অলিম্পিক্স টিকিটের লক্ষ্যে যখন রিও রওনা দিচ্ছিলেন, কোচ ও পরিবারের লোকজন ছাড়া পাশে কেউই ছিলেন না।
ইতিহাস গড়ে বৃহস্পতিবার সকালে যখন দিল্লিতে এসে নামলেন, তাঁর সঙ্গে সেলফি তোলার তুমুল হুড়োহুড়ি!
অলিম্পিক্সে এখনও তিনি নামেননি। কিন্তু রিওর টিকিট পেয়েছেন রিওতেই সোনা জিতে। আর সেই কৃতিত্বের ভাগ নিতে নজিরবিহীন গোষ্ঠী-লড়াই শুরু হয়ে গেল। রিওতে জিমন্যাস্ট দীপাকে কুস্তি লড়তে হয়নি, কিন্তু রাজধানীতে নামা মাত্র তাঁকে নিয়ে শুরু হয়ে গেল কর্তাদের কুস্তি।
ফুল হাতে দাঁড়ানো কয়েক হাজার ছেলে-মেয়ে তো বটেই, জিমন্যাস্টিক্স ফে়ডারেশনের যুযুধান দুই গোষ্ঠীর কর্তারাও সোনার মেয়ের সঙ্গে হাত মেলাতে আর ছবি তোলার জন্য রীতিমতো ধাক্কাধাক্কি লাগিয়ে দিলেন। স্পষ্ট— কোন গোষ্ঠী দীপার সোনার সময়ে তাঁর বেশি কাছে আসবে! সোনার মেয়ের দখল নেবে কারা! বোঝাবে দীপার সাফল্যের পিছনে তাদেরই গোষ্ঠী। অন্য গোষ্ঠী নয়।
এবং দুই গোষ্ঠীর টানাটানি এতটাই বেশি ছিল, ভারতীয় খেলাধুলোর নতুন মহাতারকা দীপা কর্মকারের সাংবাদিক সম্মেলন ভেস্তেই গেল আজ! বিরক্তিতে সেখানে গেলেনই না ত্রিপুরার বঙ্গললনা। ফলে স্বভাবতই দীপাকে নিয়ে টানাটানি চলল নিউজ চ্যানেলগুলোর মধ্যেও। রিওতে অলিম্পিক্স কোয়ালিফাইং টুর্নামেন্টে ভল্ট ইভেন্টে ভারতীয় সোনাজয়ীকে তাঁর কোচ বিশ্বেশ্বর নন্দী এ দিন আড়াল করে বাইরে না নিয়ে গেলে দুঘর্টনাও ঘটে যেতে পারত।
বিমানবন্দরে নেমেই সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের অবশ্য উত্তর দিয়েছিলেন অলিম্পিক্সে টিকিট পাওয়া প্রথম ভারতীয় মেয়ে জিমন্যাস্ট। বলে দেন ‘‘কোচ এবং সবাই পাশে থাকলে আমি রিও অলিম্পিক্সেও পদক জিতে ইতিহাস তৈরি করব।’’ কিন্তু সেই কঠিন কাজের জন্য তো বিদেশে ট্রেনিং নিতে হবে? তিন মাসের জন্য বিদেশেই ট্রেনিং নিতে চান ভারতীয় জিমন্যাস্টিক্সের বিস্ময় প্রতিভা। সাইয়ের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে টার্গেট অলিম্পিক্স পোডিয়াম স্কিমে দীপাকে এ জন্য ৩০ লাখ টাকা দেওয়া হবে। এ দিনই রাতের খবর, কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রক প্রস্তুতির জন্য আরও তিরিশ লাখ টাকা দেবে তাঁকে।
আপাতত ঠিক আছে আজ শুক্রবার সকালে আগরতলায় বাড়িতে যাচ্ছেন দীপা। কয়েক দিন বিশ্রাম নিয়ে পয়লা মে ফিরবেন দিল্লির সাইতে। তখনই ঠিক হবে দীপা ট্রেনিং নিতে বিদেশে কোথায় যাবেন। সবটাই ঠিক করবেন তাঁর মেন্টর এবং কোচ বিশ্বেশ্বর নন্দী। দীপাও বললেন, ‘‘আসলে এই সব ব্যাপার ঠিক করেন আমার কোচই। ওনাকে ছাড়া আমার পক্ষে কিছু করা সম্ভব নয়। গত পনেরো বছর ধরে উনি আমাকে তৈরি করেছেন। উনি আমার জন্মদাতা না হলেও আমার আর একজন বাবা। কোচ পাশে থাকলে আমি নিজের সেরাটা বারবার করে দেখাতে পারি।’’
যে প্রোদুনোভা ভল্টের জন্য সারা বিশ্ব দীপাকে বাহবা দিচ্ছে, বিদেশি মিডিয়ায় হইচই পড়ে গিয়েছে, সেই কঠিন ইভেন্ট প্রসঙ্গে আনন্দবাজারকে দীপা বললেন ‘‘প্রোদুনোভা ভল্ট দেওয়া মারাত্মক কঠিন। প্রচুর অনুশীলন করতে হয়। রিওতে মাত্র তিন জন এই ভল্টটা ঠিক মতো দিতে পেরেছিল। যার মধ্যে আমারটা সেরা। আবার বলছি, আমার কোচ যদি পাশে থাকেন ওই ভল্ট আবার অলিম্পিক্সেও দিয়ে দেশকে পদক এনে দিতে পারব আমি।’’ কথা বলার সময় নতুন সংকল্প আর আত্মবিশ্বাস চুইয়ে পড়ছিল সোনার মেয়ের চোখমুখ থেকে।
প্রধানমন্ত্রী থেকে সচিন তেন্ডুলকর, ক্রীড়ামন্ত্রী থেকে শাহরুখ খান। সবাই দীপার সাফল্যের পরে নিজস্ব সোশ্যাল সাইটে বঙ্গললনার তাঁর প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছেন। তাঁকে নিয়ে দেশজুড়ে হইচই হলেও দীপা কিন্তু বলে দিচ্ছেন ‘‘আমি নিজেকে বড় অ্যাথলিট ভাবি না। আরও অনেক পরিশ্রম করতে হবে আমাকে।’’ বিদেশে ট্রেনিং নিতে চাইলেও এ বার রিও যাওয়ার আগে দেশের ট্রেনিংয়েও দীপা কিন্তু খুশি। বলেও দিলেন, ‘‘বিদেশের ট্রেনিংয়ের সঙ্গে এখানকার ট্রেনিংয়ের তফাত বিরাট কিছু নয়। রিও যাওয়ার আগে দিল্লিতে ফোম-পিটে প্র্যাকটিস করে ভীষণ উপকার পেয়েছি। দিল্লির আইজি স্টেডিয়ামে আমি যে সব সরঞ্জামে ট্রেনিং করেছি তার সঙ্গেও বিদেশি সরঞ্জামের বিশেষ পার্থক্য নেই। সাইয়ের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে কয়েকটা সরঞ্জাম নিয়ে। সেগুলো ওরা এনে দিতে তৈরি।’’