রিও গেমস শুরুর মাত্র বারো দিন আগে জোরদার ধাক্কা খেল ভারতের অলিম্পিক্স প্রস্তুতি!
দেশের অন্যতম পদক সম্ভাবনা বলা হচ্ছিল যাঁকে, সেই ফ্রিস্টাইল কুস্তিগীর নরসিংহ যাদব ডোপের দায়ে ধরা পড়েছেন নাডা-র পরীক্ষায়। যা নিয়ে চক্রান্তের অভিযোগ এবং দেশকে কলঙ্কিত করার পাল্টা অভিযোগে তৈরি হয়েছে জটিল বিতর্ক।
নরসিংহের বি-নমুনাতেও নিষিদ্ধ মেথানডিয়েনোন অ্যানাবলিক স্টেরয়েড পাওয়ায় তাঁকে সাময়িক নির্বাসিত করা হয়েছে। আটকে রাখা হয়েছে অলিম্পিক্স অ্যাক্রেডিটেশন। গোটা বিষয়টি নিয়ে শুনানি শুরু করছে জাতীয় ডোপ বিরোধী সংস্থার (নাডা) শৃঙ্খলারক্ষা প্যানেল। যাদের রায়ের উপর ঝুলে নরসিংহের চূড়ান্ত রিও-ভবিষ্যৎ। নাডা ডিরেক্টর জেনারেল নবীন অগ্রবাল জানিয়েছেন, মূত্রের নমুনায় প্রাথমিক ভাবে মেথানডিয়েনোন মেলায় নরসিংহের উপস্থিতিতেই তাঁর বি-নমুনা খোলা হয় এবং সেটিও পজিটিভ হওয়ায় নিয়ম মেনে ভারতীয় অলিম্পিক্স কমিটি তাঁকে সাময়িক নির্বাসনে পাঠিয়েছে।
লাস ভেগাসে গত বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ৭৪ কেজি ক্যাটেগরিতে ব্রোঞ্জজয়ী নরসিংহের রিওর রাস্তা অবশ্য শুরু থেকেই ছিল কণ্টকময়। একই বিভাগে রিওর টিকিটের দাবিদার ছিলেন বেজিং ও লন্ডন অলিম্পিক্সে ৬৬ কেজিতে যথাক্রমে ব্রোঞ্জ ও রুপোজয়ী সুশীল কুমার। কিন্তু বহু টালবাহানার পর সুশীলের বদলে জাতীয় ফেডারেশন নরসিংহকে রেখেছিল রিওর দলে। প্রবল প্রতিবাদ করেছিলেন সুশীল। তাঁর দাবি ছিল অলিম্পিক্স ট্রায়াল নেওয়া হোক। যে সেরা তাকেই পাঠানো হোক। সেই দাবি খারিজ হওয়ায় সুশীল বনাম নরসিংহ বিবাদ গড়ায় দিল্লি হাইকোর্ট পর্যন্ত। কিন্তু আদালতেও পরাজিত হন সুশীল।
সেই পটভূমিতে আচমকা অলিম্পিক্সের ঠিক মুখে নরসিংহের ডোপ কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়ার মধ্যে বিভিন্ন মহল ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছে। ফেডারেশন প্রেসিডেন্ট ব্রিজভূষণ সিংহ-সহ কতার্রা প্রায় সকলে একমত, নরসিংহ ষড়যন্ত্রের শিকার। গত মঙ্গলবার নরসিংহের ডোপ পরীক্ষার ফল জানার পরেই কেন্দ্রীয় ক্রীড়া মন্ত্রককে বিষয়টি খতিয়ে দেখার আর্জি জানান ব্রিজভূষণ। যার পরেই নাডা শৃঙ্খলারক্ষা প্যানেল গড়ে শুনানি শুরু করে।
তিনি ধূর্ত চালের শিকার হয়েছেন দাবি স্বয়ং নরসিংহেরও। এ দিন ফোনে নরসিংহকে ধরা হলে ছাব্বিশ বছরের কুস্তিগীরের গলায় একইসঙ্গে ঝরে পড়ল আত্মবিশ্বাস ও দুঃখ। বললেন, ‘‘এটা আমার বিরুদ্ধে একটা বিশাল ষড়যন্ত্র। এত দিন কুস্তি করছি, কোথাও কখনও ডোপ পরীক্ষায় ধরা পড়িনি। জীবনে কখনও কোনও নিষিদ্ধ ওষুধ ব্যবহার করিনি। বরং চিরকাল প্রচণ্ড সতর্ক থেকেছি। তাই আজ না হয় কাল প্রকৃত সত্যটা বেরিয়ে আসবেই।’’ বলতে বলতে বুজে আসছিল তাঁর গলা। নিজেকে সামলাতে না পেরে বন্ধ করে দিলেন ফোনও।
এ দিকে, নাম না করলেও নরসিংহের অভিযোগের তির যাঁর দিকে সেই সুশীল এ দিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হবেন বলে প্রথমে শোনা গিয়েছিল। সুশীলের কোচ তথা শ্বশুর সৎপাল সিংহ ছত্রসল স্টেডিয়ামে ডেকে পাঠিয়েছিলেন সংবাদমাধ্যমকে। কিন্তু সুশীল শেষ পর্যন্ত আসেননি। ধরেননি কোনও ফোনও। তবে নিজের বক্তব্য জানাতে সুশীল বেছে নেন সোশ্যাল মিডিয়াকে। টুইট করেন, ‘সম্মান ব্যাপারটা তাদের জন্য যারা এটা অর্জন করতে পারে। সম্মান কখনও চেয়ে বা দাবি করে পাওয়া যায় না। জয় হিন্দ!’
তবে সাংবাদিক বৈঠক ডেকেও তাতে না এসে নানা জল্পনা উস্কে দিয়েছেন সুশীল। প্রশ্ন উঠছে, নাডা প্রথমে রিওগামী গোটা টিমকে ডোপমুক্ত ঘোষণা করার পরেও হঠাৎ করে নরসিংহ ধরা পড়লেন কী ভাবে? সৎপাল অবশ্য নরসিংহের সমালোচনায় নিজের রাশ টানার কোনও চেষ্টা করেননি। ভর্ৎসনার সুরে সুশীলের মেন্টর বলে দেন, ‘‘যা হল সেটা ভারতীয় কুস্তির চরম লজ্জা। দেশকে কলঙ্কিত করল নরসিংহ। আমি স্তম্ভিত, হতাশ।’’ পালোয়ানদের সম্মান আদায় করা ‘গুরু’ আরও যোগ করেন, ‘‘সুশীলের বিরুদ্ধে লড়াইটা তো নরসিংহ জেতেইনি। কী এমন চেয়েছিল সুশীল? এই না যে, অলিম্পিক্স ট্রায়াল হোক। ও তো একবারও বলেনি, আমার দু’টো অলিম্পিক্স পদক আছে বলে আমিই যাব। হাইকোর্টে হারলেও সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার রাস্তা খোলা ছিল আমাদের। কিন্তু তখন অলিম্পিক্সের মাত্র এক মাস বাকি থাকায় আমরা নরসিংহের প্রস্তুতিতে বিঘ্ন ঘটাতে চাইনি বলে সুপ্রিম কোর্ট যাইনি।’’ ডোপের দায়ে নরসিংহের নির্বাসনের পর কুস্তি ফেডারেশন এবং কেন্দ্রীয় ক্রীড়া মন্ত্রকের সুশীলের কথা ভাবা উচিত বলেও সৎপাল মনে করছেন। বলেন, ‘‘ফেডারেশনের উচিত সুশীলকে অনুরোধ করা। সেটা হলে রিওতে নামার বিষয়টা আমরা নিশ্চয়ই বিবেচনা করব।’’
তবে সৎপাল যতই আশায় বুক বাঁধুন ওয়াকিবহাল মহল বলছে, ডোপ কলঙ্কিত নরসিংহ রিও যেতে না পারলেও তাঁর বদলে সুশীলকে অলিম্পিক্সের দলে ফেরানোর রাস্তা এখন আর খোলা নেই। অলিম্পিক্স স্কোয়াডে পরিবর্তন ঘটানোর শেষ তারিখ চলে গিয়েছে ১৮ জুলাই। ফলে রিওর কুস্তির ম্যাটে ৭৪ কেজির লড়াইয়ে সম্ভবত নামা হবে না ভারতের। ফেডারেশনের এক সূত্র জানাচ্ছে, নরসিংহকে বাদ দিয়ে সোমবারই রিও রওনা দেবে ভারতীয় কুস্তির বাকি স্কোয়াড।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy