ক্যানবেরায় বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে কেন তাঁকে প্রথম একাদশে রাখা হয়নি, তা নিয়ে প্রথম থেকেই ক্ষুব্ধ ছিলেন আল আমিন। ক্ষোভ এতটাই ছিল যে, ব্রিসবেনে টানা বৃস্টিতে সতীর্থদের সবাই যখন টিম হোটেলে, টিম ম্যানেজমেন্টের নির্দেশনা মেনে রাত ১০টার মধ্যে যে যার রুমে ফিরেছেন, সেখানে ব্যতিক্রম শুধুমাত্র আল আমিন হোসেন। গভীর রাতে, হোটেলের লবিতে অশ্রাব্য ভাষায় টিম ম্যানেজমেন্টকে গালিগালাজ করতে করতে ঢুকেছেন তিনি। টিম ম্যানেজার খালেদ মেহমুদ সুজনের অভিযোগের ভিত্তিতে আমিনকে দেশে ফেরার নির্দেশ দেয় বিসিবি। দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অপরাধে বিশ্বকাপের মাঝপথে দেশে ফিরে আসার মতো সাজা পেয়েও নিজেকে সংশোধন করেননি এই পেস বোলার।
২০১৫ সালের ওই ঘটনার ৮ মাস পর মুচলেকা দিয়ে ফিরেছিলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে তাঁর নাম কেটে তা প্রত্যাহারও করে নিয়েছে বিসিবি। আহত তাসকিনের বদলে ৮ মাস পর ফিরেছেন ওয়ানডে এবং টি-২০তে। চলতি বছর আন্তর্জাতিক টি-২০তে ভারতের জসপ্রিত বুমরাহ ( ২১ ম্যাচে ২৮ উইকেট) এবং রবিচন্দ্রন অশ্বিনের (১৭ ম্যাচে ২৩ উইকেট) পর উইকেট শিকারে তৃতীয় (১৪ ম্যাচে ২২ উইকেট) আল আমিন। বছরের বোলিং পারফরম্যান্সে টি-২০তে সাকিবকে (১৬ ম্যাচে ২০ উইকেট) ছাড়িয়ে যাওয়া আল আমিনের ফিল্ডিংয়ে এমনিতেই টিম ম্যানেজমেন্ট অসস্তুস্ট ছিল। কোচিং স্টাফ এবং বাংলাদেশ দলের নির্বাচকদের বিরুদ্ধে সেই ক্ষোভটা আমিন উগরে দিয়েছেন দ্বিতীয় দফায় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে। বিপিএলের সময়ে টিম হোটেলে গোয়েন্দার ভুমিকায় থাকা বিসিবি’র অ্যান্টি করাপশন ডিপার্টমেন্টের সদস্যদের চোখকে ফাঁকি দিতে পারেননি। সিসিটিভি ক্যামেরায় আল আমিনের অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ার ভিডিও ফুটেজটা বিসিবিকে জমা দিয়েছেন ওই গোয়েন্দারাই। শুনানিতে নিজের অপরাধের কথা স্বীকারও করে নিয়েছেন আল আমিন। ওই ঘটনায় ক্ষুব্ধ বিসিবি বিপিএলে তার পারিশ্রমিকের ৫০ শতাংশ জরিমানা করেছে। শুধু বড় ধরনের অর্থদন্ডে দন্ডিতই হননি আমিন, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ড সফরের সুযোগটাও হারিয়েছেন তিনি। বিপিএলে ফিল্ডিংয়ের সময়ে পেস বোলার মোহাম্মদ শহিদ এবং শফিউল ইসলাম আহত হওয়ায় অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ড সফরের দল থেকে ছিটকে পড়ায় তাদের একজনের স্থলাভিষিক্ত হওয়ার সম্ভাবনা ছিল তাঁর। কিন্তু ওই দু’টি শূন্যস্থান পূরণে রুবেল হোসেন এবং কামরুল ইসলাম রাব্বীকে শেষ মুহুর্তে বাংলাদেশ স্কোয়াডে অন্তর্ভুক্ত করা হলেও আল আমিনের নামটি নাকি বিবেচনাতেই আনেননি নির্বাচকরা। তাঁর সম্পর্কে চারপাশে নেতিবাচক কথাবার্তা শোনায় বিরক্ত প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু বলেন, “শুধু শৃঙ্খলা ভঙ্গের মতো অপরাধই সে করেনি, অনেক বিষয়ে ওর ব্যাপারে নেতিবাচক কথা আমাদের কানে এসেছে। তাই শহিদ, শফিউলের পরিবর্ত হিসেবে আল আমিনের নাম বিবেচনায় আসেনি। কোচিং স্টাফ এবং টিম ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
আমিন ওয়ানডে ক্রিকেটের বাইরে রয়েছেন ১৩ মাস। টেস্টের বাইরে রয়েছেন ২৬ মাস। বছরটিতে টি-২০তে দুর্দান্ত বোলিং পারফরম্যান্সে নিউজিল্যান্ড সফরে তিন ম্যাচের টি-২০ সিরিজে বিবেচনায় আসতে পারতেন, কিন্তু দ্বিতীয়বার শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে বাংলাদেশ দলের বাইরে আল আমিনের নির্বাসনের মেয়াদ কতো বড় হয়, সেটাই এখন দেখার।
আরও পড়ুন: অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড সফর থেকে ছিটকে গেলেন শহিদ, শফিউল
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy