Advertisement
E-Paper

‘রাজহাঁসটাকে কেটে ফেললে সোনার ডিমটাও যে আর পাবে না আইসিসি’

মাঠের ভারত-অস্ট্রেলিয়া দ্বৈরথকে না ছাপিয়ে যায় মাঠের বাইরের এই প্রশাসনিক লড়াই। আইসিসি চেয়ারম্যান ভারতেরই শশাঙ্ক মনোহরের নেতৃত্বে ভারতীয় বোর্ডের লভ্যাংশের হার কমানোর প্রস্তাব পাশ করার চেষ্টা চলছে। ভারত প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং তাদের কথা শোনা না হলে আগামী জুন মাসে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি বয়কটের সিদ্ধান্তও নিতে পারে বোর্ড। সুনীল গাওস্কর ইতিমধ্যেই তোপ দেগেছেন। এ বার মনোহরের আইসিসি-র ওপর চাপ বাড়িয়ে ভারতীয় বোর্ডের হয়ে ব্যাট ধরলেন আর এক প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক। আনন্দবাজার-কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে ক্রিকেটের নিয়ামক সংস্থাকে তুলোধনা করলেন প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক রবি শাস্ত্রী। তুলে দেওয়া হল নির্বাচিত অংশ।আনন্দবাজার-কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে ক্রিকেটের নিয়ামক সংস্থাকে তুলোধনা করলেন প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক রবি শাস্ত্রী। তুলে দেওয়া হল নির্বাচিত অংশ।

সুমিত ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:৩৭
বিশ্ব ক্রিকেটের বাজার বলতে ধোনি-কোহালিরা। আইসিসি-র আয়ের আশি শতাংশ আসে তাঁদের জন্যই।

বিশ্ব ক্রিকেটের বাজার বলতে ধোনি-কোহালিরা। আইসিসি-র আয়ের আশি শতাংশ আসে তাঁদের জন্যই।

ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া

দেশের মাটিতে এটাই বিরাটদের সবচেয়ে কঠিন সিরিজ হতে যাচ্ছে। ভারতই এগিয়ে থেকে শুরু করবে। তবে অস্ট্রেলিয়া দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে আমি অবাক হব না। ওদের দলে বরাবর ওটাই সবচেয়ে নজরে পড়ার মতো দিক। সহজে ছাড়ে না।

বিরাটদের জন্য পরামর্শ

কী দুর্ধর্ষ খেলেছিল ছেলেটা অস্ট্রেলিয়াতে গিয়ে ওই সিরিজটায়! চারটে টেস্টে চারটে সেঞ্চুরি! ক্রিকেট পৃথিবীটাই পাল্টে গেল কোহালির। আমার ভেবে ভাল লাগে যে, সেই মুহূর্তটায় ওর সঙ্গে ছিলাম। যে সিরিজটা আসছে, তার জন্য আমি ক্যাপ্টেন কোহালিকে একটাই পরামর্শ দেব। তোমার সেরা আগ্রাসী মানসিকতাকে অস্ত্র করে ঝাঁপিয়ে পড়ো শুরু থেকে। মনে রেখো, প্রথম টেস্ট কিন্তু জিততেই হবে। রক্তের স্বাদ পাওয়া অস্ট্রেলিয়া ভীষণ বিপজ্জনক। ওদের প্রথমে জিততে দিও না।

ড্রেসিংরুম মিস করেন না

ধুর, ধুর। জীবন এগিয়ে চলে ভাই। আমি দারুণ একটা সময় কাটিয়েছি ভারতীয় দলের সঙ্গে। আমি তৃপ্ত যে, অনিল কুম্বলের হাতে একটা তৈরি দল তুলে দিতে পেরেছি। ওই অধ্যায়টা এখন অতীত।

আইসিসি বনাম ভারতীয় বোর্ড

এতক্ষণে একটা ভাল প্রশ্ন করলেন। এটা অনেক জরুরি বিষয়। আইসিসি বলছে, সব দেশ নাকি সমান লভ্যাংশ পাবে। আমার পাল্টা প্রশ্ন, কেন বাবা? এর মধ্যে কোনও বিগ থ্রি, লিট্‌ল থ্রি-র ব্যাপারই নেই। আইসিসি-র ঘরে আশি শতাংশ টাকা ঢুকছে ভারতীয় ক্রিকেটের দয়ায়। শাইলকের মতো এসে তারা তো মেপে-মেপে মাংসপিণ্ড কেটে নিতে চাইছে না। শুধু বলছে, আমরা কুড়ি শতাংশ লভ্যাংশ চাই। এতেও আপত্তি!

কী নিয়ে তর্ক

• শ্রীনিবাসনের আমলে তৈরি হয়েছিল বিগ থ্রি। ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ছিল এই তিন দেশের জোটে।

• চুক্তি হয়, বহুল জনপ্রিয় ভারতীয় ক্রিকেটারেরাই প্রায় ৮০ শতাংশ আয় আনে বলে আইসিসি লভ্যাংশের ২০ শতাংশ পাবে। বেশি লভ্যাংশ পাচ্ছিল অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডও।

• মনোহরের নেতৃত্বে নকশা বদলে ফেলে সব দেশের জন্য সমান লভ্যাংশের পুরনো মডেলে ফিরে যাওয়ার জোরালো চেষ্টা চলছে। মনোহর একপ্রস্ত ভোটাভুটি সেরেই ফেলেছেন। ভারত বিপক্ষে ভোট দিয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে সময় চেয়েছে।

• ২০১৫ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত পুরনো নকশায় ভারতের প্রাপ্য হতো ২৯৭৩.৫ কোটি টাকা। সব দেশের সমান অধিকারের নীতিতে মারাত্মক ভাবে কমে দাঁড়াবে ১৭৩৭.২ কোটি।


রাজহাঁস আর সোনার ডিম

আইসিসি-তে কেউ কি ঈশপের গল্পটা পড়েনি? কে জানে বাবা! যাক, আমিই তা হলে মনে করিয়ে দিতে চাই যে, ভারতীয় ক্রিকেট হল সোনার ডিম পাড়তে থাকা রাজহাঁস। ওই সোনার ডিম দিয়েই তো তোমাদের চলছে। কোষাগার ভরছে। আর সেটাকেই কি না তোমরা কাটতে আসছ! আর সম্পূর্ণ অন্যায় ভাবে। কী আবদার! জিম্বাবোয়ে যা টাকা পাবে, আমাকেও তাই নিতে হবে। ওহে আইসিসি, রাজহাঁস কেটে ফেললে তোমাদের সোনার ডিমও যে বন্ধ হয়ে যাবে, সেটা ভেবে দেখেছ? তখন তো ক্রিকেটবিশ্বই আক্রান্ত হবে।

প্রমাণ করতে হবে আমিই ভাল

বিস্ফোরক শাস্ত্রী। চান সুবিচার।

একজন ভারতীয় ক্রিকেটার হিসাবে আমি আইসিসি-র কাছে জানতে চাই, এখন লভ্যাংশ নিয়ে নতুন করে ঘোঁট পাকাতে চাইছ কেন? বছর দু’য়েক আগের আইসিসি বৈঠকেই তো সকলে খসড়াপত্র পড়ে ভোট দিয়ে ভারতের পক্ষে ২০ শতাংশ লভ্যাংশ পাওয়ার ব্যাপারটা পাশ করেছিল। তখন তো কেউ এ নিয়ে মুখ খোলেনি। আমি কারও নাম নিতে চাই না। কিন্তু না বলে পারছি না যে, এখনকার আইসিসি কর্তারা যেন বোঝাতে চাইছে ‘আমি আগের লোকদের চেয়ে ভাল’ ছিলাম। এই লোক দেখানো ব্যাপারটা অত্যন্ত বিরক্তিকর হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এত নীতিকথার কী আছে? আর কী সেই নীতি? জিম্বাবোয়ে যা পাবে, কোহালিরাও তাই পাবে? এটা কোন দেশের নিয়ম-নীতি বলতে পারেন?

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি বয়কট

শুনছি, এটা নিয়ে ঝড় চলছে। আমি বলব, করা উচিত নয়। বয়কট মানে একদম চরম সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে। তবে এটাও ঠিক যে, এখন বিশ্বকাপের ছড়াছড়ি দেখছি। পঞ্চাশ ওভারের বিশ্বকাপ, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, তার ওপর আবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। খুব বেশি বিশ্বকাপ, খুব বেশি বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। কাকে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ধরব? চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিটা এর মধ্যে দুর্বলতম। আমার এই টুর্নামেন্টের কথা মনে আছে কারণ গতবার ভারত এটা জিতেছিল। বাকি কারা ওই টুর্নামেন্ট জিতেছে, বলতে পারব না। কিন্তু পঞ্চাশ ওভারের বিশ্বকাপ কারা কারা জিতেছে, জানতে চাইলে প্রত্যেকটা দেশের নাম গড়গড় করে বলে দেব। আমার মনে হয় ক্রিকেটভক্তদের কাছেও ওটাই বিশ্বকাপ।

হায় বাংলাদেশ, তুমিও

শ্রীলঙ্কা ছাড়া আর কোনও দেশ ভারতের পাশে দাঁড়াল না দেখে আমি বিস্মিত। অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডের কথা না হয় ছেড়ে দিলাম। কিন্তু বাংলাদেশ কী করে ভারতের বিরুদ্ধে গেল? ওদের টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়া থেকে শুরু করে সমস্ত অগ্রগতিটাই তো ভারতের হাত ধরে। কত বার ওদের অনুরোধে আমরা দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলে এসেছি। একই কাজ করল জিম্বাবোয়েও। এই সে দিনও ভারতীয় দল গিয়ে ওয়ান ডে খেলে এল ওদের দেশে। ধোনিও সেই সফরে গিয়েছিল।

আরও পড়ুন:

আইপিএল নিয়ে বোর্ডের নির্দেশিকা

আমাদের দেশেও তো বক্সিং ডে টেস্ট হতে পারে। না হলে আমাদের সংস্কৃতি মেনে দিওয়ালি টেস্ট হতে পারে। ‘পোঙ্গল’ টেস্ট হতে পারে। আইসিসি-তে এত লম্বাচওড়া কথা বলছে। এ বার অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড আমাদের দেশে এসে ‘পোঙ্গাল’ টেস্ট খেলুক। না হলে আমরাও যাব না। ওদের কোষাগার আমরা ভরতে যাব কেন? ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াতে গেলে আমাদের পাঁচ-ছ’টা করে টেস্ট খেলতে হয়। অথচ, ওরা এসে তিন-চারটে করে টেস্ট খেলে। এ সব জামাই-আদর বন্ধ করে দাও। এ বার থেকে ওদেরও বলা হোক, আমাদের দেশে ছয় টেস্টের সিরিজ হবে। খেলতে হয় খেলো, না হলে যা।

বাকি বিশ্ব বনাম ভারত

বাকি বিশ্বের আবার কী আছে? চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি বেশি হিট না কি আইপিএল? আমি তো বলব, আইপিএলের দিন আরও বাড়িয়ে দাও। এটাই তো লোকে দেখে। প্রত্যেকটা ম্যাচে মাঠ ভর্তি। টিআরপি দুর্ধর্ষ। আরও পনেরো দিন বাড়িয়ে দিয়ে দশ টিমের করে দাও। একটা নক-আউট আইপিএল চালু করা যেতে পারে। প্রধান আইপিএল হল এপ্রিল-মে মাসে। আর নক-আউট পর্বটা হোক বছরের শেষের দিকে। এই নক-আউট পর্বটা করা হোক বিদেশে কোথাও। অতীতে দক্ষিণ আফ্রিকা বা দুবাইয়ে আইপিএল হয়েছে। সেগুলোও তো সুপারহিট।

বোর্ডের লড়াইকে সেলাম

বিক্রম লিমায়ের প্রতি আমার সম্মান বেড়ে গিয়েছে। উনি ক্রিকেট প্রশাসনের লোকই নন। তবু বুঝেছেন, আমাদের দেশের প্রতি অন্যায় হচ্ছে। আইসিসি বোধহয় ভেবেছিল, ভারতীয় বোর্ড একটা কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। যা খুশি বুঝিয়ে দিয়ে প্রস্তাবে সই করিয়ে নেব। সেটা আটকেছেন মিস্টার লিমায়ে।

লড়াই, লড়াই, লড়াই চাই

ভারতীয় বোর্ডের উচিত এটা নিয়ে সর্বাত্মক লড়াই চালানো। আইসিসি থেকে লভ্যাংশ কমে গেলে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের পরিকাঠামোগত উন্নয়ন ধাক্কা খাবে। আমাদের সময়ে ক’টা মাঠে ডাইভ দিয়ে বল আটকানো যেত? এখন ভারতের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মাঠেও দুর্দান্ত আউটফিল্ড। কেউ ঝাঁপাতে ভয় পায় না। এটা সম্ভব হয়েছে আইসিসি-তে দীর্ঘ লড়াই করে আমরা নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি বলে। বিনা যুদ্ধে নিজেদের প্রাপ্য ছেড়ে দেব কেন?

Ravi Shastri ICC Money Distribution Policy
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy