Advertisement
E-Paper

কর্তারা যুদ্ধে যাচ্ছেন শ্রীনিবাসনের মদতেই, আইনি প্রত্যাঘাতে সৌরভরা

অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় টেস্টে বিরাট কোহালির ভারত কতটা আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে ঝাঁপাতে পারবে, সময় বলবে। তবে সুপ্রিম কোর্ট-নিযুক্ত পর্যবেক্ষকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে দিলেন কোহালিদের বোর্ডের কর্তারা।

সুমিত ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:৪৪
শ্রীনি ও সৌরভ: অতীতে ব্যবধান থাকলেও এখন কিন্তু অবস্থান এক।

শ্রীনি ও সৌরভ: অতীতে ব্যবধান থাকলেও এখন কিন্তু অবস্থান এক।

অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় টেস্টে বিরাট কোহালির ভারত কতটা আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে ঝাঁপাতে পারবে, সময় বলবে। তবে সুপ্রিম কোর্ট-নিযুক্ত পর্যবেক্ষকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে দিলেন কোহালিদের বোর্ডের কর্তারা। পর্যবেক্ষকদের নির্দেশাবলী নিয়ে প্রশ্ন তুলে দেশের সর্বোচ্চ আদালতে তাঁরা নতুন আবেদন জানালেন সোমবার।

কোনও এক নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসনের মদতেই এমন আগ্রাসী মনোভাব প্রদর্শন। রবিবার রাজধানীতে বিক্ষুব্ধদের নিয়ে বৈঠক করেন শ্রীনি। সেখানে কত জন হাজির ছিলেন, তা নিয়ে নানা মত শোনা যাচ্ছে। কেউ বলছেন, ১৫জন মতো এসেছিলেন। আবার কারও কারও মত, সংখ্যাটা মেরেকেটে ১০-১২। ঘটনা হচ্ছে, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ১০-১২ সংখ্যাটাও নেহাত খারাপ নয়।

বেঙ্গালুরুতে কোহালিরা প্রত্যাবর্তন ঘটাতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় থাকতে পারে। শ্রীনি যে প্রবল ভাবেই বোর্ডের ক্ষমতার কেন্দ্রে ফিরেছেন, তা নিয়ে সন্দেহ নেই। দিল্লির বৈঠকে তিনিই প্রস্তাব দেন, বিদ্রোহের আগুন জ্বালিয়ে আদালতে আবেদন করো। তাঁর অনুগামী বোর্ডের কোষাধ্যক্ষ অনিরুদ্ধ চৌধুরি পর্যবেক্ষকদের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে ঠিক সেটাই করলেন সোমবার। যুদ্ধং দেহি মনোভাবের এখানেই শেষ নয়। আক্রমণাত্মক একটি চিঠিও বোর্ড কর্তারা লিখতে চলেছেন সুপ্রিম কোর্ট-নিযুক্ত প্রশাসকদের নেতা বিনোদ রাই-কে। তাতে তাঁরা সাফ প্রশ্ন তুলবেন বলে ঠিক করেছেন যে, আপনি কী করে অধিকার লঙ্ঘন করে একটার পর একটা নির্দেশ দিচ্ছেন? দেশের সর্বোচ্চ আদালত-নিযুক্ত পর্যবেক্ষকদের উদ্দেশে এমন পত্রাঘাতের ঘটনা নজিরবিহীন। কারও কারও মনে হচ্ছে, এর পর সুপ্রিম কোর্টও চরম সিদ্ধান্ত নিয়ে রাজ্য সংস্থাতেও না পর্যবেক্ষক বসিয়ে দেয়।

দেশ জুড়ে ক্রিকেট প্রশাসকদের মনোভাব এর পরেও কুছ পরোয়া নহি। হয় এসপার, নয় ওসপারের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন তাঁরা। দিল্লির বৈঠকে নাকি কেউ কেউ এমনও বলে ফেলেন যে, সকলকে নির্বাসিত করে দিলে দিক। আমরা লড়াই ছাড়ব না।

রাতের দিকে কলকাতায় বসে আবার মনে হচ্ছে, শ্রীনি অনুগামীদের যুদ্ধং দেহি মনোভাবটা কোনও শিরোনামই নয়। আরও বিস্ফোরক খবর হচ্ছে, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়-দের সিএবি-ও এ বার আদালতমুখী। যারা কি না লোঢা কমিটির সুপারিশ নিয়ে প্রচ্ছন্ন ভাবে লোঢার পক্ষে থেকেছে এত দিন। আর প্রকট ভাবে শ্রীনি শিবিরের বিপক্ষে গিয়েছে বরাবর। প্রয়াত জগমোহন ডালমিয়া পছন্দ করতেন না শ্রীনিকে। তাঁর ছেলে, বর্তমান সচিব অভিষেকও করবেন বলে ইঙ্গিত নেই। আর সৌরভ? তাঁর সঙ্গে তো শ্রীনির সম্পর্ক নিয়ে ‘গুরু গ্রেগ চ্যাপেল পার্ট টু’ লেখা হবে কি না, সেই তর্ক চলেছে এত দিন।

বোর্ড প্রশাসনে আইনি ঝামেলা তবু কাকতালীয় ভাবে একজোট করে দিয়েছে সৌরভ ও শ্রীনিকে। সোমবারেই সিএবি ওয়ার্কিং কমিটি বৈঠক ছিল। সেখানে পর্যবেক্ষকদের নির্দেশের বিরুদ্ধে আদালতে যাওয়ার ভাবনা সর্বসম্মত ভাবে গৃহীত হয়েছে। পর্যবেক্ষকের দল দিন দুই আগে একটি নির্দেশাবলী পাঠিয়েছে বোর্ড অনুমোদিত সমস্ত রাজ্য ক্রিকেট সংস্থাকে। তার একটি নির্দেশ নিয়ে প্রবল আপত্তি উঠেছে।

এই নির্দেশটিতে বলা হয়েছে, ন’বছর কাটিয়ে ফেলা কোনও ব্যক্তি সেই সংস্থায় সাধারণ সদস্য হিসাবেও থাকতে পারবেন না। অর্থাৎ, সিএবি অনুমোদিত কোনও ক্লাবেও কেউ যদি ন’বছর কাটিয়ে ফেলে থাকেন, তিনি রাজ্য সংস্থায় সেই ক্লাবের প্রতিনিধি হিসাবে আসতে পারবেন না। সাধারণ সদস্য হিসাবেও তাঁর থাকা নিষিদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। একজন ব্যাখ্যা দিলেন, ‘‘এটা মানতে গেলে ক্লাব থেকে শুরু করে রাজ্য সংস্থা সব জায়গা ফাঁকা হয়ে যাবে।’’ আরও দাবি, সুপ্রিম কোর্টের মূল রায়ে এমন নির্দেশ ছিল না। সেই কারণেই পর্যবেক্ষকদের ই-মেল চ্যালেঞ্জ করে বোর্ডের মতোই আদালতমুখী সিএবি।

সৌরভকে সোমবার রাতে যোগাযোগ করে হলে তিনি নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে চাননি আদালতে যাওয়া হবেই কি না। তবে পুরোপুরি অস্বীকারও করেননি। বললেন, ‘‘আমরা বৈঠকে বিস্তারিত ভাবে এটা নিয়ে আলোচনা করেছি। সদস্যরা সর্বসম্মত ভাবে যা মত দেবেন, সেটাই করা হবে। দেখা যাক, কী হয়।’’

আরও পড়ুন:

ইব্রাহিমোভিচ থাকবেন, আশাবাদী মোরিনহো

জোর জল্পনা চলছে, নয়াদিল্লিতে রবিবার শ্রীনি-পরিচালিত বৈঠকে টেলি কনফারেন্সে সৌরভ ও অভিষেক ডালমিয়া যোগ দিয়েছিলেন কি না। যদিও এ ব্যাপারে চূড়ান্ত করে কিছু জানা যায়নি। ওয়াকিবহাল মহলের তথ্য, বৈঠকে যদি না-ও যোগ দিয়ে থাকেন সৌরভরা, সারা ভারতের প্রশাসকেরা এখন এক বিন্দুতে। সমস্ত সংস্থাতেই সুনামির মতো আছড়ে পড়েছে প্রশাসকদের ই-মেল। ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে সমস্ত ক্রিকেট সংস্থার দফতর। শুধু বোর্ড বা সিএবি নয়, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আরও অনেক রাজ্য সংস্থাই প্রশাসকদের ভূমিকাকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করছে। তার মধ্যে গদিচ্যুত বোর্ড প্রেসিডেন্ট অনুরাগ ঠাকুর বা অপসারিত সচিব অজয় শিরকে-দের রাজ্য সংস্থা থাকলেও অবাক হওয়ার নেই। বোর্ড-সহ প্রত্যেক সংস্থা সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করার পাশাপাশি পর্যবেক্ষকদের প্রধান বিনোদ রাই-কে চিঠিও লিখছে। দেশ জুড়ে প্রশাসকদের এমন আইনি পদক্ষেপ ও অভিনব বিদ্রোহের ঝড় কখনও ভারতীয় ক্রিকেটে ঘটেনি।

আগামী কয়েক দিন তাই মাঠের মধ্যে কোহালিদের সিরিজে ফেরার যুদ্ধ চলবে। আর মাঠের বাইরে চলবে কোহালিদের কর্তাদের বাঁচার লড়াই।

ফের কাজিয়া: সোমবার সিএবি-র ওয়ার্কিং কমিটি বৈঠকে প্রাক্তন কোষাধ্যক্ষ বিশ্বরূপ দে-র প্রবেশ নিয়ে এক প্রস্থ কাজিয়া হয়ে গেল। বিশ্বরূপ দাবি করেন, তিনি যে লোঢা সুপারিশের পর অযোগ্য হয়ে গিয়েছেন, তার কোনও পরিষ্কার ব্যাখ্যা এখনও তাঁকে কেউ দিতে পারেনি। কোনও কোনও সদস্য পাল্টা বলেন, সুপ্রিম কোর্টই তো এ নিয়ে রায় দিয়ে দিয়েছে। সামান্য উত্তেজনা ও তর্কাতর্কির পরে বিশ্বরূপ অবশ্য সভা ত্যাগ করে বেরিয়ে যান।

N. Srinivasan Sourav Ganguly BCCI COA Supreme Court Lodha Commision
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy