Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

পুবের আকাশে উদয় নতুন এক বিরাটের

দশ বছর বয়সে ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন শুরু। প্রথমে মা-বাবা রাজি ছিলেন না। পড়াশোনোয় মনোযোগ দিতে বলেছিলেন। কিন্তু ছেলের প্রতিভার কথা যখন সংবাদপত্রে বেরোতে শুরু করল, তাঁদেরও মন পরিবর্তন হল।

বিরাট সিংহ। পূর্বাঞ্চলের হয়ে ৩৪ বলে ৫৮। ছবি ফেসবুক

বিরাট সিংহ। পূর্বাঞ্চলের হয়ে ৩৪ বলে ৫৮। ছবি ফেসবুক

সোহম দে
শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:৩১
Share: Save:

দশ বছর বয়সে ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন শুরু।

প্রথমে মা-বাবা রাজি ছিলেন না। পড়াশোনোয় মনোযোগ দিতে বলেছিলেন। কিন্তু ছেলের প্রতিভার কথা যখন সংবাদপত্রে বেরোতে শুরু করল, তাঁদেরও মন পরিবর্তন হল।

তিনি— বিরাট সিংহ।

ভারতীয় ক্রিকেটের মহাকাশে যাঁকে নতুন নক্ষত্র বললে বাড়িয়ে বলা হবে না। শনিবার পশ্চিমাঞ্চলকে আট উইকেটে হারিয়ে ওয়াংখেড়েতে সৈয়দ মুস্তাক আলি টি-টোয়েন্টি ট্রফি চ্যাম্পিয়ন হল পূর্বাঞ্চল। যে ম্যাচে ১৪৯ রান তাড়া করে জিতল পূর্বাঞ্চল। ঝাড়খণ্ডের বাঁ হাতি ওপেনার ৩৪ বলে ৫৮ রান করলেন। ইনিংসে ছিল ৫টি চার, ৩টি ছক্কা।

ম্যাচের নায়ককে মুম্বইয়ে ফোনে ধরা গেল। কোনও উচ্ছ্বাস নেই। নির্লিপ্ত ভাবে বলে দিলেন, ‘‘টি-টোয়েন্টি মানে প্রথম ছয় ওভার খুব গুরুত্বপূর্ণ। বল অনুযায়ী শট নির্বাচন করার চেষ্টা করি। মারার বলকে মারার চেষ্টাই করি। খুব ভাল বল হলে খুচরো রান নেওয়ার চেষ্টা করি। এ ভাবেই ক্রিকেট খেলি আমি। আজও সেটাই চেষ্টা করে গিয়েছি।’’ এ বারে ঝাড়খণ্ডের রঞ্জি সেমিফাইনালে ওঠার পিছনে বিরাট ছিলেন অন্যতম কারিগর। কিন্তু এক সময় তাঁর ব্যাটে রান আসছিল না। চিন্তিত ছিলেন কী করবেন। সেই সময় তিনি পরামর্শ পান ‘ক্যাপ্টেন কুল’-এর। নিজের স্বপ্নের ক্রিকেটারের পরামর্শ আবার চাঙ্গা করে দেয় তাঁকে। সেই কথোপকথনের প্রসঙ্গ উঠতেই বিরাট খুব উত্তেজিত ভাবে বললেন, ‘‘মহেন্দ্র সিংহ ধোনি আমার আদর্শ ক্রিকেটার। উনি নিজেও রাঁচি থেকে উঠে এসেছেন। ধোনি ভাইকে আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, রান আসছে না, কী করব? জবাবে উনি শুধু বলেছিলেন, তোর টেকনিক দারুণ। শুধু বাইরের বলগুলো ছেড়ে খেলবি। ড্রাইভ মারার বলগুলো কিন্তু মারবি, ছাড়বি না। দেখবি, রান ঠিক চলে আসবে।’’

চ্যাম্পিয়ন পূর্বাঞ্চল। শনিবার ওয়াংখেড়েতে। ছবি টুইটার।

ছোটবেলা থেকে কুমার সঙ্গকারার ব্যাটিংও খুব মন দিয়ে দেখতেন বিরাট। শেখার চেষ্টা করতেন, কী ভাবে বিভিন্ন ফর্ম্যাটে নিজের ইনিংস গড়ে তোলেন সঙ্গকারা। রানের মধ্যে থাকলেও বিরাটকে বাদ পড়তে হয়েছিল ভারতের অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ দল থেকে। যে ঘটনার কথা মনে পড়লে আজও তাঁর চোখে জল চলে আসে। তাঁর কেরিয়ারে এই জায়গাটা একদম রাঁচির মহাতারকা ধোনির মতো। এমএসডি ফিল্মে যেমন দেখানো হয়েছিল। অনূর্ধ্ব উনিশ বিশ্বকাপ থেকে বাদ পড়ে গেলেন ধোনি। একে একে নাম উচ্চারণ করা হল যুবরাজ, কাইফদের। সুযোগ না পাওয়ার যন্ত্রণা সাফল্যের জেদ বাড়িয়ে দিয়েছে বিরাটেরও। ‘‘যে কোনও তরুণের জন্য অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ খুব বড় একটা মঞ্চ। খারাপ খেললে বাদ পড়া অন্য ব্যাপার। কিন্তু ভাল খেলেও দেখলাম দলে নেই। খারাপ লেগেছিল। তার পর আরও জেদ বেড়েছে ভাল ব্যাট করার।’’

বিরাটের সবচেয়ে বড় গুণ কী? ঝাড়খণ্ড রাজ্য দলের কোচ এবং এই মুস্তাক আলি টুর্নামেন্টে পূর্বাঞ্চল দলের দায়িত্বে থাকা রাজীব কুমারের মতে বিরাট খুব ভাল ছাত্র। ‘‘ওকে যা করতে বলা হয় সেটাই করে। শৃঙ্খলা মেনে চলে। ধৈর্য ধরে ব্যাট করে। টি-টোয়েন্টিতে যেমন প্রথম কয়েক ওভার খুব ঝুঁকি নেয় না। কিন্তু তার পর ফিল্ডিং বুঝে মারে। ছেলেটার ফিটনেসও দারুণ,’’ বললেন রাজীব।

পূর্বাঞ্চলের বিরাটের ফিটনেস-রহস্য হিসেবে বেরিয়ে আসছে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর নাম। সি আর সেভেনের প্রত্যেকটা ফিটনেস ট্রেনিং ভিডিও দেখেন তিনি। ‘‘রোনাল্ডো আমার প্রিয় ফুটবলার। ওঁর ফিটনেসটা আমাকে অবাক করে। ইনস্টাগ্রাম বা টুইটারে যখন ভিডিও পোস্ট করেন রোনাল্ডো বারবার সেটা দেখি,’’ বলছেন বিরাট।

এক বিরাট যখন ক্রিকেট দুনিয়ার সবচেয়ে বড় তারা হয়ে উঠেছেন, তখন পূর্বাঞ্চলের আকাশে উদয় ঘটছে আর এক বিরাটের। তিনি কত দূর পৌঁছতে পারবেন, সময়ই বলবে। কিন্তু শনিবারের ম্যাচ জেতানো ইনিংস বুঝিয়ে দিল, তাঁকে নিয়ে আশার আলো দেখাটা অন্যায় নয়।

সংক্ষিপ্ত স্কোর: পশ্চিমাঞ্চল ১৪৯-৫ (জ্যাকসন ৫২, রুজুল ৩৬, প্রীতম ২-২৫), পূর্বাঞ্চল ১৫৩-২ (বিরাট ৫৮ ন.আ., ইশাঙ্ক ৫৬)।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE