দিলেন ভাগ্যের প্রসঙ্গেও। ‘‘চ্যাম্পিয়ন্স লাক? সে আবার কী? টস, বৃষ্টি, শিশিরের ক্ষেত্রে ভাগ্যের প্রভাব থাকে মানছি। কিন্তু ভাগ্যের জোরে চ্যাম্পিয়ন হওয়া যায়? মানি না।’’

সব শেষে যখন টিম বাসে উঠছেন, তখনও তাঁকে দেখে মনে হল না বিগড়ে যাওয়া মেজাজ শুধরেছে। শোনা গেল টিম বাসে বসেও নাকি গজরাচ্ছিলেন, ‘‘ইয়ে মিডিয়া কে লোগ ক্যায়া সাওয়াল করতে হ্যায়!’’

তা হলে ক্যাপ্টেন কুল আর ক্যাপ্টেন কুল রইলেন কই?

বছর পাঁচেক আগের ক্যাপ্টেনের চেয়ে তিনি এতটুকু পাল্টাননি বলে এ দিন দাবি করলেন বটে। তবে মেজাজ হারানোর ঘটনার সঙ্গে সেই দাবির মিল তো পাওয়া গেল না।

‘ক্যাপ্টেন কুল’ থেকে বরং এ বার তাঁর নতুন নাম হতে পারে ‘রাউডি ধোনি’।

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy