ভারতীয় বোর্ডের সাড়া জাগানো এবং মহাতারকাখচিত উপদেষ্টা কমিটি, মনোনয়নের চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই বিশাল প্রশ্নের মুখে! আরও বেশি করে প্রশ্নের মুখে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সিনিয়র দলে সম্ভাব্য ভূমিকা!
মঙ্গলবার ভারতীয় বোর্ড জানিয়ে দেয়, আসন্ন বাংলাদেশ সফরে রবি শাস্ত্রীই অন্তর্বর্তিকালীন কোচের দায়িত্বে থাকবেন। সাপোর্ট স্টাফও বিশ্বকাপে যা ছিল তাই থাকবে। গোটা কাঠামোটাই অপরিবর্তিত থাকবে।
এই অবধি কোনও সমস্যা নেই। অনেকে তো এটাই আন্দাজ করেছিলেন যে শাস্ত্রীকে নমো নমো করে বাংলাদেশ সফরটা করিয়ে দেওয়া হবে। তার পর সৌরভ হয়ে যাবেন নতুন হাই পারফরম্যান্স ম্যানেজার। তাঁর নির্বাচন নতুন পরামর্শদাতা কমিটি মাধ্যমেই করিয়ে নেবে বোর্ড। যাতে বিতর্ক না হয়। তার পর প্রয়োজন হলে সৌরভ কমিটিতে থেকে সিনিয়র ভারতীয় দলের দেখাশোনা করবেন। অথবা তেমন প্রয়োজন পড়লে কমিটি ছেড়ে করবেন।
কিন্তু মোদ্দা কথাটা থাকবে খুব পরিষ্কার। নীচে একজন কোচ রেখে সৌরভই আগামী দু’বছর ভারতীয় দল দেখাশোনার দায়িত্বে থাকবেন।
সোমবার রাতেও এই মর্মে বোর্ড কর্তাদের মধ্যে কথা হয়। ঠিক হয়, সচিনদের কমিটির মেয়াদ হবে এক বছর। কিন্তু সৌরভ পাবেন দু’বছরের চাকরি। ভাল করলে যা আরও বাড়বে।
এই অবধি ঠিক ছিল। হঠাৎই সকালে রবি শাস্ত্রী জানিয়ে দেন, তিনি শুধু এই বাংলাদেশ সফরে দল নিয়ে যেতে রাজি নন। দুবাই থেকে সোমবার রাতে মুম্বই ফেরা শাস্ত্রী এবিপিকে সকাল দশটা নাগাদ বলেন, ‘‘কোনও প্রশ্নই ওঠে না একটা সফরে দল নিয়ে যাওয়ার। আমায় দায়িত্ব দিতে হলে পুরো এক বছর দিতে হবে। ওয়ান ইয়ার অর নাথিং।’’
এ-ও বলেন, তিনি কোচ হবেন না। কোচ ছিলেন ডানকান ফ্লেচার। তাঁর জায়গায় বোর্ডকে আরও একটা ‘ফ্লেচার’ আনতে হবে। ‘শাস্ত্রী’ বিকল্প কোচ হবে না। তাঁকে করতে হলে টিম ডিরেক্টর করতে হবে।
তখন মনে হতে থাকে এতদ্বারা বধ্যভূমির দিকে আরওই এগিয়ে গেলেন শাস্ত্রী। তাঁকে খারিজ করা ডালমিয়াদের আরও সহজ হয়ে গেল। এত সব বায়নাক্কা মেনে বোর্ড তাঁকে বাছবে কেন?
অথচ পরের এক ঘণ্টার মধ্যে বোর্ড ঘোষণা করে, বাংলাদেশে অন্তর্বর্তিকালীন কোচ হয়ে যাচ্ছেন শাস্ত্রী। একটা সফরের জন্য যিনি যাচ্ছেন তাঁকে অন্তর্বর্তিকালীন কেন বলা হচ্ছে, এই নিয়ে তীব্র সংশয় তৈরি হয়। কোচ বলা হল কেন, তা নিয়েও। দ্রুতই বোর্ড সচিব জানান, ওটা কোচ নয়, টিম ডিরেক্টর হবে। তখন আরও পরিষ্কার হয়ে যায় যে, শাস্ত্রীর শর্তই মেনে নিচ্ছে বোর্ড।
তা হলে তাঁকে এক বছর ডিরেক্টর পদে রাখার শর্তও কি তারা মেনে নিল?
যদি তাই হয়, সৌরভ টিমের সঙ্গে হাই পারফরম্যান্স ম্যানেজার হিসেবে থেকে কী করবেন? শাস্ত্রী তো তাঁকে ঘেঁষতেই দেবেন না টিমের কাছে।
মিডিয়া-বোর্ড-ক্রিকেটার মহলকে অবাক করে দিয়ে এর ঘণ্টাখানেকের মধ্যে শাস্ত্রীর সমর্থনে টেস্ট অধিনায়ক বিরাট কোহলির বিবৃতি ভেসে আসে। সেখানে কোহলি বলেছেন, ‘‘শাস্ত্রী এমন একজন মানুষ যিনি দায়িত্ব থেকে পিছিয়ে যান না। যিনি গায়ে বল নিতে তৈরি। যিনি সব সময়ই সামনে তাকাচ্ছেন। অসাধারণ একজন মানুষ যিনি টিমের কাছে থাকলে এ রকম তরুণ দল আরও উৎসাহ পায়। ওঁর মধ্যে একটা ব্যাপার আছে। যখন কথা বলেন, প্লেয়াররা শ্রদ্ধার সঙ্গে শোনে। আমরা প্লেয়াররা চাই ওঁকে এ ভাবেই টিমের সঙ্গে দেখতে। উনি থাকা মানে আমাদের টিমের মনোবল বেড়ে যাওয়া।’’
কোহলির বিবৃতি থেকে পরিষ্কার, তিনি শাস্ত্রীকে কোনও মতেই ছাড়তে চান না। শাস্ত্রী-কোহলি অন্তরঙ্গ সম্পর্কের কথা সকলের জানা। কিন্তু এই ভঙ্গিতে ভারত অধিনায়ক টিম ডিরেক্টরের হয়ে সওয়াল করবেন, কেউ স্বপ্নেও ভাবেননি। তা-ও এমন সময়ে যখন শাস্ত্রীর বিদায় মনে করা হচ্ছিল আসন্ন।
কোহলির বিবৃতি দীর্ঘ চর্চা শুরু করে দেয় দেশ জুড়ে যে, তা হলে কি সৌরভের টিমের দায়িত্ব নেওয়ার রাস্তা বন্ধ হয়ে গেল? প্লেয়াররা কি তা হলে পরিষ্কার ভাবে শাস্ত্রীকে চাইছে? কোহলি বলে দিলেন তাঁর মত। ধোনিকে তো জিজ্ঞেস করারও দরকার নেই। সবাই জানে তিনি কী বলতে পারেন। প্লেয়ারদের সমর্থনই কি নিষ্পত্তি করে দিল গাঙ্গুলি-শাস্ত্রী টানাপোড়েনের? না কি প্লেয়ারদের বক্তব্য গুরুত্ব দিয়ে দেখার প্রয়োজনই নেই? এর আগেও তো কখনও দেখা হয়নি।
জল্পনা যখন রাতের দিকে বাড়ছে, একই সঙ্গে কোনও কোনও বোর্ড ঘনিষ্ঠরা বলতে থাকেন, শাস্ত্রীকে নিশ্চয়ই অন্য কোনও সুবিধে দিয়ে বোর্ড বাংলাদেশ যেতে রাজি করাল। এর পর সৌরভই হবে। আর পাক্কা দু’বছর পাবে।
বিশ্বরূপ দে যাচ্ছেন টিমের পূর্ণাঙ্গ ম্যানেজার হয়ে। তাঁর কোনও ‘শাস্ত্রী’ ছিল না। ছবি: উৎপল সরকার।
সৌরভের ঘনিষ্ঠমহল আবার বলতে থাকে, এতই যদি অনিশ্চিত হয় তাঁর কাজকর্মের পরিধি, সৌরভ কোন দুঃখে কমেন্ট্রি, কলাম লেখা, ব্যবসা, আটলেটিকো, দাদাগিরি সব ছেড়ে ইন্ডিয়ান টিমের জন্য সময় দেবেন? সৌরভ নিজে এবিপিকে বলেন তাঁর এই মুহূর্তে কিছু বলার নেই। শনিবার বোর্ডের কাছে সব কিছু জানার প্রতীক্ষায় রয়েছেন।
বাংলাদেশ সফরে নির্বাচিত প্রশাসনিক ম্যানেজার বিশ্বরূপ দে-কে চেপে ধরে মিডিয়া। বিশ্বরূপ বলেন, ‘‘সর্বময় কর্তৃত্ব তো প্রেসিডেন্টের। এর উত্তর একমাত্র উনিই দিতে পারবেন। আমার কোনও ধারণা নেই।’’ বোর্ড মহলে কেউ কেউ বলতে থাকেন, শ্রীনি প্রেসিডেন্ট হলে এবং সৌরভকে টিমের কর্তা বানাতে চাইলে কি এত কিছু জিজ্ঞেস করতেন নাকি? স্ট্রেট করে দিতেন। পাত্তাই দিতেন না অন্য কোনও মনোভাব!
কেউ কেউ অবশ্য তখনও বলতে থাকেন বাংলাদেশের পর সৌরভই দায়িত্বে। প্লেয়াররা যা-ই বলুক, কিছু আসবে-যাবে না। শনিবারের বৈঠকই সব কিছু চূড়ান্ত করে দেবে। মঙ্গলবার রাত অবধি তাই হয়ে থাকল। ভারতীয় ক্রিকেটের মঙ্গলবার দাঁড়িয়ে থাকল শনিবারের প্রতীক্ষায়। যদি না মধ্যিখানে আরও নাটক আবির্ভূত হয়।
তর্কযোগ্য ভাবে ভারতীয় ক্রিকেটের সর্বকালের সেরা প্রশাসক ডালমিয়ার দীর্ঘ প্রশাসনিক জীবনের বৈশিষ্ট্যই থেকেছে তাঁর সিদ্ধান্তের দ্রুততা আর স্বচ্ছতা। প্রচণ্ড চাপের মুখেও কখনও তিনি ফ্রন্টফুট প্লে ছাড়েননি। আপাতত সেটা দূর ইতিহাস।
এখনকার ডালমিয়াকে মোবাইলে ধরে পরিস্থিতির আন্দাজ পাওয়া বিরাট কোহলিকে আউট করার চেয়ে সামান্য কম সহজ!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy