মোহনবাগান প্র্যাকটিসে সনি। সোমবার এডুয়ার্ডোর সঙ্গে। ছবি: উৎপল সরকার
ফ্রি-কিক আর কর্নার থেকে তোলা নিখুঁত কিকগুলো একের পর এক আছড়ে পড়ছিল লক্ষ্যে। শীতসকালের গ্যালারি তাঁর প্র্যাকটিস দেখেই উত্তেজিত। ফেটে পড়ছিল উচ্ছ্বাসে।
দিনের আলোর মতো পরিষ্কার— সনি নর্ডি নামক ঝড়ের অপেক্ষায় প্রহর গুনছে সবুজ-মেরুন জনতা।
চোখে-মুখে পরিচিত সেই আত্মবিশ্বাস। ঠোঁটের কোণে চেনা হাসি। সোমবার অনুশীলনে নামা-বেরনো, দু’টো সময়েই তাঁকে সমর্থকদের আকুল প্রশ্ন, ‘‘পঞ্জাবের সঙ্গে খেলছেন তো?’’ মুখে কিছু বললেন না সোনালি চুল মোহনবাগান হার্টথ্রব। শুধু হাত তুলে আশ্বস্ত করে গেলেন।
দলবদলের বাজারে তাঁর দর উঠেছিল প্রায় দেড় কোটি। ইস্টবেঙ্গলেরও বড় অঙ্কের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন বাগানেই থাকবেন বলে। হাইতিয়ান স্ট্রাইকার সনির আজ মঙ্গলবার তৃতীয় মরসুম-অভিষেক হচ্ছে সবুজ-মেরুন জার্সিতে। জোসে ব্যারেটোর মতোই ক্রমশ বাগানের বটগাছ হয়ে ওঠা সনি এ বার যেন মাঠে নামার আগেই তাঁর ডালপালা ছড়াতে শুরু করেছেন। সনি ফেরায় টিমের শক্তি বাড়বে, এক বাক্যে স্বীকার করছেন তাঁর সতীর্থরা। বাগানের স্বদেশি তারকা জেজে বললেন, ‘‘সনি থাকা মানে আমাদের টিমের শক্তি বেড়ে গেল।’’ অধিনায়ক কাতসুমির গলায় একই সুর। ‘‘সনি ফিট হয়ে গিয়েছে। ও খেললে আমাদের বিরাট সুবিধে। ও তো আমাদের টিমে স্পেশ্যাল।’’ বাগান কোচ সঞ্জয় সেন এই ম্যাচে সনিকে রেখে টিম তৈরি করে ফেললেও খেলার আগের দিনও সাংবাদিক সম্মেলনে তা ভাঙলেন না। ‘‘আঠারো জনের টিমে সনি থাকছেই,’’ এটুকুই বলছেন সঞ্জয়।
আগের ম্যাচেই জোড়া গোল করেছেন ডাফি। মিনার্ভা পঞ্জাব এফসি ম্যাচে তাঁর সঙ্গী সনি। বাগানে যেন মহাযোগ। অনেক কর্তা মনে করছেন স্কটিশ-হাইতি যুগলবন্দিতে ফের আই লিগ খেতাবের আলো ঢলে পড়বে একশো পঁচিশ পেরোনো তাঁবুতে। সনি আসায় অনুশীলনেই ডাফির মুখে যেন আরও জেদ। বাগান তাঁবু ছাড়ার আগে বলে গেলেন, ‘‘প্র্যাকটিসে তো সব ঠিকঠাক চলছে। মাঠেও সাফল্য আসবে আশা করছি।’’
তারকা ঝড়ের সামনে আই লিগে নবাগত মিনার্ভার লড়াই কতটা কঠিন? পঞ্জাবের দলটির কোচ সুরিন্দর সিংহ বললেন, ‘‘মোহনবাগান যথেষ্ট শক্তিশালী টিম। তবে আমার ছেলেরাও ভাল খেলছে। বেশ কয়েকজন আগেই আই লিগ খেলেছে। বড় ক্লাবের জার্সি পরারও অভিজ্ঞতা আছে।’’
বাগানে কিংশুক দেবনাথ ও শেহনাজ সিংহের চোট রয়েছে। কিংশুকের জায়গায় দলে ঢুকতে পারেন এডু। সম্ভবত চার বিদেশিকেই আজ প্রথম এগারোয় রাখবেন সঞ্জয়। আক্রমণে বলবন্তের জায়গায় শুরু করতে পারেন দেশের অন্যতম সেরা ফরোয়ার্ড জেজে। বলবন্ত জানালেন, তাঁর হাল্কা সর্দি-জ্বর রয়েছে। সনি-জেজে-বলবন্ত পাশে যে-ই থাকুন, ডাফির লক্ষ্য একটাই— ‘‘আমাকে গোল করতেই হবে। আমাদের তিন পয়েন্ট পেতেই হবে।’’
নতুন টিম হলেও মিনার্ভার বিরুদ্ধে পঞ্জাবের নামার আগে সনি-ডাফিদের কোচ সতর্ক। এ দিন প্র্যাকটিসের আগে ঘণ্টাখানেক ছাত্রদের ক্লাস নেন বাগানের হেডমাস্টার। জানা গেল, আগের লাজং ম্যাচের ভিডিও দেখিয়ে নিজেদের ভুলত্রুটিগুলো নিয়ে মূলত আলোচনা করেছেন সঞ্জয়। বাগান কোচ যখন পঞ্জাব-বধের অঙ্ক কষছেন, তখন সবুজ-মেরুন কর্তারা এখনই ভাবনায় রবীন্দ্র সরোবরে আই লিগ ডার্বি করা যায় কি না। আলোচনা শুরু করে দিয়েছেন দেবাশিস-সৃঞ্জয়রা।
তারকাখচিত দল। প্রথম দু’ম্যাচে মসৃণ জয়। ডাফির গোলে ফেরা। কর্তাদের ডার্বি অঙ্ক। এত সবের মধ্যেও আসল কিন্তু সনি-আগমনী সুর। যা মাঘের শীতেও বসন্তের আমেজ এনেছে বাগানে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy