Advertisement
E-Paper

ব্রিটিশ সিংহ শাসনের সঙ্গে পূজারার ক্লাস বিরাটের

‘বিউটিফুল বিশাখাপত্তনম। আনলেস ইউ আর ইংল্যান্ড বোলার’। ওয়াইএসআর রেড্ডি স্টেডিয়ামের পশ্চিমে যে পাহাড় মাথা তুলে দাঁড়িয়ে, সেই দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন নাসের হুসেন।

রাজীব ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:৪৭
যে জুটি গুঁড়িয়ে  দিল ইংরেজ স্পিন-দর্প। বৃহস্পতিবার বিশাখাপত্তনমে।

যে জুটি গুঁড়িয়ে দিল ইংরেজ স্পিন-দর্প। বৃহস্পতিবার বিশাখাপত্তনমে।

‘বিউটিফুল বিশাখাপত্তনম। আনলেস ইউ আর ইংল্যান্ড বোলার’।

ওয়াইএসআর রেড্ডি স্টেডিয়ামের পশ্চিমে যে পাহাড় মাথা তুলে দাঁড়িয়ে, সেই দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন নাসের হুসেন।

ইঙ্গিতটা বুঝতে অসুবিধা হল না নিশ্চয়ই। একটা ছোট্ট কথাতেই ইংল্যান্ড বোলারদের যা খোঁচা মারলেন প্রাক্তন ইংল্যান্ড অধিনায়ক, জ্বালা ধরানোর জন্য যথেষ্ট।

বৃহস্পতিবার দিনভর জাফর আনসারি, মইন আলি, আদিল রশিদদের যে ভাবে নাভিশ্বাস তুললেন বিরাট কোহালি, তাতে তাঁদের এই ছবির মতো সুন্দর শহরকে নরক মনে হতেই পারে।

যে স্পিনত্রয়ীকে নিয়ে চব্বিশ ঘণ্টা আগেই গর্বে বুক ফুলিয়ে বড় বড় কথা বলেছিলেন ইংরেজ অধিনায়ক অ্যালিস্টার কুক, তাঁদের নিয়ে কোহালি-পূজারারা সকাল থেকে বিকেল রীতিমতো ছেলেখেলা করে গেলেন।

কোহালিয়ানা কী জিনিস, এ বার তা বুঝে গেল ইংল্যান্ড।

দিনের শেষে স্টেডিয়ামের জায়ান্ট স্ক্রিনে ভেসে উঠছিল একের পর এক সোশ্যাল মিডিয়ার মেসেজ। বেশির ভাগই বিরাট কোহালিকে নিয়ে। যিনি এ দিন জীবনের পঞ্চাশতম টেস্ট খেলে ১৪ নম্বর সেঞ্চুরিটা করে ফেললেন। তার মধ্যে একটা মেসেজ ছিল, ‘‘আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অনেক দেখেছি। তুমিই প্রথম আমাদের ডাবল সেঞ্চুরি দেখার তৃপ্তি দাও ভিকে।’’

মেজাজে বিরাট। -শঙ্কর নাগ দাস

মেসেজটা যখন ভেসে উঠল, তখনই আদিল রশিদকে ডিপ কভারে পাঠিয়ে দৌড়ে একটা রান নিয়ে দেড়শোয় পৌঁছলেন ক্যাপ্টেন। মনে হল, ব্যাট তুলে শান্ত অভিবাদন গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে একবার মেসেজটার দিকেও তাকিয়ে নিলেন। শেষ ছ’টা সেঞ্চুরির মধ্যে চারটেতেই দেড়শোর উপর রান। এ বারেরটাও সে রকমই হবে, না ইনদওরের মতো দুশোর মাইলস্টোন ছুঁয়ে ফেলবেন, তা শুক্রবারই বোঝা যাবে।

এ দিন অবশ্য আর একটা মাইলফলক ছুঁয়ে ফেললেন বিরাট। এই প্রথম কোনও ভারতীয় টেস্ট ক্যাপ্টেন একই ক্যালেন্ডার বছরে তিনটে দেড়শো প্লাস ইনিংস খেলে ফেললেন। আর কত রেকর্ড করবেন? এ বার তো বোধহয় সচিন রেকর্ড তেন্ডুলকরের মতো তাঁকেও বিরাট রেকর্ড কোহালি না বলতে হয়।

বিকেলে খেলার পর স্টেডিয়ামের অস্থায়ী টিভি স্টুডিওয় বসে ভিভিএস লক্ষ্মণ বলছিলেন, ‘‘ওর মধ্যে যা ডিসিপ্লিন দেখছি, তাতে মনে হচ্ছে না এ বার দুশোটা মিস হবে। ফ্রন্টফুট, ব্যাকফুট, পুল, মাথার পজিশন— ওর সবই দেখছি নিখুঁত। আমি তো কাল ডাবল সেঞ্চুরিটা দেখার ইচ্ছে নিয়েই মাঠে আসব।’’

সারা দিন কোহালির সঙ্গে লেগে ছিলেন আত্মবিশ্বাসে টগবগ করে ফোটা চেতেশ্বর পূজারা। মিড উইকেটের উপর দিয়ে ছয় হাঁকিয়ে সেঞ্চুরিতে পৌঁছেই বুঝিয়ে দেন কতটা আত্মবিশ্বাসী তিনি।

কিন্তু তাঁর দশ নম্বর টেস্ট সেঞ্চুরিটা কি হত? দু-দু’বার রান আউট হতে হতে বেঁচে যান পূজারা। দু’বারই ক্যাপ্টেনের কল না শুনেই প্রায় হাফ ক্রিজ পর্যন্ত চলে গিয়েছিলেন। ফিরে যেতে গিয়েই বিপদে পড়েন, যা কোনও রকমে সামলান। বোঝাপড়াটা যে মোটেই ঠিক হচ্ছিল না, সেটা বুঝে নিয়ে লাঞ্চে তাঁকে নিয়ে আলাদা করে বসেন ক্যাপ্টেন। পরের সেশনে প্রত্যেকটা শর্ট রানের ক্ষেত্রে কী করবেন, তা নিয়ে নিজেদের মধ্যে একটা প্রায় চুক্তি করে নেন। খেলা শেষে পূজারা নিজেই জানান ঘটনাটা। তার পর থেকে অবশ্য আর কোনও সমস্যা হয়নি তাঁদের রানিং বিটুইন দ্য উইকেটসে।

ভাগ্যদেবতা অবশ্য এ দিন বিরাটকেও আশীর্বাদও করেছেন একবার। বেন স্টোকসের বল পুল করতে গিয়ে লং লেগে আদিল রশিদের হাতে প্রায় ক্যাচ দিয়েই ফেলেছিলেন। সেই ক্যাচ ফেলে যে কী ভুল করলেন পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত লেগস্পিনার, সারা দিন ধরে তা টের পেয়েছেন হাড়ে-হাড়ে। যেমন রাজকোটে প্রথম সকালেই তিনটে ক্যাচ ফেলে বাকি চার দিন টের পেয়েছিল ভারত।

প্রায়শ্চিত্ত করার কম চেষ্টা এ দিন করেননি ইংরেজরা। অগস্টের পর টেস্ট ক্রিকেটে এই ফিরলেন জিমি অ্যান্ডারসন। তাঁকেই ইংরেজ বোলারদের মধ্যে আজ সবচেয়ে উজ্জ্বল দেখিয়েছে। কিন্তু বাকিদের দশা কহতব্য নয়। স্টুয়ার্ট ব্রড, বেন স্টোকস, আদিল রশিদ— সবাই বিধ্বস্ত। কোহালিকে যত রকম ভাবে বিদ্ধ করা যায়, করার চেষ্টা করেছিলেন কুকরা। নতুন বলে, পুরনো বলে। পেস, স্পিনে। ফিল্ডিং কখনও ছড়িয়ে, কখনও আঁটসাঁট করে। কোহালিকে চাপে রাখার চেষ্টায় কোনও ত্রুটি ছিল না। কিন্তু ওই একটা ক্যাচ ফেলে দেওয়া মানে পুজোর মরসুমে হাওড়া থেকে বিশাখাপত্তনমের ট্রেন মিস করার মতো ‘দুর্ঘটনা’। অন্য কোনও ট্রেনে জায়গা পাওয়া, জাস্ট অসম্ভব।

সারা দিনে যে চারটে উইকেট পড়ল, তার কোনওটাই স্পিনারদের নেওয়া নয়। তিনটে জেমস অ্যান্ডারসনের, একটা স্টুয়ার্ট ব্রডের। সারা দিন ধরে বিশাখাপত্তনমের বাইশ গজে প্রচুর চেষ্টা-চরিত্র করেও ন্যূনতম প্রভাব ফেলতে পারেননি ইংল্যান্ডের স্পিন-ত্রয়ী।

বিশেষজ্ঞদের ভবিষ্যদ্বাণী যদি ঠিক হয়, তা হলে দ্বিতীয় দিন বল ঘুরতে শুরু করবে হয়তো। পূজারা সাংবাদিক বৈঠকে এসেও তাঁর এই অনুমানের কথা জানিয়ে গেলেন। বললেন অ্যান্ডারসনও। কিন্তু তার আগেই যদি ভারত চারশো-সাড়ে চারশো তুলে ফেলে, তা হলে তো ইংরেজদের যন্ত্রণা আরও বাড়বে বই কী!

কুকদের দলের সাতটা বাঁ-হাতির অ্যান্টিডোট হিসেবে রবিচন্দ্রন অশ্বিনের সঙ্গে আনকোরা অফ স্পিনার জয়ন্ত যাদবকে টেস্ট ক্যাপ দেওয়া হল। যা রবি শাস্ত্রীর হাত থেকে পেলেন হরিয়ানার এই ২৭ বছরের তরুণ।

মাত্র ১৯ দিন আগে এই মাঠেই যাঁর ঘূর্ণি ঝড়ে নিউজিল্যান্ড ওয়ান ডে-তে কুপোকাত হয়েছিল, সেই অমিত মিশ্রকে বসিয়ে জয়ন্তকে আনার সিদ্ধান্তটা এ দিন মাঠে এক নাছোড়বান্দা কুকুর ঢুকে পড়ায় আগেভাগে চা বিরতি ঘোষণা হয়ে যাওয়ার মতো অভাবনীয় নয় ঠিকই। তবু ফাটকা তো বটেই। যে ফাটকাটা খেললেন বিরাট ও কুম্বলে, সেটা লেগে গেলে কিন্তু এই টেস্টে জয় ভারতের কপালে নাচছে।

পরের দিকে উইকেট ভাঙলে আর ভারতের স্পিনাররা ঘূর্ণিঝড় তুললে তো কথাই নেই। ভারতীয় শিবির যে সেটা ভেবেই গেমপ্ল্যান ছকতে শুরু করেছে, শেষ বিকেলে পূজারার কথায় সেই ইঙ্গিতটা পাওয়া গেল।

টিভি ক্যামেরার সামনে ‘‘পরের ইনিংসে আমরা আর ব্যাট করতে চাই না’’ বলে গেলেন যখন!

Virat Kohli Cheteshwar Pujara english bowlers India vs England Test Series
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy