কঠোর সংযম, নিয়মিত যোগাভ্যাস, মনঃসংযোগের সাধনা এবং শরীরচর্চা— যোগফল আজকের বিরাট কোহালি।
এই বিরাটকে দশ বছর আগে যারা দেখেছেন, তাঁদের আজকের এই বিরাট কোহালিকে দেখে বেশ অবাকই লাগে। সেই কোহালি দিল্লির অলিগলিতে ঘুরে বেড়ানো আর পাঁচ জন সাধারণ তরুণ-যুবকের চেয়ে একটুও আলাদা ছিল না।
এই অবস্থায় কোচ রাজকুমার শর্মার হাতে পড়া। রাজকুমার বলছিলেন, ‘‘ছেলেটা কী ছিল আর কী হয়েছে, সেটা ভাবলে আমার আজও অবাক লাগে।’’
সেই বিরাট কোহালি ফিরোজ শাহ কোটলার গ্যালারিতে উঠে দর্শক পিটিয়েছিলেন। খেলা চলাকালীন মাঠের বাইরে থেকে কেউ কটূ মন্তব্য করলেই তার দিকে কটমট করে তাকাতেন। মাঝে মাঝে আবার মেজাজও হারিয়ে ফেলতেন।
এই বিরাট কিন্তু সম্পূর্ণ অন্য মানুষ। এর কৃতিত্ব অনেকটা রাজকুমারেরই। বলছিলেন, ‘‘সমানে বলতাম, একটু মাথা ঠান্ডা করে খেলার চেষ্টা কর বাবা। না হলে বড় হতে পারবি না। সচিন তেন্ডুলকরের মতো ঠান্ডা মাথাটাই যে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সবচেয়ে দরকারি জিনিস, এটা ওকে বোঝাতে আমার কয়েক বছর লেগে যায়। এই ব্যাপারে রমাকান্ত আচরেকরের পরামর্শের কথা ওকে বারবার বলতাম।’’ মেডিটেশন করার পরামর্শ দিলে তরুণ বিরাট নাকি বলতেন, ‘ও আমার কম্মো নয়। আমার বয়সি একটা ছেলে বসে বসে ধ্যান করবে, এ আবার হয় নাকি?’ সেই বিরাট এখন ঘণ্টার পর ঘণ্টা যোগাভ্যাস করেন, মেডিটেশন করেন।
দশ বছর আগের বিরাট আমিষ ছাড়া কিছু খেতেনই না। বাটার চিকেন, কাবাব, পরোটা ছাড়া মুখে তুলতেন না কিছু। এই ব্যাপারে রাজকুমার বলেন, ‘‘ফাস্ট ফুডের কী ভক্ত ছিল ও, জানেন না। এ জন্য কত বকাঝকাও করেছি ওকে। ওর মা-ও ওকে কম বকেননি। অথচ এখন দেখুন, কী সংযমী। প্রায় নিরামিশাষী হয়ে গিয়েছে। আমিষ খেলেও তা একেবারে তেল-মশলা ছাড়া। জাঙ্ক ফুড ছুঁয়েও দেখে না।’’
এতটা পড়ে পাঠকের মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে, কী করে এমন আমূল পরিবর্তন ঘটল বিরাটের? ভারত অধিনায়কের ঘনিষ্ঠ মহলের বক্তব্য, প্রথম ধাক্কাটা তাঁর জীবনে আসে তাঁর বাবার আকস্মিক মৃত্যুর পর। ২০০৬-এর ডিসেম্বরে কোটলায় কর্নাটকের বিরুদ্ধে রঞ্জি ট্রফির ম্যাচ চলাকালীন দিল্লির ড্রেসিংরুমে তাঁর বাবার মৃত্যুর খবর আসে হঠাৎ। সারা দিন ব্যাট করার পর সন্ধ্যায় বাবার অন্ত্যেষ্টিতে যোগ দেন ১৮ বছরের তরুণ। সে দিন থেকেই টিন এজার ছেলেটি বড় হয়ে উঠেছিল। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রবেশ করার পর যে স্কিলের মতো ফিটনেসটাও জরুরি ও ফিটনেসের শিখরে থাকার জন্য খাওয়াদাওয়ায় কঠোর সংযম প্রয়োজন, এটা বিরাট নাকি উপলব্ধি করেন অনুষ্কা শর্মার সঙ্গে দেখা হওয়ার পর। অনুষ্কার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক শুরুর পর থেকে নিজেকে আমূল পাল্টে ফেলেন বলে তাঁর বিরাটের ঘনিষ্ঠ মহলের ধারণা।