অতীতের শিক্ষা আই লিগের প্রস্তুতিতে কাজে লাগাচ্ছেন মোহনবাগান কোচ সঞ্জয় সেন।
সেটা কী? বৃহস্পতিবার প্রণয়-কাতসুমিদের অনুশীলন থেকে স্পষ্ট আই লিগে রেফারির সঙ্গে যাতে অবাঞ্ছিত কোনও ঝামেলা না ঘটে যায়, তার জন্য মরসুমের প্রথম দিন থেকেই সচেষ্ট হয়েছেন সবুজ-মেরুন কোচ। কারণ একটাই। গত বছর কার্ড সমস্যায় গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচগুলোতে মাশুল গুণতে হয়েছিল। যার ফলে এক সময় সাত পয়েন্টে এগিয়ে থেকেও আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়া যায়নি। সেই ভুলের পুনরাবৃত্তি চাইছেন না বাগান কোচ। এ দিন অনুশীলনের পর বলেই গেলেন, ‘‘ছেলেরা সকলে জানে, গত বছর আই লিগটা আমাদের নাগালে থেকেও কী ভাবে দূরে সরে গিয়েছিল। তাই পুরনো ভুলগুলো এ বার মাঠে নামার আগেই শুধরে নিতে হবে।’’
তার গতিপ্রকৃতি কী রকম বোঝা গেল এ দিনের অনুশীলনে। গার্সিয়ার কাছে ফিজিক্যাল ট্রেনিংয়ের পর এ দিন ডাফিকে দ্বিতীয় দলে রেখে নিজেদের মধ্যে দু’টো দল গড়ে ম্যাচ প্র্যাকটিস শুরু করেন বাগান কোচ। নিজে ছিলেন রেফারির ভূমিকায়। কিন্তু হঠাৎই একটি ফাউল হলে দেখা যায়, দ্বিতীয় টিমের রাইট ব্যাক প্রবীর দাস রেফারির ভূমিকায় থাকা সঞ্জয়ের দিকে ছুটে আসছেন। চিৎকার করে বাগানের এই ইউটিলিটি ফুটবলারকে বলতে শোনা যায়, ‘‘আমাদের নয়। ফাউলটা ওদের। অপোনেন্টের হলুদ কার্ড হবে।’’
এর পরেই দেখা যায় বাগান কোচ খেলা থামিয়ে মাঠের মধ্যেই চিৎকার করে প্রথমে বললেন, ‘‘ইয়েলো কার্ড টু প্রবীর দাস।’’ তার পরেই তিনি গোটা দলকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘‘বার বার সবাইকে বলে দিচ্ছি, কোনও অবস্থাতেই রেফারিকে চ্যালেঞ্জ করে তেড়ে যাবে না।’’ এ কথা বলেই ফের ম্যাচ শুরু করে দেন সঞ্জয়।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক ফুটবলার পরে বললেন, ‘‘কোচ এ বার মাঠের মধ্যে অবাঞ্ছিত জামেলায় না জড়াতে বলেছেন আমাদের। এ দিন সেটাই ফের মনে করিয়ে দিলেন।’’ এমনিতেই বাগানে এ বার প্রণয় হালদার, শেহনাজ সিংহ, বিক্রমজিৎ সিংহ, সৌভিক চক্রবর্তী, প্রবীর দাসের মতো টাফ প্লেয়ারদের ভিড়। তাই এই ঘটনায় স্পষ্ট তাঁদের ঠান্ডা মাথায় নব্বই মিনিট খেলার জন্য সঞ্জয় নিজেই রেফারি হিসেবে তাঁর ছেলেদের গ্রুম করছেন। বাগান কোচ নিজেও বলছেন, ‘‘রেফারিকে অসম্মান করতে কখনও শেখাই না। তবে গত বছর আমাদের আই লিগ না পাওয়ার অন্যতম একটা ফ্যাক্টর হল কার্ড। তাই এ বার শুরু থেকেই আমি বাড়তি সতর্ক। আই লিগটা জিততে এ বার আমাদের অনেক নতুন পরিকল্পনা রয়েছে।’’
এ দিনই বাগানের হয়ে অনুশীলন শুরু করলেন টিমের চতুর্থ বিদেশি এডুয়ার্ডো। তবে প্র্যাকটিস ম্যাচে তাঁকে খেলানো হয়নি। টিমের ফিজিক্যাল ট্রেনার গার্সিয়াই তাঁকে নিয়ে ট্রেনিং করেন। বান্ধবী পালোমাকে নিয়ে মাঠে আসা বাগানের এই নবাগত ব্রাজিলীয় প্র্যাকটিস দেখতে আসা বাগান সমর্থকদের দেখে অভিভূত। বাড়ি যাওয়ার আগে বলেও গেলেন, ‘‘ব্রাজিলেও যে সব টিমে খেলেছি, সেখানেও টিমের প্র্যাকটিস দেখতে এত সমর্থকের ভিড় দেখিনি। এটা ভাল ব্যাপার। এতে নিজের পারফরম্যান্সও ভাল করার অনুপ্রেরণা পাব।’’
এরই মাঝে এ দিন সনি নর্ডিকে নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে বাগান সমর্থকদের মধ্যে। জল্পনার কারণ সবুজ-মেরুনের শিবিরের তরফে প্রকাশিত আই লিগের টিম লিস্ট। যেখানে কাতসুমি, ডাফি এবং এডুয়ার্ডোরা থাকলেও নাম নেই সনি নর্ডির। সনিকে টিমে দেখতে না পেয়ে প্র্যাকটিস দেখতে আসা বাগান সমর্থকদের অনেকেই চিন্তিত। যদিও বাগান অর্থসচিব দেবাশিস দত্ত বলছেন, ‘‘সদ্য বাবা হয়েছে সনি। ওর ছেলের ভিসা হয়ে গেলেই ভারতে চলে আসবে ও।’’
এ দিকে, রবিবার চার্চিল ম্যাচের আটচল্লিশ ঘণ্টা আগে শুক্রবার সকালে কাতসুমিদের রবীন্দ্র সরোবরে প্র্যাকটিস ডেকেছেন বাগান কোচ। কিন্তু পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত এ দিন রাতেও জানালেন, ‘‘মোহনবাগান এখনও কোনও আবেদন করেনি। জানি না, রবিবার রাতে রবীন্দ্র সরোবরে ম্যাচ কী ভাবে আয়োজন করবে ওঁরা।’’ বাগান কর্তারা যা শুনে কোনও বাড়তি সতর্ক মন্তব্যই করেছেন। ক্লাব সচিব অ়ঞ্জন মিত্র বলছেন, ‘‘আমরা পরিস্থিতির উপর নজর রাখছি। আশা করছি রবিবার রাতেই রবীন্দ্র সরোবরে খেলবে মোহনবাগান।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy