Advertisement
E-Paper

ম্যাচ নিয়ে নিরাপত্তার লিখিত আশ্বাস চাইল পাক বোর্ড

জগমোহন ডালমিয়া উপর থেকে নিশ্চয়ই উসখুস করছেন যে, চূড়ান্ত জটটা পেকে রয়েছে। অথচ তিনি, ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ সংগঠনের সেরা কারিগর কি না নীচে নামতে পারছেন না!

গৌতম ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০১৬ ০৪:০৪
শাহরিয়ার খান

শাহরিয়ার খান

জগমোহন ডালমিয়া উপর থেকে নিশ্চয়ই উসখুস করছেন যে, চূড়ান্ত জটটা পেকে রয়েছে। অথচ তিনি, ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ সংগঠনের সেরা কারিগর কি না নীচে নামতে পারছেন না!

স্থানীয় ক্রিকেটমহলে এ রকম একটা গুঞ্জন বুধবার রাতে শোনা যাচ্ছিল। শেষ হইয়াও হইল না শেষের মতো একটা সুতোর টুকরোর উপর এখনও ঝুলে রয়েছে ইডেনে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের ভবিষ্যৎ। বিকেল পাঁচটায় স্থানীয় ক্রীড়ামোদীদের উল্লসিত করে আইসিসি ঘোষণা করে দেয় যে, ১৯ মার্চ ধর্মশালার অনুষ্ঠেয় ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ কলকাতায় যাচ্ছে। নিরাপত্তার কারণে ধর্মশালা থেকে ম্যাচ সরাতেই হচ্ছে। মনে করা হচ্ছিল, ম্যাচের শেষ ওভার এরই সঙ্গে শেষ হয়ে গেল। ভাবা যায়নি, এর পরেও ভারত-পাক ম্যাচ ঘিরে নতুন নাটক অবশিষ্ট থাকতে পারে।

ইডেনে যখন ১৯ তারিখের ম্যাচ নিয়ে প্রবল তোড়জোড় তৈরি হয়ে গিয়েছে, তখন পাকিস্তান আচমকা বলতে থাকে, যত ক্ষণ না ভারত সরকারের কাছ থেকে সুস্পষ্ট আশ্বাস পাচ্ছে, তত ক্ষণ তারা সফরে আসবে না। কলকাতায় ম্যাচ গিয়েছে শুনে শাহিদ আফ্রিদিরা তখন উচ্ছ্বসিত। বলতে থাকেন, ইডেনে আজ অবধি কোনও ওয়ান ডে ম্যাচ ভারতের কাছে হারিনি। এর পর হঠাৎ বোর্ড থেকে তাঁরা খবর পান, ভারত অভিযানের উপর ‘গো স্লো’ আরোপ করা হয়েছে। যত ক্ষণ না লিখিত নিরাপত্তার আশ্বাস পাওয়া যাচ্ছে, তত ক্ষণ টিম যাবে না। পাক বোর্ডের চেয়ারম্যান শাহরিয়র খান রাতে বিবৃতি দেন, ‘‘কলকাতায় খেলতে অসুবিধে নেই। কিন্তু তার আগে ভারত সরকারকে আমাদের নিশ্চয়তা দিতে হবে।’’ পাক সাংবাদিকদের শাহরিয়র বলেন, ‘‘শিবসেনা, আপ, কংগ্রেস— প্রত্যেকটা দলই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছে। কেন্দ্র যত ক্ষণ না নিরাপত্তা বলয়ে ঘিরে দিচ্ছে, আমরা টিম পাঠানোর ঝুঁকি কী করে নিতে পারি?’’ পাক ক্রিকেট মহলের অবশ্য আশা, এই জট আগামী বারো থেকে চব্বিশ ঘণ্টায় কেটে যাবে। রাতে শোনা যায়, ধর্মশালায় যে সংগঠন ভারত-পাক ম্যাচ নিয়ে হুমকি দিয়েছিল, সেই ‘অ্যান্টি টেররিস্ট ফ্রন্ট’ ইডেনেও পিচ খুঁড়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে! তাদের সাফ কথা, কোনও ভাবেই পাকিস্তানকে এ দেশে খেলতে দেওয়া হবে না। যদিও কলকাতায় এরা কতটা কী করতে পারবে, তা নিয়ে অনেকেই সংশয়ে। মধ্য রাতে বোর্ড কর্তাদের কেউ কেউ বলছিলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের কাছ থেকে যথেষ্ট আশ্বাস পাওয়া গিয়েছে। কম্যান্ডো বলয়ে ঘিরে দেওয়া হবে পাক টিমকে। কয়েকটি সূত্রে সরকারের কাছে খবর এসেছে কিছু জঙ্গি এ দেশে ঢুকেছে। সরকার ন্যূনতম ঝুঁকি নেবে না। এই মত বিশ্বাস করলে পাকিস্তানের সফর বাতিল করার কোনও কারণ নেই। সে ক্ষেত্রে ভারতীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক যথেষ্ট তৎপরতা দেখাচ্ছে।

সবিস্তারে দেখতে ক্লিক করুন

এ দিন সকাল থেকে সিএবি-তে রটে যায়, ম্যাচ আসছে। দিনের শেষে ক্রীড়ামোদীদের কাছে সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত ভাবে বসন্তের বোনাস হিসেবে এই ম্যাচ হাজির হলেও তলায় তলায় কর্মকর্তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন গত সাত দিন ধরে। যুগ্ম-সচিব অভিষেক ডালমিয়া দফায় দফায় ফোনে কথা বলেন আর মেল পাঠান বোর্ড সচিব ও প্রেসিডেন্টকে। এর মধ্যে বোর্ড প্রেসিডেন্ট শশাঙ্ক মনোহর আবার আইসিসি চেয়ারম্যান। প্রচুর টালবাহানার পর সিএবি কর্তাদের যুক্তি মেনে নেন তিনি। আইসিসি ঘোষণা করে দেয়, কলকাতার নাম। ধন্য ধন্য পড়ে যায় স্থানীয় ক্রিকেটমহলে। দুপুরে সিএবিতে আসা অনেকেই বলতে থাকেন, ক্ষমতায় আসার পর সৌরভ-অভিষেক জুড়ির এটাই সেরা পারফরম্যান্স। এ ভাবে ম্যাচ ছিনিয়ে আনা দেখলে জগমোহন ডালমিয়াও গর্বিত হতেন।

দিল্লিতে বোর্ড সচিব অনুরাগ ঠাকুর যখন তীব্র আক্রমণ করছেন হিমাচলের মুখ্যমন্ত্রী বীরভদ্র সিংহকে, তখন সিএবিতে অভিনন্দিত হচ্ছেন অভিষেক-সৌরভরা। কেউ সৌরভকে বলছেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় এসেই ভারত-পাক ম্যাচ! এ তো তোমার লর্ডসে আবির্ভাব! অভিষেককেও বলা হচ্ছে, যে ভাবে ম্যাচ করতে চাওয়া আরও দু’টো কেন্দ্র, মোহালি এবং বেঙ্গালুরুকে হঠানোর জন্য তিনি নিরন্তর বোর্ড কর্তাদের পিছনে লেগে ছিলেন, সেটা চমকপ্রদ। নভেম্বরের মাঝামাঝি অভিষেক বিসিসিআই-কে লেখেন, গত দশ বছর বিশ্বমানের টুর্নামেন্টগুলির মধ্যে ভারতের কোনও ম্যাচই কলকাতা পায়নি! চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি হয়েছে। বিশ্বকাপ হয়েছে। ভারতের খেলা পেয়েছে মোহালি, বেঙ্গালুরু, আমদাবাদ, জয়পুর, মুম্বই, দিল্লি, চেন্নাই, নাগপুর। কলকাতা একটাও পায়নি। এ বার যদিও ফাইনাল ম্যাচ পেয়েছে, কোনও নিশ্চয়তা নেই তাতে ভারত খেলবে। তাই বোর্ড যেন একটা ভারত ম্যাচ দিয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রতি সুবিচার করে। তার পর থেকে ক্রমান্বয়ে সৌরভ এবং তিনি বোর্ড কর্তাদের উপর চাপ রেখে গিয়েছেন।

এই ম্যাচ নিয়ে মোহালির দাবি জোরালো ছিল। পাকিস্তান ওখানে খুব স্বচ্ছন্দ। প্রচুর লোক সীমান্ত পেরিয়ে ওখানে খেলা দেখতে আসতে পারেন। একাধিক ভারত-পাক ম্যাচ মোহালিতে হয়েওছে। কিন্তু সিএবি কর্তারা বলতে থাকেন, যারা ধর্মশালায় বিক্ষোভ দেখানোর জন্য তৈরি ছিল, তারা পাঁচ ঘণ্টার দূরত্বের মোহালিতে আসবে না, তার নিশ্চয়তা আছে? বেঙ্গালুরু-কর্তা ব্রিজেশ পটেল এই মুহূর্তে বোর্ডের শাসকগোষ্ঠীর প্রীতিভাজন নন। তাই কলকাতার দর্শকাসন অনেক বেশি, এই যুক্তি বোর্ডকর্তারা সহজেই মেনে নেন।

ইডেনে ম্যাচ হওয়ার কথা ঘোষণার পর হালকা সমস্যা তৈরি হয়, ধর্মশালায় যাঁরা টিকিট কেটে বসে রয়েছেন, সেই কুড়ি-বাইশ হাজার লোককে নিয়ে। এঁদের ইডেনে জায়গা দিতে হলে স্থানীয় ক্রীড়ামোদীদের জন্য যথেষ্ট আসন থাকবে না। সিএবি কর্তারা বলতে থাকেন, পাকিস্তান ম্যাচকে সাধারণ ম্যাচের মতো দেখলে হবে না। ধর্মশালায় যাঁরা টিকিট কেটেছেন বা বক্স কিনেছেন, তাঁদের জায়গা দিতেই হবে। কেউ কেউ বললেন, খেলাটা যে ইডেনে হচ্ছে, সেটাই বিশাল ব্যাপার। ২০১১ সালে বিশ্বকাপের ম্যাচ ইডেন থেকে ছিনিয়ে নেয় আইসিসি। তখন মনোহর ভারতীয় বোর্ডের কর্তা। ডালমিয়ার কোনও অনুরোধ তখন আইসিসি শুনতে চায়নি। কারও কারও মনে হচ্ছে, পাকিস্তান এলে সেটা নিছক বোনাস হবে না। হবে এক রোম্যান্টিক ন্যায়বিচারও। ন্যায্য ম্যাচ চলে গিয়েছিল। যেটা আশা করা যায়নি, সেটা কি না চলে এল!

ডালমিয়া বেঁচে থাকলে অবশ্য বলতেন, রোম্যান্স পরে হিসেব করবেন। আগে তো ম্যাচটা হোক!

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy