Advertisement
E-Paper

টাকা দিয়ে সারোগেসি বন্ধই করছে নয়া বিল

অন্য মহিলার গর্ভ ভাড়া করে সন্তানের বাবা-মা হওয়ার ‘ফ্যাশনে’ রাশ টানতে চাইছে সরকার। বুধবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা সারোগেসি (রেগুলেশন) বিল, ২০১৬-তে তার সায় জানিয়েছে। শীতকালীন অধিবেশনে বিলটি সংসদে পেশ করা হবে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৬ ০৩:৩৫
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

অন্য মহিলার গর্ভ ভাড়া করে সন্তানের বাবা-মা হওয়ার ‘ফ্যাশনে’ রাশ টানতে চাইছে সরকার। বুধবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা সারোগেসি (রেগুলেশন) বিল, ২০১৬-তে তার সায় জানিয়েছে। শীতকালীন অধিবেশনে বিলটি সংসদে পেশ করা হবে। এই বিল অনুযায়ী, সন্তান উৎপাদনে অক্ষম ভারতীয় দম্পতিরাই শুধু শর্তসাপেক্ষে সারোগেট সন্তানের জন্য আবেদন করতে পারবেন এবং সেখানে আর্থিক লেনদেনের কোনও জায়গা থাকবে না।

বিদেশি বা অনাবাসীরা বা পিআইও (ভারতীয় বংশোদ্ভূত) কার্ডধারীরা এ দেশে এসে কোনও গরিব মহিলাকে পয়সা দিয়ে তাঁর গর্ভে নিজেদের সন্তান উৎপাদন করে যাচ্ছেন— এই রেওয়াজ একেবারে বন্ধ হতে চলেছে নতুন বিধিতে।

এমনকী ভারতীয় দম্পতিরাও যদি আগে সন্তানের বাবা-মা হয়ে থাকেন, তা হলে পরে আর সারোগেসির সুযোগ পাবেন না। অর্থাৎ আরিয়ান ও সুহানা থাকা সত্ত্বেও যে ভাবে সারোগেসির মাধ্যমে আব্রামের বাবা-মা হয়েছেন শাহরুখ ও গৌরী খান বা প্রথম পক্ষের দুই সন্তান থাকা সত্ত্বেও যে ভাবে দ্বিতীয় বিবাহে সন্তানের বাবা হয়েছেন আমির খান, নতুন বিধি সেই সুযোগ আর দেবে না।

বস্তুত নাম না করে এ দিন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ তারকাদের ‘সারোগেসি-বিলাস’কেই কটাক্ষ করেছেন। বলেছেন, ‘‘বড় বড় সেলিব্রিটি, যাঁদের দু-দু’টি সন্তান আছে, ছেলে আছে, মেয়ে আছে, তাঁরাও সারোগেসির সুযোগ নিয়েছেন! সারোগেসি একটা ফ্যাশন, একটা বিলাসিতা হয়ে দাঁড়িয়েছে!’’

বর্তমানে টাকার বিনিময়ে সারোগেসির ঢালাও কারবার চালু রয়েছে দেশ জুড়ে। বিভিন্ন প্রান্তে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে সারোগেসি ক্লিনিক সেন্টার। সেখানে নিঃসন্তান দম্পতি যেমন আসেন, গর্ভযন্ত্রণা ভোগ করতে না-চাওয়া মহিলা বা বেশি বয়সে মা হতে চাওয়া মহিলারাও আসেন। বহু বিদেশি দম্পতি এ দেশের মহিলাদের গর্ভ ভাড়া নিয়ে সন্তান লাভ করেন। তৃতীয় বিশ্বের দেশে সস্তায় গর্ভ ভাড়া নেওয়া পশ্চিমী দুনিয়ার অতি চালু অভ্যাস। ৭০ হাজার থেকে ৩ লাখের মধ্যে সাধারণত ঘোরাফেরা করে সারোগেট মায়ের ফি। কখনও কখনও মেয়ে সন্তান হলে বা একাধিক সন্তান হলে অথবা প্রতিবন্ধকতা নিয়ে সন্তান জন্মালে সেই সন্তানকে না নিয়েই দম্পতিরা চলে গিয়েছেন— এমন অভিযোগও শোনা যায়। তার চেয়েও বেশি শোনা যায়, টাকার বিনিময়ে গর্ভ ভাড়া দেওয়াকে কেন্দ্র করে অনৈতিক ব্যবসা ফেঁদে বসার অভিযোগ, যেখানে সবার আগে বলি হয় গর্ভদাত্রী মায়ের স্বাস্থ্য।

সারোগেসি নিয়ে এই হাজারো সমস্যা দূর করতেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা যাবতীয় বাণিজ্যিক সারোগেসি বন্ধের পক্ষে মত দিয়েছে। ব্রিটেন, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, সুই়়ডেন, জাপান, তাইল্যান্ডের মতো বহু দেশেই বাণিজ্যিক সারোগেসি নিষিদ্ধ। সুষমা এ দিন বলেন, ‘‘এ দেশে প্রায় দু’হাজার সারোগেসি ক্লিনিক গড়ে উঠেছে। গরিব মহিলারা অর্থের বিনিময়ে বারবার গর্ভ ধারণ করে শরীর ক্ষয় করছেন। আর গর্ভ ভাড়া নেওয়াটা প্রয়োজনের থেকেও ফ্যাশন আর বিলাসিতা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।’’

নতুন বিলে তাই বলা হয়েছে, আইনি বিয়ের পরে পাঁচ বছর কেটে গিয়েছে শুধু এমন দম্পতিকেই সারোগেসি-র অধিকার দেওয়া হবে। তাঁরা যে স্বাভাবিক ভাবে সন্তানের জন্ম দিতে অক্ষম, তার সপক্ষে ডাক্তারি শংসাপত্র জমা দিতে হবে। আবেদনকারী দম্পতির মধ্যে মহিলার বয়স ২৩-৫০ এবং পুরুষটির বয়স ২৬-৫৫ বছর হতে হবে। আগে থেকে সন্তান থাকলে, সে সন্তান যদি প্রথম পক্ষের হয় বা দত্তকও হয়, তা হলেও সারোগেসির সুযোগ থাকবে না।

এর ঠিক উল্টো শর্ত গর্ভদাত্রীর জন্য। তাঁকে আবার আগে থেকে সুস্থ সন্তানের জননী হতে হবে। তার পরে জীবনে এক বারই তিনি সারোগেট মা হতে পারবেন। হবু বাবা-মায়ের কোনও নিকটাত্মীয় হতে হবে তাঁকে। কোনও রকম আর্থিক লেনদেন নয়। শুধুমাত্র গর্ভদাত্রীর চিকিৎসার খরচটুকু জোগাবেন হবু বাবা-মা। আইনত বিবাহিত দম্পতি ছাড়া অন্য কেউ— অর্থাৎ সমকামী বা লিভ ইন যুগল-সিঙ্গল বাবা/মা— সারোগেসির সুযোগ পাবেন না।

সারোগেসি সংক্রান্ত জটিলতা দূর করতে আবেদনের ফর্ম ও চুক্তিপত্র আরও কঠোর করা হচ্ছে। পরিষ্কার বলে দেওয়া হচ্ছে, ক্লিনিক সেন্টারে কোনও অনিয়ম হলে বা বাচ্চাকে পরে স্বীকার না-করলে কমপক্ষে দশ বছরের জেল ও দশ লক্ষ টাকা জরিমানা হবে। সন্তান ধারণের মধ্যে বা জন্মের পরে বাবা-মা দু’জনে মারা গেলে বা বিবাহবিচ্ছেদ হলে সন্তানের দায়িত্ব কে নেবেন, সেটা ফর্মে লেখা থাকতে হবে। আইনি মা এবং সারোগেট মায়ের পরিচয় সম্বলিত রেকর্ড সন্তান জন্মের ২৫ বছর পর্যন্ত রেখে দিতে হবে। সম্পত্তি-সহ সব রকম অধিকার সন্তানকে দিতে হবে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর তত্ত্বাবধানে গঠিত হবে জাতীয় সারোগেসি বোর্ড। রাজ্যে রাজ্যে তার শাখা থাকবে।

গত এপ্রিলেই সারোগেসি বিল-এর একটি খসড়া অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভায় পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু সেখানে ঐকমত্য না হওয়ায় সুষমার নেতৃত্বে মন্ত্রিগোষ্ঠী গঠন করা হয়। তারাই বিলটি পরিমার্জন করে আবার মন্ত্রিসভায় পেশ করে। আজ তাতেই অনুমোদন দিল মন্ত্রিসভা। বিলটি আইনে পরিণত হওয়ার দশ মাস পর থেকে তা কার্যকর হবে। বলিউডে ‘ফিলহাল’-এর মতো ছবির গল্প অন্য ভাবে লিখতে হবে তখন। ছবিতে টাবুর সন্তানকে ধারণ করেন অবিবাহিত বান্ধবী সুস্মিতা সেন। এ সব আর নতুন আইনে মান্য হবে না।

যদিও প্রস্তাবিত বিধিতেও অনেক ফাঁকফোকর থেকে যাচ্ছে বলে অনেকের অভিযোগ। বেশি কড়াকড়ি করতে গিয়ে চোরাগোপ্তা ব্যবসা প্রশ্রয় পাবে কি না, সে আশঙ্কা থাকছে। প্রশ্ন উঠছে, ‘সিঙ্গল পেরেন্ট’ যদি দত্তক নিতে পারেন, তা হলে সারোগেসি নয় কেন? তুষার কপূরের মতো সিঙ্গল ফাদার আর দেখা যাবে না? সমকামী দম্পতিরাই বা কেন বাদ যাবেন? নিকটাত্মীয়দের মধ্য থেকে সারোগেট হলে পারিবারিক জটিলতা বেড়ে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা। সন্তানধারণে অক্ষমতাকে মাপকাঠি করলে মহিলাদের বন্ধ্যত্ব সামনে এসে পরিবারে সমস্যা বাড়াতে পারে। এত রকম বিধিনিষেধ চাপিয়ে সরকার কি কার্যত মানুষের স্বাধীন ইচ্ছা-অনিচ্ছার উপরেই খানিকটা লাগাম পরাচ্ছে না? সুষমার জবাব, ‘‘ভারতের সংস্কৃতির কথা মাথায় রেখেই যাবতীয় ব্যবস্থা হয়েছে। বিলটি সংসদে এলে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি বিবেচনা করে দেখবে। তখন আরও বদল আনা যেতে পারে।’’

Surrogacy bill Cabinet
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy