Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

খেলল সুনীল, গোল পেল রবিন

ম্যাচটা দেখতে বসে মনে পড়ছিল মোহনবাগান কোচ হিসেবে আমার দ্বিতীয় জাতীয় লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার শেষ ম্যাচটা। গোয়ায় ম্যাচটা ছিল চার্চিলের সঙ্গে। যেটা ড্র করলেই চ্যাম্পিয়ন হয়ে যেত ওরা। আর আমাদের লিগ জিততে দরকার ছিল ম্যাচটা জেতা। সে দিন গোয়ানদের আলট্রা ডিফেন্সিভ মানসিকতাই আমাদের জিততে সাহায্য করেছিল।

ম্যাচের নায়ক রবিন। ছবি: এআইএফএফ।

ম্যাচের নায়ক রবিন। ছবি: এআইএফএফ।

সুব্রত ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৩:১৩
Share: Save:

ভারত-২ (রবিন-২)

শ্রীলঙ্কা-০

ম্যাচটা দেখতে বসে মনে পড়ছিল মোহনবাগান কোচ হিসেবে আমার দ্বিতীয় জাতীয় লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার শেষ ম্যাচটা। গোয়ায় ম্যাচটা ছিল চার্চিলের সঙ্গে। যেটা ড্র করলেই চ্যাম্পিয়ন হয়ে যেত ওরা। আর আমাদের লিগ জিততে দরকার ছিল ম্যাচটা জেতা। সে দিন গোয়ানদের আলট্রা ডিফেন্সিভ মানসিকতাই আমাদের জিততে সাহায্য করেছিল।

সাফ কাপে এ বার যা দেখছি, ভারতের গ্রুপে নেপালও বেশ শক্তিশালী দল। শ্রীলঙ্কা আগের ম্যাচে সেই নেপালকে হারিয়েছিল। কিন্তু জানত এ ধরনের মাঝারিমানের টুর্নামেন্টে দেশের মাটিতে শক্তিশালী ভারতকে হারানো মোটেই সহজ নয়। তাই ড্রয়ের খেলা ওরা ভারতের সঙ্গে খেলতে গিয়েছিল। ভেবেছিল, এ দিন এক পয়েন্ট পেলেই তিন দেশের গ্রুপ থেকে অন্তত দ্বিতীয় হয়ে সেমিফাইনাল নিশ্চিত। শ্রীলঙ্কা কোচ সম্পত পেরিরা এ দেশে আগে খেলে গিয়েছে। তাই ভারতীয় ফুটবল সম্পর্কে ওর এমনিতেই একটা ধারণা আছে। সেটা কাজে লাগিয়েই ড্রয়ের অঙ্ক কষেছিল।

আর এখানেই ভারতীয় দলের কোচের কাজটা কিছুটা সহজ হয়ে যায় এ দিন। কারণ কনস্ট্যান্টাইনের দলের অ্যাটাকে যে তিন জন এ দিন খেলল সেই সুনীল, জেজে আর রবিন বল ধরে খেলতে পারে। সাফের এই ভারতীয় দলে ফুটবলারদের গড় বয়স প্রাক-বিশ্বকাপের টিমের চেয়ে কম। সে জন্য উদ্যম, প্রচেষ্টা দু’টোই বেশি। অন্তত প্রথম ম্যাচে সে রকমই লাগল আমার।

শ্রীলঙ্কা ডিফেন্স সুনীলদের তিন জনের দাপটের সামনে আত্মসমর্পণ করে বসল একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর। কারণ সম্পতের টিমে এমন কোনও ডিফেন্ডার ছিল না যে এই ত্রিভুজ আক্রমণের মোকাবিলায় নেতৃত্ব দিতে পারে। তার জন্য কোনও পরিকল্পনাও দেখলাম না ওদের খেলায়। কেবল অ্যাটাকে এক জনকে রেখে একের পর এক লং বল তুলে গেলে যে প্রীতম-অর্ণব-নারায়ণদের হারানো যাবে না সেটা শ্রীলঙ্কানরা বুঝল না বলব না, বরং সেটাই ওদের এই ম্যাচে স্ট্র্যাটেজি ছিল। না হলে গোটা প্রথমার্ধে গুরপ্রীতকে মাত্র দু’টো বল ধরতে হয়! জেজেদের গোল মিসের সুযোগ নিয়ে শ্রীলঙ্কা হাফটাইম পর্যন্ত তাও ম্যাচটা গোলশূন্য রেখে দিয়েছিল। কিন্তু ড্রয়ের একগুঁয়ে মানসিকতা থাকলে যা হয়— ডিফেন্স একটা ভুল করলেই বিপক্ষ ঠিক গোল করে যাবে। এক্ষেত্রেও সেটাই হল।

সুনীলের আউটসাইড ড্রিবলটা ভাল। কিন্তু রবিনের গোলটার সময় ও আউটসাইড দেখিয়ে ইনসাইড ড্রিবল করে শ্রীলঙ্কা ডিফেন্সকে আরও ঘেঁটে দিল। সেখান থেকে রবিনকে বল দিতেই গোল। দ্বিতীয় গোলের সময়ও সুনীলের হেড থেকেই বলটা পেয়েছিল রবিন।

দিল্লির ছেলে এ দিন জোড়া গোল করলেও সুনীলের পারফরম্যান্স দুর্দান্ত। গোটা টিমটাকে ও-ই আক্রমণে নেতৃত্ব দিল। আর রবিন? কলকাতায় বড় দলে খেলে যাওয়া ছেলেটা কিন্তু যত দিন যাচ্ছে ততই স্কোরিং এবিলিটি শানিয়ে নিচ্ছে। প্রাক বিশ্বকাপে গুয়াম ম্যাচে গোল করে জিতিয়েছিল। এ দিন জোড়া গোল করে সাফে ভারতকে বেশ ভাল শুরু করাল। হাইটটা ভাল। সেটাকে বুদ্ধি করে কাজেও লাগাতে জানে। এ দিনও তাই করেছে। সঙ্গে বাঁ পায়ের জোরালো শট আর অ্যাটাকিং থার্ডে ছোট্ট ড্রিবলটাও আগের চেয়ে ভাল করে নিয়েছে রবিন।

তবে এই ছন্দটা কনস্ট্যান্টাইনের দলকে পরের ম্যাচ নেপালের বিরুদ্ধেই শুধু নয়, বজায় রাখতে হবে গোটা টুর্নামেন্টে। সাফ চ্যাম্পিয়ন হতে না পারলে কিন্তু জাতীয় দলের ব্রিটিশ কোচকে নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই। আবার তেমনই প্রাক-বিশ্বকাপে খারাপ ফর্মের জবাব কিছুটা দেওয়া হয়ে যাবে এই টুর্নামেন্ট জিততে পারলে।

ভারত: গুরপ্রীত, প্রীতম, অগাস্টিন, অর্ণব, নারায়ণ, সঞ্জু (জাইরু), লিংডো, প্রণয় (রওলিং), সুনীল, রবিন (লালিয়ানজুয়ালা), জেজে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE