Advertisement
E-Paper

‘জিজ্ঞেস করতে পারতে সানি, আপনাকেও কি আনন্দ দিতাম…’

পর্নস্টার জীবন নিয়ে ইন্টারভিউতে কুত্‌সিত খোঁচা। যথেষ্ট সংযমের সঙ্গে পরিস্থিতি সামলেছিলেন সানি লিওন। কিন্তু কী চলছিল তাঁর মনের ভিতরে, বুঝতে অসুবিধে হয় না। যাঁরা বুঝেছেন সেই অপমান, রাগ, যন্ত্রণার কথা তাঁরা সবাই পাশে দাঁড়িয়েছেন সানির। এ বার খোলা চিঠি লিখে তাঁর পাশে এলেন সন্ধ্যা গোখলে। শুধু সেই ইন্টারভিউয়ার নন, সন্ধ্যার কলমের নিশানায় সেই সব তথাকথিত নীতিবাগীশের দল যাঁরা আসলে নারী বিদ্বেষী।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ১৪:৫৮

পর্নস্টার জীবন নিয়ে ইন্টারভিউতে কুত্‌সিত খোঁচা। যথেষ্ট সংযমের সঙ্গে পরিস্থিতি সামলেছিলেন সানি লিওন। কিন্তু কী চলছিল তাঁর মনের ভিতরে, বুঝতে অসুবিধে হয় না। যাঁরা বুঝেছেন সেই অপমান, রাগ, যন্ত্রণার কথা তাঁরা সবাই পাশে দাঁড়িয়েছেন সানির। এ বার খোলা চিঠি লিখে তাঁর পাশে এলেন সন্ধ্যা গোখলে। শুধু সেই ইন্টারভিউয়ার নন, সন্ধ্যার কলমের নিশানায় সেই সব তথাকথিত নীতিবাগীশের দল যাঁরা আসলে নারী বিদ্বেষী। সন্ধ্যা পেশায় মুম্বইয়ের আইনজীবী। আর একটা পরিচয়, তিনি অভিনেতা, পরিচালক অমল পালেকরের স্ত্রী। পড়ুন সেই চিঠি।

হ্যালো সানি
সাক্ষাত্কারে যে ভাবে অপরিণত প্রশ্নে তোমাকে অপদস্থ করা হয়েছিল, এবং তুমি যে ভাবে তার মোকাবিলা করেছো তাতে তোমাকে সাধুবাদ না দিয়ে পারছি না। ওই ইন্টারভিউয়ার তোমার বর্তমানকে অস্বীকার করেছিলেন। ওঁর চোখে ব্যক্তিগত লালসা আর নির্বোধ সাংস্কৃতির ছায়া দেখা যাচ্ছিল।

যখন প্রথম প্রশ্ন করা হয়, ‘‘ফেলে আসা জীবন নিয়ে কোনও অনুতাপ রয়েছে?’’- তখনই সাক্ষাত্কারের উদ্দেশ্য পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল। যেন অনৈতিক কোনও কাজের জন্য কারও কাছে স্বীকারোক্তি আদায় করা হচ্ছে। সেই সঙ্গেই লালসার বস্তু হিসেবে তোমাকে কলঙ্কিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। তোমার সাক্ষাত্কার নেওয়ার থেকে বেশি নিজেদের টিআরপি বাড়ানোর দিকে নজর দেওয়া হয়েছিল।(নাহলে হয়তো ওই চ্যানেলের জনপ্রিয়তা তলানিতে এসে যেতো।) ওরা তোমাকে অতিষ্ঠ করে তুলতে চেয়েছিল। কী ভাবে তোমার ফেলে আসা জীবনের দিকে আঙুল তোলা হয়েছে তা আমরা সকলেই দেখেছি।

উনি বোঝাতে চেয়েছিলেন ভুল ও অনৈতিক কেরিয়ার বেছে নিয়ে তুমি নিজেকে সমাজের চোখে নীচে নামিয়ে এনেছো। এই ভাবে যারা তোমার জীবনের যাত্রাপথে সব সময় তোমার পাশে ছিলেন তাদের সকলকে তিনি ছোট করে দেখিয়েছেন। অথচ এরাই হয়তো লুকিয়ে লুকিয়ে তোমাকেই লালসাতৃপ্তির মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। কিন্তু এত কিছুর পরও তুমি ওনার দিকে আঙুল তোলোনি।

তুমি জিজ্ঞাসা করতে পারতে, তোমার সঙ্গে বসে থাকতে ওনার নৈতিকতায় ছেদ পড়ছে না? তোমার কেরিয়ারের নীতিমূলক দিক তুলে ধরে তুমি প্রশ্ন করতে পারতে, সত্যিই কি এখন আমাদের যৌনশিক্ষারই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন নেই? কিন্তু আমি খুশি যে তুমি এমন কিছু প্রশ্ন করোনি। তাহলে ইন্টারভিউয়ারের আসল চেহারা সামনে এসে যেতো। কিছু কিছু মানুষের সামনে জ্ঞানের ভান্ডার খুলে গেলেও তাঁরা বদলান না। আরবিতে একটা কথা আছে, ছাগল আকাশে উড়লেও ছাগলই থাকে।

তবে তুমি ওনাকে জিজ্ঞাসা করতে পারতে, আপনি কি আমার থেকে আনন্দ পাননি? যদি না হয়, তাহলে আমাকে যে কোনও প্রশ্ন করতে পারেন। যদি হ্যাঁ হয়, তাহলে বলুন কেন আপনার চ্যানেলে আজ আমাকে ডাকা হয়েছে। আশা করি এতে ওনার মাথা হেঁট হয়ে যেতো না! জানতে চাইতে পারতে ক্রিকেট, পেজ থ্রি, রাজনীতির মধ্যে উনি কোনও অশালীনতা দেখতে পান কিনা। বলতে পারতে, না, পর্নস্টার হওয়ার জন্য আমার কোনও অনুতাপ নেই। বড় ও ছোটপর্দার যে কোনও তারকার মতোই আমি আপনাদের এন্টারটেন করেছি। যারা আমার ছবি দেখার পর বারবার ফিরে এসেছেন সেই সংখ্যাটাও ঈর্ষা করার মতো। আমি গর্বিত যে টিআরপি বাড়াতে বা বক্সঅফিসে হিট আনতে আমাকে অন্য কারও শরীর ব্যবহার করতে হয়নি।

সানি, ওনার এই আচরণে আমি বিশেষ অবাক হইনি। যদি উনি সরাসরি তোমাকে অ্যান্টি-পর্ন ফেমিনিস্টের দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখে পর্নোগ্রাফিতে নারী শরীরকে পণ্য হিসেবে তুলে ধরার বিরুদ্ধে বলতেন, কী ভাবে অবক্ষয় হচ্ছে, যৌন হিংসা বাড়ছে সে সব নিয়ে আলোচনা করতেন তবে আমি খুশি হতাম না।

আমির খান ছাড়া অন্য কারও নাম নেওয়ার ক্ষমতা ছিল না ওনার। সে ক্ষেত্রে তুমি অ্যান্দ্রিয়া ডরকিন, ক্যাথরিন ম্যাকিননের মতো স্কলারদের কথা তুলে ধরতে পারতে যাঁদের উদ্দেশ্য ছিল পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ করা।

ওয়েন্ডি ম্যাকেলরিসের কথা উল্লেখ করে বলতে পারতে, যদি আমরা মহিলারা ‘মাই ব়ডি’, ‘মাই চয়েস’-এ বিশ্বাস করে থাকি তাহলে পর্নোগ্রাফি কেন আমার চয়েস হতে পারে না?

সানি, এটা ব্যক্তি স্বাধীনতা ও সামাজিক নিয়ন্ত্রণের মধ্যে এক চিরকালীন দ্বন্দ্ব। বর্তমান সময়ের প্রতিটা হ্যাশট্যাগের মূলেই রয়েছে এই দ্বন্দ্ব। কোনটা অনুমতি পাবে, আর কোনটা অশালীন হিসেবে বিবেচিত হবে সেটা কে ঠিক করে দেবে? তোমার ব্যক্তি স্বাধীনতার উপরে কথা বলার অধিকার ওদের কে দিয়েছে? আমরা সব কিছুতেই নৈতিক সেন্সরশিপের কাঁচি চালাতে চাই।

১৯৫০ সালে আকবর পদমসির আঁকা নগ্ন দম্পতির ছবির বিরুদ্ধে অশ্লীলতার অভিযোগ উঠেছিল। জনসমক্ষে নগ্নতা প্রদর্শন অশ্লীলতা হিসেবে গণ্য করা হয়েছিল। বিচারক রায় দিয়েছিলেন আর্ট গ্যালারির চত্বরের মধ্যে থাকার কারণে এটাকে জনসমক্ষে নগ্নতা প্রদর্শন বলা যাবে না। আমার বক্তব্য সানি, তোমার কাজেরও বিশেষ পরিপ্রেক্ষিত রয়েছে। এবং তা সেই পরিপ্রেক্ষিতেই দেখা হয়ে থাকে। তার থেকেও বড় কথা ভারতে পর্নোগ্রাফি কোনও অপরাধ নয়।

তোমার পরিস্থিতি সত্যিই অদ্ভুত। গুটিকয়েক লোক নৈতিকতার ধ্বজা নাড়ানো শুরু করে, তারপর জনতা যোগ দেয়। এদের অনেকেই কিন্তু তোমার দর্শক ও ভক্ত। যখন ট্রিপল-এক্স ইন্টারনেট সাইটের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছিল তখন ওরা তোমাকে ধন্যবাদ জানিয়েছিল।

যে দেশের ধর্মীয় ঐতিহ্যে লিঙ্গ ও যোনি এত বড় জায়গা জুড়ে রয়েছে সে দেশের পর্নো-ফোবিয়া সত্যিই প্রহসন মনে হয়। বিবাহিত মহিলাদের কাছ থেকে আশা করা হয় তাঁরা দেবতুল্য স্বামীর কাছে নিজেদের যৌনতা তুলে ধরবেন ও সমর্পণ করবেন। এই ব্যাপারে কি মহিলাদের পণ্য হিসেবে দেখা হচ্ছে না? টিভির পর্দায় যখন আমার কাজের প্রতি তুমি প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছো, তথন এটা মাথায় থাকছে না যে আমার শরীরের অধিকার শুধু আমার? যখন স্ত্রীর উপর জোর ফলাও তখন কি এটা মাথায় থাকে?

সানি, তুমি এই সকল ভন্ডামির উর্ধ্বে। ইন্টারভিউয়ার বলেছিলেন, সব বিবাহিত মহিলারা তাঁদের স্বামীদের অধঃপতনের জন্য তোমাকে দায়ী করেন। আশা করি সেই অপবাদ তোমার গায়ে লাগে না। খুব চালাকি করেই মহিলা পর্নোগ্রাফি সার্ফারদের প্রসঙ্গটা উনি এড়িয়ে গিয়েছিলেন।

এতক্ষণে তুমি নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছো আমি কেন ইন্টারভিউয়ারের নাম উহ্য রেখেছি। আসলে আমি বিশ্বের সব নারী বিদ্বেষীর দিকে আঙুল তুলতে চাই।

আরও পড়ুন: সানির ভ্যালেন্টাইনস প্ল্যান শুনবেন? হিংসে হতে পারে…

Sunny Leone Open letter pornography
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy